নগরীর আবাসিক হোটেলে রমরমা যৌনব্যবসা : বিপথগামী তরুণরা

প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২০

নগরীর আবাসিক হোটেলে রমরমা যৌনব্যবসা : বিপথগামী তরুণরা

নগরীর আবাসিক হোটেলে রমরমা
যৌনব্যবসা : বিপথগামী তরুণরা

নিজস্ব প্রতিবেদন
যৌন ব্যবসা বা যৌনকর্ম নতুন কোন অপরাধ-অপকর্ম নয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় যৌন ব্যবসা চলমান দেশের আনাচে কানাচে। তবে সিলেট নগরী-সহ অনেকস্থানে ভিন্নসব কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে যৌন ও নারীদেহের ব্যবসা । বিশেষ করে নগরীর লালধিঘীর পার,সুরমা মার্কেট, দক্ষিণ সুরমার টার্মিনাল রোড, ষ্টেশনরোড, কদমতলী, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, লালবাজার, ওসমানী মেডিকেল রোড, তালতলা, পূর্বজিন্দাবাজার, দরগাহ গেইট-সহ বিভিন্ন এলাকার হোটেল-মোটেল ও রেষ্টুরেন্টে চলছে রমরমা যৌন ও নারীদেহের ব্যবসা।
বিভিন্ন হোটেলে কর্মরতদের দেয়া তথ্য মতে, অনেক সময় নগর ও জেলার বাইর থেকে আগত কলেজ ভার্সিটির শিক্ষার্থী ছেলে মেয়েরা আনন্দ ফুর্তি করার জন্য নগরীর বিভিন্ন হোটেলে আসে এবং সেই সুত্র থেকেই নারী যৌন কর্মীর সন্ধান পাওয়া যায়। কখনই বা যৌন কর্মী নিজে থেকেই হোটেল ম্যানেজার ও বয়দের সাথে যোগাযোগ করে চলে আসে। নারী যৌনকর্মীদের সিংহ ভাগই স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটির শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবি নামের পতিতা।
বাইরের জেলা থেকে সিলেট জেলায় পড়তে আসা মেয়েরা নিজেদের শারিরীক, জৈবিক ও আর্থিক চাহিদা এবং যুগের সাথে সমতা বজায় রাখার তাড়নায়ই এই অপকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। যৌনব্যবসা সমাজ ও দেশের প্রচলিত আইনে ঘৃনিত হলেও সময়ের স্রোতে যেন তারা ভাসিয়ে দিচ্ছে তাদের দেহ-যৌবন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘৃনিত এ ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজন জানায়, বর্তমান প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারনে হোটেলে যৌনব্যবসা তেমন ভাল না। তবে কিছু অসাধু কর্মকর্তা, ও নাধারী সাংবাদিকদের মাসোহারা ও উৎকোচ দিয়ে কোন কোন হোটেলে অপকর্মের এ ব্যবসা চলছে বলেও তারা স্বীকার করেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, তার এ ব্যবসা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না ঘুষখোর পুলিশ ও কতিপয় মিডিয়া কর্মীদের কারনে। গত কযেকমাস আগে নগরীর লালদিঘীরপারস্থ একটি ভবনে অভিযান চালায় সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় ভবনের বিভিন্ন কক্ষ থেকে ৬ যৌনকর্মী ও ১ খদ্দেরকে আটক করে। এছাড়া ওই ভবন থেকে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ কনডম, লুব্রিক্যান্ট ও যৌন উত্তেজক ঔষুধ। আটকের পর যৌনকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে, দীর্ঘ দিন ধরে এই ভবনে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছে এবং পার্শ্ববর্তী একটি হোটেল-সহ নগরীর অন্যান্য হোটেলের সাথে তাদের যোগ সুত্র রয়েছে বলে জানায় তারা।
সিলেট নগরীর বিভিন্ন অভিজাত ও খোলা রেষ্টুরেন্ট যেন এখন যৌন মার্কেট। স্কুল কলেজ ও মেডিকেলের নারী স্টুডেন্টরা দিব্যি এসব রেষ্টুরেন্টে আড্ডার পাশপাশি চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। অনেক স্টুডেন্ট তাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় খাবার দাবার ছেড়ে দিয়ে রেষ্টুরেন্টকেই ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ক্লাস ফাকি দিয়ে রেষ্টুরেন্টগুলোতে জমজমাট আড্ডা মেরে ছুক্তিমোতাবেক চলে যায় নির্জনে, হোটেলে- মোটেলে ও পার্কের জঙ্গলে। নগরীর কিছু কিছু রেষ্টুরেন্টের বহুতল ভবনে টাকার বিনিময়ে খাবা দাবারের পাশপাশি রেষ্টরুমও ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে। যৌনপিপাসুরা ঘন্টাচুক্তি রেষ্টরুম ভাড়া করে তাদের অপকর্ম চালায়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক হোটেল গুলোর সাথে সংযুক্ত রয়েছে রেষ্টুরেন্টও। পতিতাদের রেস্টুরেন্টের কাস্টমার সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয় এবং খদ্দেরদের চাহিদামত উপরে রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়।
নগরীর হোটেল-মোটেল ও রেষ্টুরেন্টগুলোতে চলমান দেহব্যবসায় যুবসমাজ দিন দিন ধাবিত হচ্ছে অন্ধকারের দিকে। বাড়ছে নারী ধর্ষন ,আর ইভটিজিং এর ন্যায় বড় ধরণের অপরাধ। পারিবারিক অশান্তিও বাড়তে থাকে পর্যায়ক্রমে। নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, একশ্রেণীর দিনমজুর থেকে আরম্ভ করে মধ্য বয়সের কর্মবিমুখ মানুষের পদভারে মুখরিত থাকে আবসিক হোটেল গুলো। আনাগোনা থাকে উঠতি বয়সের দেশী ও প্রবাসী ছেলেদের। অনেকক্ষেত্রে কলেজের নাম করে বান্ধবিকে নিয়ে উঠে পড়ে কোন কোন আবাসিক হোটেলে।
এসব হোটেল মোটেল ও রেষ্টুরেন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির অভিযানের কোন তৎপরতা দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো দুএকটি অভিযান চালিয়ে পতিতা-খদ্দেরদের আটক করা হলেও বড় অংকের টাকা পেয়ে আদালতের মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয় পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, এসব অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পাদনের জন্য প্রায় হোটেলেরই আড়ালে রয়েছে প্রাবশালী মহলের এবং বিশেষ রাজনৈতিক দলের গডফাদার ও নামধারী সাংবাদিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্চুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বন্দরবাজার এলাকায় লালবাজারের একাধিক হোটেল এবং কাস্টঘর লালদিঘীরপার এলাকার হোটেলগুলো যেন মিনি পতিতালয়। নগরীর আবাসিক হোটেল গুলোতে অবাধে অসামাজিকতার তোড়জোড়ে যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় স্কুল,কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও তাদের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসব হোটেল গুলোতে সময় অতিবাহিত করে।
এছাড়া জেল রোড,ধোপাদিঘীরপাড়, কোর্টপাড়ায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভাসমান পতিতাদের উৎপাত বৃদ্ধিপেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নগরীর লালদিঘীর পার এলাকায় রাত ঘনিয়ে এলে নতুন ভবনের ২য়তলায় সামান্য টাকার বিনিময়ে যৌনকাজ সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন দালাল চক্রও কাজ করে। কখনো কখনো প্রবাসী এবং গ্রামের লোকদেরকে তাদের পাতানো ফাদেঁ ফেলে অথবা ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় টাকা, মোবাইল সহ মূল্যবান জিনিষ পত্র। কয়েকদি পূর্বে নগরীর সুরমা মার্কেট এলাকা থেকে বোরকাপরা ৯জন পতিতাকে আটক করে পুলিশের একটি বিশেষ টিম। এরপর বের হয়ে আসে এসব তথ্য।
এভাবেই বহিরাগত ছাত্র-ছাত্রী ও পতিতা ও যৌনব্যবসায়ীরা পুণ্যভূমিসিলেটের সামাজিক ঐতিহ্য বিনষ্টের পাশাপাশি সিলেটকে পাপরাজ্যে পরিণত করে চলেছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
আমাদের বিজয়ের কণ্ঠ’র অনুসন্ধসী টিম যৌনব্যবসায় জড়িত এসব হোটেল-মোটেল, রেস্টহাউস-রেষ্টুরেন্ট ও আবসিক আস্তানার সন্ধ্যানে রয়েছে। অনুসন্ধ্যান শেষে এসব অপকর্মের আস্তানার নাম ও অবস্থান উল্লেখ করে ধারাবাহিক সংবাদ-প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর