ঢাকা ১৮ই এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০১৮
ডেস্ক প্রতিবেদন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে সেসব কেন্দ্রে সেনাবাহিনী রাখার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
শনিবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
সচিব বলেন, ‘যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে সেসব যন্ত্র পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনী রাখা হবে। কারণ এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়। টেকনিক্যাল বিষয় এবং আস্থার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আমরা যদি সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করি, তারা যদি রাজি হন তাহলে ইভিএম কেন্দ্রগুলোর ওইসব এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিযুক্ত থাকবেন। তাদের আগেভাগে প্রশিণ নিয়ে সে সমস্ত কেন্দ্রে নিয়োগ করা হবে।’
তফসিল ঘোষণার পর শনিবার আওয়ামী লীগের দুই পরে সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রচার-প্রচারণা, মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ। এখন এটা যদি কেউ করে থাকে কিংবা কোনো দল বা কোনো ব্যক্তি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালান, নির্বাচনী প্রচার চালান তবে স্বাভাবিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে এবং কেউ এখন প্রচার চালাতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিইসি ইতোমধ্যে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার থেকেই ধানম-িতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সমর্থকদের নিয়ে ফরম তুলছেন ।
শনিবার সকালে মোহাম্মদপুরের নবদোয় হাউজিংয়ে এক মনোনয়ন প্রত্যাশীর অনুসারীদের বহনকারী বাসে প্রতিপরে হামলার পর ওই বাসের চাপায় দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
তবে সেই ঘটনা বিকেল পর্যন্ত তাদের নজরে আসেনি কিংবা কেউ জানায়নি বলে জানান সচিব। তিনি সাংবাদিকদের কাছেই প্রথম এ ঘটনা শুনলেন বলে জানান। এরপর তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের প হয়ে কাজ করবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান আইজিপিকে সিইসি নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে এবং প্রচার না চালায় কেউ। এ ব্যাপারে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনা নিয়ে সেখানে জনদুর্ভোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোট একটি উৎসব। প্রচার-প্রচারণা, নমিনেশন পেপার নেয়া, জমা দেয়া এটি একটি নির্দিষ্ট সীমানায় হচ্ছে। এর ফলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে- এটা আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
তফসিল ঘোষণার পর সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ হলেও রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্ট্রের সমাবেশ হওয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু তারা আগে থেকেই অনুমতি নিয়েছে এবং নেতৃবৃন্দ রাজশাহীতে অবস্থান করছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে তাদের এই মৌখিক অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সভা-সমাবেশ চলবে না :
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর কোনো সভা-সমাবেশ বা জনসভা করার অনুমতি না দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আচরণ বিধি ভঙ্গ করে বিভিন্ন দল ও জোট সমাবেশ-মিছিল করেছে। এখন আর সভা সমাবেশ চলবেনা, তাই এসব বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সময়ে আচরণবিধি যেন ভঙ্গ না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।
প্রতীক বরাদ্দের ৩ দিন পর প্রচারণা :
প্রতীক বরাদ্দের পরও ৩ দিন নির্বাচনি প্রচারণায় কোনও প্রার্থী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ-ভোটগ্রহণের সময়ের ব্যবধান তিন সপ্তাহের বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্যই, নির্বাচন কমিশন বলেছে, ব্যবধান যা-ই থাকুক, প্রতীক বরাদ্দ পেলে প্রচারণায় কোনও বাধা থাকবে না। আর নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতীক পেলেই প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগের কথা আইনে কোথাও উল্লেখ নেই। আইনে রয়েছে তিন সপ্তাহ সময়ের কথা, যার আগে প্রচারণার সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশন গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন ১৯ নভেম্বর, বাছাই ২২ নভেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বর ও ভোটগ্রহণ ২৩ ডিসেম্বর। তফসিলে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে কিছু না জানালেও ৩০ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন। ফলে ভোটগ্রহণ ও প্রতীক বরাদ্দের মধ্যে ব্যবধান দাঁড়াচ্ছে ২৩ দিন।
কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) [৪৪ই(৩অ)ম] ও নির্বাচনি আচরণ বিধি (১২) অনুযায়ী ভোটগ্রহণের দিনের তিন সপ্তাহের (২১ দিন) আগে কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার ভোটগ্রহণের দিন (২৩ ডিসেম্বর) থেকে তিন সপ্তাহ আগের দিনটি দাঁড়ায় ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু কমিশন বলেছে, প্রতীক বরাদ্দ দেবে ৩০ নভেম্বর। ফলে তিন সপ্তাহের বাধ্যবাধকতা মানতে হলে প্রতীক পেলেও কোন দল বা প্রার্থীকে প্রচারণার জন্য আরও তিনদিন অপো করতে হবে।
বিগত নির্বাচনগুলোর সময়কালের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমিশন ২১ দিনের ব্যবধানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২১তম দিন বা তার পরে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সাধারণত, নির্ধারিত দিন সকালেই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর আইনে ওইদিনটি প্রচারণার সুযোগ হলে প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা প্রচারণায় নেমে যাওয়ার সুযোগ পান।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ পেলেই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন। এেেত্র কয় সপ্তাহ বা কত দিনের ব্যবধান সেটা ফ্যাক্টর নয়। প্রতীক পেলেই কোনও দল বা প্রার্থী প্রচারণায় যেতে পারবেন এটা ভোটগ্রহণের ২১ দিন না ২৩ দিন আগে হলো সেটা বিবেচ্য নয়।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : জে.এ কাজল খান
Design and developed by syltech