জকিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করলো পুলিশ!

প্রকাশিত: ৪:১০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৩

জকিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করলো পুলিশ!

তল্লাশির নামে বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তছনছ * পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা ও মানসিক নির্যাতন * দেশীয় চিনিকে ভারতীয় বলে ৩০ বস্তা চিনি থানায় নিয়ে জব্দ * মিথ্যে মামলার ভয় দেখিয়ে ১ লক্ষ বিশ হাজার টাকা আদায় * ঘটনায় নির্বাক মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পাল * এলাকায় তোলপাড়-মানববন্ধন * সান্ত¦না দিলেন মাসুক উদ্দিন * ন্যায় বিচারের আশ্বাস তদন্ত টিমের


জকিগঞ্জ সংবাদদাতা
জকিগঞ্জে যুদ্ধাহত বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী কানন ব্রত পালকে হেনস্তা করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ। এসময় তল্লাশির নামে তছনছ করা হয়েছে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ঘর। মিষ্টান্ন ভান্ডারের জন্য রাখা দেশীয় চিনিকে ভারতীয় চিনি বলে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তা জব্দ করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা। ঘটনার সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও দাম্ভিকতা দেখিয়ে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মানসিক নির্যাতন করা হয়। এতসব ঘটায় এখনও নির্বাক রয়েছেন ভুক্তভোগী কানন ব্রত পাল।
তবে, পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করেছেন সিলেট রেঞ্জ পুলিশের দুই কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুফিয়ান আহমদ ও জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির আহমদের সমন্বয়ে একটি টিম সরেজমিন তদন্ত করেন। পৃথক তদন্তে ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জকিগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন-সহ একদল মুক্তিযোদ্ধা।
পুলিশের তদন্ত টিম ঘটনাস্থল কালিগঞ্জ বাজারের সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডার ও তার বসত ঘরে গিয়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনেন। তাদের সাথে কথা বলেন, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও ছেলেরা। তারা নারকীয় ওই ঘটনার স্বাক্ষ্য প্রমাণ দেন। সবশুনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন তদন্তকারীরা।
এসময় তদন্ত দলের পক্ষ থেকে নির্বাক কানন পালকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি কি চান? তিনি কিছু না বলেই অশ্রসিক্ত নয়নে চেয়ে থাকেন। আবার তদন্ত টিমের প্রধান জানতে চান- আপনি বিচার চান কি না? জবাবে শুধু মাথা নেড়ে অশ্রুশিক্ত নয়নে বিচার চাওয়ার সম্মতি প্রকাশ করেন কানন ব্রত পাল।
এদিকে সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জকিগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন এর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধাও সরেজমিন তদন্ত করেন। ঘটনার স্বাক্ষী প্রমাণ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা ধৈর্য ধরুন। ন্যায় বিচার পাবেন। তখন শত শত লোকে এলাকা লোকারণ্য হয়ে গেলে উৎসুক জনতাকেও শান্তনা দিয়ে আসেন।
অপর দিকে, ন্যাক্কার জনক এই ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল কালিগঞ্জ বাজারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পুলিশকেই দিয়েছেন। জকিগঞ্জ থানা পুলিশের এই বুঝি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নমুনা? এতসব করেও জকিগঞ্জের অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পদকও পেয়েছেন!
উল্লেখ্য, বুধবার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিপ্লব কুমার পালের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি সিলেটের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট মহলে দায়ের করলে বিষয়টি নিয়ে তুলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযোগপত্রে বিপ্লব কুমার পাল উল্লেখ করেন, তিনির পিতা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পালের বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গত ২২ নভেম্বর ২০২২ ইংরেজী তারিখে জকিগঞ্জ থানার একদল পুলিশ তল্লাশির নামে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তছনছ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি-ধমকি দেয়। এসময় বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পাল প্রথমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরলেও এপর্যন্ত তিনি নির্বাক রয়েছেন। তাছাড়া তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডর থেকে ৩০ বস্তা চিনি জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যান এবং সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্য জোরপূর্বক ডিলিট করে যান। সিলেট শহর থেকে বৈধ কাগজপত্রসহ ক্রয় করার ডকুমেন্ট থাকলেও এসব চিনি নাকি ভারতীয় বলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রেকর্ড করেন। রাতে দালাল মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজন কুমার পালকে চিনি ফেরত দেয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে আটক ও মামলায় জড়ানোর হুমকি ধমকি দিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করেন জকিগঞ্জ থানার ওসি মোশাররফ হোসেন। পুলিশের হুমকি ধমকিতে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে এতদিন তারা মূখ খোলেনি। সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে আরও টাকা দাবী করা হয়। না দিলে মামলার চার্জশীটে ঢুকানোর হুমকি দিলে সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিপ্লব কুমার পাল বুধবার লিখিত অভিযোগ করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর