ঢাকা ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৩৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদন : বিএনপির সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর ঘনিষ্টজন এখন আওয়ামী লীগের এমপি হাফিজ মজুমদারের অতি কাছের এবং প্রিয়জন। তিনি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সাতবাক ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যন ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ। রাজাকার পুত্র মস্তাক আহমদ পলাশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তবে অজ্ঞাত কারণে সেসব অভিযোগের তদন্তে দারুন সম্ভুক গতি। তদন্তে যেন প্রশাসনের প্রচন্ড মাথাব্যথা। বেঁধে দেয়া একমাসের তদন্ত শেষ হচ্ছে না চারমাসেও। তবে আজ ৩০ অক্টোবর বুধবার কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এ শুনানী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
.
জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের মরহুম সিরাজ উদ্দিনের পুত্র কানাইঘাট উপজেলা আ’লীগের সদস্য মো: কবির আহমদ এবছরের ৩ ফেব্রুয়ারি দুদক সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ে মস্তাক আহমদ পলাশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও আত্মসাত-সহ নানা বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ গ্রহণপূর্বক তা পাঠানো হয় দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক-এর প্রধান কার্যালয়ে। গত ২৭ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের মহাপরিচালক (তদন্ত-১) মো: মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে বলা হলেও আজ অবধি আলোর মুখ দেখেনি সেই তদন্ত প্রতিবেদন।
.
সিলেটের জেলা প্রশাসন গত ৩ জুন এ চিঠি পাওয়ার পর ১৮ জুন আরডিসি উম্মে সালিক রুমাইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কানাইঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে দুদক থেকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসককে বলা হলেও প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন।
.
মস্তাক আহমদ পলাশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত করছেন কানাইঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বারিউল করিম খান। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগের ওপর শুনানী ছিল। তবে অভিযোগকারীর ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তা এক মাস পিছিয়ে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে চলতি অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখে অর্থাৎ আজ বুধবার কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।
তালিকাভুক্ত একাত্তরের রাজাকার সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার জুলাই গ্রামের আব্দুল মান্নান বারহালী মিয়া ছাবের পুত্র মস্তাক আহমদ পলাশ। তার ক্ষমতার দাপট ছিল এমন যে কানাইঘাট উপজেলায় বাজারে ডালা মেলে ব্যবসা করলেও হিস্যা যেতে হতো তার পকেটে।
শুধু তাই না ভালুকমারা ও হালুকমারা চরের পাথর কোয়ারী এলাকায় মানুষের জায়গা দখলের হুমকি দিয়ে গেল কয়েক বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন পলাশ। তার কারণে সাধারণ অনেক ব্যবসায়ী পাথর ব্যবসা বাদ দিযে এখন বেকার প্রায়। আর তার এসব কাজের আরেক সহযোগী ওই এলাকার তমিজ উদ্দিন মেম্বার ও তার বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে জায়গা দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি।
গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। অফিস পাড়ার বড় কর্তাদের বাসাতে রাত বেরাতে ঘুরতেও দেখা যায় তাকে।
ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী নেতা, এমপি-মন্ত্রী অনেকের সাথে দেখা যায় তার ঘনিষ্টতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দেখা যায় সিনিয়র নেতাদের সাথে তার সখ্যতার পোষ্ট। নিজ এলাকাতেও তার যথেষ্ট প্রভাববিস্তারের কারণ এটি। আর সেই পলাশ নিজ পুত্রকে এতিম সাজিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান নিয়ে দু:স্থদের টাকা আত্মসাত করেন।
পাথর কোয়ারী জলমহাল দখলসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পরও প্রশাসন যেন এখনও তার পকেটে। তবে সেটি রাজনৈতিক চাপে না কি অন্য কোন কারণে তা এখনও পরিষ্কার নয় ।
পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, জলমহাল দখল, সরকারি চাকরি দেয়ার নামে তদবির বাণিজ্য, মানুষের টাকা আত্মসাত, ফসলি জমি নষ্ট, পরিবেশ দূষণসহ নানা অপরাধ-অপকর্মে অভিযুক্ত মস্তাক আহমদ পলাশ। যিনি সিলেট জেলা আ’লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আজো বহাল তবিয়তে।
স্থানীয়রা বলছেন, কানাইঘাট উপজেলার সাতবাঁক ইউনিয়নের সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ নতুন নয়। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে হারিছ চৌধুরী ও জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে উপজেলা আ’লীগ দল থেকে তাকে সাময়িক বহিস্কার করে। পরে ২০০৯ সালে আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে সিনিয়র কয়েক নেতার আশীর্বাদে ধীরে ধীরে তিনি সামনের দিকে এগুতে থাকেন এবং শুরু হয় তার ক্ষমতার দাপট। গড়ে তুলেন জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদের পাহাড়।
তার দুর্নীতির তদন্ত চলা অবস্থায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার ও তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বৈঠকের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তদন্তের স্বচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বর্তমান সময়ে প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানে সারাদেশের প্রশাসন যখন একযুগে কাজ করছে ঠিক সেই মুহূর্তে শুদ্ধি অভিযানে সিলেটে আলোচনায় দুদকে অভিযুক্ত পলাশের তদন্ত প্রতিবেদন এখন সময়ের দাবী।
তদন্তাদীন অভিযোগ ছাড়াও অনুসন্ধ্যানে রাজাকারপুত্র মস্তাক আহমদ পলাশের বিরুদ্ধে পাহাড়সম আরো বহু অভিযোগ রয়েছে। অচিরেই তা মিডিয়ায় প্রকাশ পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মুঠোফোনে (০১৭১১-৯৮৪০৬৫) বার বার কল করা হলে মস্তাক আহমদ পলাশ সাংবাদিকের মোবাইল ফোন (০১৬৩৯-৫৫৮৪৮১) রিসিভ করেন নি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech