ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠায় রাজাকারপুত্র লিয়াকত লিলা

প্রকাশিত: ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৯

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠায়  রাজাকারপুত্র লিয়াকত লিলা

নিজস্ব প্রতিবেদন : আর রক্ষা নেই, রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের করা হবে বহিস্কার ও গ্রেফতার। শাসকদল আওয়ামী লীগকে অনুপ্রবেশকারীদের থেকে মুক্ত করতে দলীয়ভাবে নেয়া হয়েছে কঠোর সিদ্ধান্ত। আর এর আওতায় পড়ছেন সিলেটে দাপিয়ে বেড়ানো বহু রাজাকার পুত্র নব্য আওয়মী লীগ নেতা ও হোতারা। যারা শাসকদলের দাপট দেখিয়ে চালিয়েছেন নানা অপরাধ-অপকর্ম। প্রশাসনকে ও জনগনকে জিম্মি করে চালিয়েছেন সরকারী ও বেসরকারী সম্পদ লুটপাটের মহোৎসব। হয়েছেন জিরো থেকে হিরো এবং শত শত কোটি টাকার মালিক। সিলেটে এমন কয়েক রাজাকার পুত্রের একজন হচ্ছেন জেলার জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ওরফে লিয়াকত লীলা। শাসকদল আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, হামলা-মামলা, খুন, রাহাজানী, সরকারী সম্পত্তি আত্মসাত, এমনকি কেনা-বেচাসহ নানা অপরাধ-অপকর্ম ও লিলা-খেলার মাধ্যমে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন তিনি। আর এ কারনেই তার নামের সাথে যুক্ত হয়েছে লিলা। তাই সিলেটের এককালের জৈন্তিয়া রাজ্যে ‘লিলা’ বলতেই বুঝানো হয় একমাত্র নব্য আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী লিলা।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বাউরবাগ গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর ওরফে লিলা’র পিতা মৃত তেনাই মিয়া ছিলেন একাত্তরে পাকহানাদার বাহিনী গঠিত শান্তি কমিটির নেতা ও দুর্ধর্ষ তেনাই রাজাকার নামে পরিচিত। কালক্রমে সেই রাজাকার পুত্র লিয়াকত আলী রাজনীতির ছড় পাল্টে দিয়ে হন জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের একক কর্ণধার ও সাধারণ সম্পাদক। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে লিয়াকত ছিলেন একজন শ্রমিক ও পাথরবাহী ট্রাকের হেল্পার। পরবর্তী সময়ে ক্ষুদে পাথর ব্যবসায়ী থেকে জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হয়ে যান। আর এই সুবাদে জবরদখল, রাহাজানী, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজি,ও সরকারী সম্পদ লুটপাটের মহোৎসব চালিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে হয়ে যান কলাগাছ। প্রাক্তন জৈন্তিয়া রাজ্যের স্বঘোষিত রাজা হয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপরাধ ও অপকর্মের লিলা-খেলা। কিন্তু এই দিন দিন নয়, দিন আরো আছে ও আসছে। এই প্রবাদেই অচিরেই পতন ঘটছে তার রাজ্যের। সমাপ্তি ঘটতে চলেছে তার সব লিলা-খেলার ।
জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর ওরফে রিয়াকত লিলা’র বিরুদ্ধে অপরাধ অপকর্মের অভিযোগের কোন অন্তনেই। একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে উপজেলা ও আশপাশ এলাকায় কায়েম করে রেখেছেন ত্রাসের রাজত্ব। তার এ ত্রাসের রাজত্বে খুন হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক পাথুরে ভূমির মালিক ও শ্রমিক। তার জবরদখলীয় অবৈধ পাথর রাজ্যের গর্তে পড়ে প্রাণ গেছে অনেক পাথর শ্রমিকের। খুন রাহাজানী ও ভূমিদস্যুতার বহু মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় কিছুদিন জেলও খেটেছেন তিনি। তার ও তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হিং¯্র থাবা থেকে রেহাই পান নি মিডিয়া কর্মীরাও। নিজ এলাকা জৈন্তাপুরের সাংবাদিকদের উপর বহুবার নির্যাতন চালিয়েছেন তিনি। এমনকি তার নির্দেশে আদালতেও নির্যাতিত হয়েছেন জাতীয় পত্রিকার একাধিক সাংবাদিক।

লিয়কত আলী ওরফে লিয়াকত লিলা’র সন্ত্রাস খুন,রাহাজানী ও লুটপাট এখানেই শেয় নয়। জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করে কোটি কোটি টাকামূল্যের সরকারী পাথুরে ভূমি বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করতেও পরোয়া করেন নি তিনি। দলীয় প্রভাব ও নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ভীত-সন্ত্রস্থ করে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন । ভয়ে স্থানীয় প্রশাসন চোখ বুঝে তার সব অপকর্মের সহায়তা করে যাচ্ছে।

ভূমিদস্যু লিয়াকত আলী অতি সম্প্রতি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলাধীন সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের প্রায় ৮ কোটি টাকার পাথুরে ভূমি বিক্রি করে ফেলেছেন। জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে কাগজাত তৈরী করে এবং দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় ভূ-প্রশাসনকে হাত করেই তিনি সরকারী এ সম্পত্তি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা । ভূমিদস্যুতা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী বিক্রির অভিযোগে গত ৯ অক্টোবর বুধবার আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী ও তার সহযোগীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সিলেটের স্পেশাল জজ আদালতে একটি মামলা হয়েছে। সরকার ও জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করেন-সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের করগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইউসলামের পুত্র মো. মনির আহমদ। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মনির আহমদের দায়ের করা এ মামলায় লিয়াকত লিলা’র আশীর্বাদপুষ্ট সাবেক জেন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদুর রহমানকেও আসামী করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ থেকে রাজাকার পুত্রদের বহিস্কার, মামলা ও গ্রেফতারের খবরে কম্পন শুরু হয়ে গেছে জৈন্তার স্বঘোষিত রাজা লিয়াকত লিলা’র সিংহাসনে। গ্রেফতার এড়াতে লিয়াকত লিলা এখন আত্মগোপনে চলে গেছেন। অচেনা ও কোন মিডিয়া কর্মীর মোবাইল ফোন রিসিভও করেন না তিনি। সুত্রমতে তিনি তার বাড়ি জৈন্তাপুর উপজেলার স্থল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ টাকা টাকা পাচার করছেন এবং প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর