ঢাকা ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
খলিলুর রহমান
সিলেট নগরে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। ফলে অহরহ ঘটছে প্রাণহানি। বাণিজ্যিক করে ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলায় ঝরছে সিলেটবাসীর অনেক তাজা প্রাণ। পেট ভরছে পুলিশসহ স্থানীয় কর্তাব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা- হোতাদের। সোমবার রাতে নগরের সুবিদবাজারে রাস্তায় ট্রাক টাপায় একই সাথে ঝরে গেল উদীয়মান দুই যুবকের তাজা প্রাণ। ক’দিন আগে একই এলাকায় যন্ত্রদানব ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণহানি ঘটে রিকশারোহী এক নারীর। একই কারণে আরেকজনের মৃত্যু ঘটে নগরের চৌখিদেখী রাস্তায়। সোমবার (১১ জানুয়ারি) রাত পৌণে ১০টার দিকে সজীব ও লুৎফুর নামের দুই যুবক মোটর বাইক চালিয়ে নগরের আম্বরখানা থেকে সুবিদবাজার এলাকাস্থ’ বাসায় ফিরছিল। এ সময় পেছন দিয়ে আসছিল দ্রæতগামী যন্ত্রদাব ট্রাক, যা তারা দেখার বিষয় নয়। সুবিদবাজার পৌঁছামাত্র ট্রাকটি মোটর বাইকের পেছন দিকে সজোরে ধাক্কা দিলে বাইক থেকে ছিটকে পড়ে ওই দুই যুবক। তখন তাদের উপর দিয়েই ট্রাক চালিয়ে পিষিয়ে চালক তাদেরকে হত্যা করে। হত্যার পর ট্রাক নিয়ে পালাতে থাকে ঘাতক চালক। যদিও কিছুদুর যেতেই জনতার হাতে চালকসহ আটকা পড়ে ওই ট্রাক। এসময় ক্ষুব্দ জনতা ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর কিছুদিন আগে সুবিদবাজারস্থ পপুলার ফার্মেসীর সামনে একটি রিকশাকে পেছন দিয়ে ধাক্কা দেয় ঘাতক ট্রাক চালক। ছিটকে পড়ে রিকশারোহী এক মহিলার মৃত্যু ঘটে। গত সপ্তাহে নগরের চৌখিদখিতেও ট্রাক চালক কেড়ে নেয় একজনের প্রাণ। আর এসব ঘটনা দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে শহরতলী তেমূখীতে সুরমা নদীর উপর নির্মিত সুনামগঞ্জ বাইপাস ব্রিজ। ব্রিজটি নির্মিত হয় সুনাগঞ্জের ট্রাক বাসসহ ভারী যানবাহন পারাপারের জন্যই। তাইতো এটাকে বলা হয়ে থাকে সুনামগঞ্জ বাইপাস ব্রিজ। এটা দিয়ে আম্বরখানা সুবিদবাজার ও মদিনা মার্কেট হয়ে সিটির উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট এলাকার পাথরবাহী ট্রাক পারাপারের কোন যুক্তি নেই। সিলেট জেলার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার ট্রাক-বাস পারাপার করাতে হলে বা পারাপারে জন্য সেতু নির্মাণ করা হলে সেতু নির্মাণের আগেই সালুটিকর-তেমূখী বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রয়োজন ছিল। সড়ক নির্মাণ না করে সেতু নির্মাণ তো কোন উন্নয়ন নয়, বরং অর্থের অপচয় ও ধ্বংসাত্মক কাজ বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন।
মূলত, তেমূখী ব্রিজটি সুনামগঞ্জ বাইপাস সেতু। এটা দিয়ে সিলেটের উত্তরাঞ্চলের পাথরবাহী ট্রাক পারাপার কার স্বার্থে এবং কোন যুক্তিতে? এ প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে সিলেট নগরবাসীকে।
এক সময় সিলেটের ক্বীনব্রিজ ছাড়া কোন ব্রিজই ছিল না সুরমা নদীর উপর। ব্রিটিশ আমলে আসাম ত্রিপুরা শিলচরসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার সকল যানবাহন পারাপার হতো এই ক্বীনব্রিজ দিয়েই। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের জিয়া সরকার আমল পর্যন্ত এই ক্বীন ব্রিজই ছিল সুরমা নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। এরশাদ সরকারের আমলে নগরের শাহজালাল উপশহর ও চালিবন্দরের মাঝখানে সুরমার উপর নির্মিত হয় শাহজালাল ব্রিজ। দু’ধারে রিকশা ও বাইক যাতায়াতের ডিভাইডারযুক্ত ব্যবস্থা দিয়ে নির্মাণ করা হয় বিশাল ব্যাসের এই সেতু। ক্বীনব্রিজ পূরনো ও নড়বড়ে হয়ে পড়ায় শাহজালাল সেতু দিয়েই পারাপার করতো সিলেট ও সুনামগঞ্জের উত্তরাঞ্চলীয় সব ট্রাক-বাস ও ভারী যানবাহন। পরবর্তীতে সিলেটে আরো তিনিটি সেতু নির্মাণ হয় সুরমা নদীর উপর। সেগুলো হচ্ছে শাহপরাণ বাইপাস সেতু, তেমূখীস্থ সুনামগঞ্জ বাইপাস সেতু ও কাজিরবাজার ব্রিজ। শাহপরাণ সেতু দিয়ে সিলেট-তামাবিল সড়কের পাথরবাহী ট্রাকসহ সকল ভারী যানবাহন পারাপার করা হয়ে থাকে। তেমূখী বাইপাস সেতু দিয়ে পারাপার হয়ে থাকে সুনামগঞ্জগামী মালবাহী ট্রাক ও ভারী যানবাহন। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের পাথরবাহী ট্রাকগুলোর জন্য আলাদা কোন সড়ক ও ব্রিজ নেই। এ অঞ্চলের পাথরবাহী ট্রাকগুলো বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে সিলেট নগরে ঢুকে। এগুলো শাহজালাল ব্রিজ-১ দিয়ে পারপার সহজ ও দ্রæততর সময়ে হলেও বিশাল ব্যাসের এ ব্রিজ দিয়ে এগুলো পারপার করতে দেওয়া হয় না। আম্বরখানা সুবিদবাজার, মদীনা মার্কেট, আখালিয়া, শাহজালাল ভার্সিটি ও উত্তর সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পরে তেমূখী হয়ে সুনামগঞ্জ বাইপাস ব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে দেওয়া হয়। এতে করে যেমন সময় বেশি লাগে, তেমনি জনবহুল এ দীর্ঘ পথে ঘটে অনেক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী। যেমন সোমবার রাতে দুজনের প্রাণহানীসহ সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণ ঝরে যাওয়ার অনেক ঘটনা। একটি ব্রিজ অন্তত শত বছরের গ্যারান্টি দিয়ে নির্মত হলেও কেন এতো স্বল্প সময়ে শাহজালাল ব্রিজ ট্রাক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেল? বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে আগত ট্রাকগুলো কেনইবা শাহজালাল ব্রিজ দিয়ে পারাপার হতে না দিয়ে সিটির উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সুনামগঞ্জ বাইপাস সেতু দিয়ে পারাপার করতে দেওয়া হয়? সে সব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। এছাড়া কাজিরবাজার ব্রিজটি কেন নির্মাণ করা হলো। এ ব্রিজের উদ্বোধন থেকেই কেনই বা ভারী যানবাহন পারাপার বন্ধ রেখে শুধু যুবক-যুবতী ও তরুণ-তরুণীদের সেল্ফিবাজির জন্য ছেড়ে দেওয়া হলো? এর কোন উত্তর মিলছে না সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। তাই সচেতন মহলের ধারনা- বিরাট আকারের এ দুই ব্রিজ সিডিউল মতো নির্মাণ না করে প্রচুর টাকা লোপাট করা হয়েছে এবং এর প্রমাণ চেপে রাখার নিমিত্তেই এ দু’ ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না।
আরেকটি কারণ হতে পারে যে ট্রফিক পুলিশের টুপাইস কামানোর স্বার্থেই এ দুই ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন ও ট্রাক পারপার বন্ধ করে শুধুমাত্র শাহপরাণ বাইপাস ও সুনামগঞ্জ বাইপাস দিয়ে ট্রাক ও ভারী যানবাহন পারাপারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার ফলে ঘটে চলেছে অহরহ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ’র ডিসি (ট্রাফিক) ফায়সাল মাহমুদের সরকারি সেল ফোনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বার বার কল করা হলে তিনি বিজয়ের কণ্ঠ’র এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : জে.এ কাজল খান
Design and developed by syltech