ঢাকা ১লা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিলেটের চাঞ্চল্যকার রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত শম্বুক গতিতে চলছে। ফলে আদালতে চার্জশিট দাখিলে বিলম্ব হচ্ছে। হত্যাকা-ের আলামত নষ্টকারী সিলেট ভিউ’র সাংবাদিক কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল্লাহ আল নোমানকে এখনো খোঁজা হচ্ছে। আব্দুল্লাহ আল-নোমানকে গ্রেফতার করতে না পারায় মামলার চার্জশিট প্রদানে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইকে বারবার সময় নিতে হচ্ছে। রায়হান হত্যা মামলার তদন্তের সময় বর্ধিত করার জন্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করে পিবিআই। আবেদনটি ১৪ ফেব্রুয়ারি শুনানী হয়। শুনানী শেষে আদালত ৩০ কার্য দিবস বর্ধিত করে এই সময়ের মধ্যেই রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিট দিতে হবে বলে জানান।
রায়হান হত্যার আলামত হার্ডডিস্ক নষ্ট করার মূলহোতা বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ির এসআই হাসান আলীকে গ্রেফতার করা হলেও সিলেট ভিউ’র সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমানের কোন খোঁজ এখনো মিলেনি। এই দু’জন মিলেই আলামত নষ্ট করে বলে পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে আসে। সাংবাদিক নোমানকে আভিযোগপত্রে আসামী করা হবে কি-না তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
পিবিআই সিলেট’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। বর্ধিত ৩০ দিনের মধ্যেই অভিযোগপত্র দেয়া হবে। তবে, কবে দেয়া হবে তা এখনো নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ত্রুটিমুক্ত অভিযোগপত্র দিতে পিবিআই কাজ করছে।
সূত্র জানায়, গত ২৯ জানুয়ারি এসআই হাসান আলীকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এরপর তাকে একদিনের রিমা-ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য দিয়েছে। ঘটনার পর দ্রুত নগরীর জল্লারপারের গ্যালারিয়া শপিং সিটির একটি দোকান থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার ৫০০ গিগাবাইটের হার্ডডিস্ক কিনে এনে বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুরনো হার্ডডিস্কটি বদলে দেয় হাসান ও নোমান। ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত আকবর তার অস্ত্র টুআইসি হিসেবে হাসানের নিকট জমা দেয় এবং আকবরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন ভিউ’র সাংবাদিক আব্দুল øাহ আল নোমান। ঘটনার আগে ও পরে ২৪ ঘণ্টায় হাসান ও নোমানের মাঝে অন্ততঃ ৫৯ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। হাসান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকবর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও প্রথমে গোপন করেন। রিমান্ডে এ সকল তথ্য দেয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু তথ্য দিলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হননি এসআই হাসান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ও পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাসানকে গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ অক্টোবর নগরের আখালিয়ার যুকব রায়হানকে নগরের বন্দরবাজার পুলিশ, ফাড়িতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়। পরে হত্যাকান্ডের মূল হোতা বন্দর বাজার পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ আকবর ভুইয়া ভারত পালিয়ে যায়। কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আব্দুল্লাহ আল-নোমান। ঘটনাটি মিডিয়ায় ফাস হয়ে গেলে আত্মপোপনে যায় সিলেট ভিউ’র সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। ঘটনার ২৮ দিনের মাথায় ৯ ডিসেম্বর কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের ওপার থেকে ধরে আনা হয় ঘাতক আকবরকে। কিন্তু অদ্যাবধি নোমানকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আর এ কারণে মামলার চার্জািশট প্রদানে বিলম্ব হচ্ছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : জে.এ কাজল খান
Design and developed by syltech