ট্রাকচাপায় কুলাউড়ার একই পরিবারের ৪জনসহ নিহত ৫

প্রকাশিত: ৭:৩৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৩

ট্রাকচাপায় কুলাউড়ার একই পরিবারের ৪জনসহ নিহত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় ৭/৮ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখলেও সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পারেননি মালয়েশিয়া প্রবাসী আখলিছুর রহমান রাজু। পথিমধ্যেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় পরিবারের চার জনসহ মোট ৫ জনকে হারিয়ে নিজেই কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে। হাসপাতালে তার সঙ্গী হয়েছেন পিতা, চাচাত্ব ভাইসহ এক স্বজন।

 

এমন হৃদয় বিদারক ঘটনায় শোকাহত মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম মাদানগর।

 

শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের শাহপুরে বালুবোঝাই ট্রাক, নোহা মাইক্রোবাস ও পিকআপভ্যানের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এই ৫ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হোন ৪ জন। আহতরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

ছবিতে পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রবাস ফেরত রাজু। ছবিটি শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তোলা।

 

নিহতরা হলেন, কুলাউড়ার হাজীপুরের মাদানগর গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে সাদিয়া সুলতানা কলি (২৬), জামাতা (সাদিয়ার স্বামী) আব্দুস সালাম (৩২), নাতনি হাবিবা সুলতানা (৪), ছোট ছেলে আতিকুর রহমান সিহাব (১৫) ও মাইক্রোবাস চালক উপজেলার পৃথিমপাশার আলীনগরের বাসিন্দা সাদির মিয়া (৩০)।

 

আহত হয়েছেন- নুরুল ইসলাম (৫০), তাঁর বড় ছেলে প্রবাস ফেরত আখলিছুর রহমান রাজু, ভাতিজা নিশাত (১৮) ও তাদের স্বজন আনজব আলী (৫০)।

 

নিহতদের স্বজন এবং শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, মাদানগরে বাসিন্দা নুরুল ইসলামের বড় ছেলে রাজু মালয়শিয়া প্রবাসী। আরেক ছেলে ফয়জুর রহমান সাজু ইতালী প্রবাসী। শুক্রবার নুরুলের বড় ছেলে রাজু মালয়শিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। তাঁকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাড়ি নিয়ে আসতে নুরুলের মেয়ে সাদিয়া, জামাতা সালাম, নাতনি হাবিবা ও ছোট ছেলে সিহাবসহ আটজন একটি নোহা মাইক্রোবাসে রওয়ানা দেন। ফেরার পথে শাহপুরে তাদের বহনকারী গাড়ির সাথে ট্রাক ও পিকআপভ্যানের সংঘর্ষ হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গেলে ভেতরেই চাপা পড়েন নুরুল ইসলামসহ অন্যরা। এতে গাড়িতে থাকা সিহাব, সালাম ও চালক সাদির ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। মাইক্রোবাসে থাকা ৬ জনকে গুরুতর আহতবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে নেওয়ার পথে সাদিয়া ও তাঁর শিশু সন্তান হাবিবা মারা যান।

 

নুরুল ইসলামের চাচা হাজী মো. রইছ আলী জানান, ভোর ৪টার দিকে গাড়িতে থাকা নিশাত মোবাইলে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানায়। ঘটনাস্থলে চালকসহ আমার নাতি ও নাতিন জামাই মারা যান। দুর্ঘটনায় আহত আমার নাতিন সাদিয়া ও তার মেয়ে সিলেট নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। তাদের লাশ বাড়িতে আনা হয়েছে। বাকিদের লাশ শায়েস্তাগঞ্জ থেকে আনা হচ্ছে।

 

নুরুলের ভাগ্না আশরাফুল মামুন বলেন, মামাতো ভাই রাজুর দেশে আসা নিয়ে পুরো বাড়িতে আনন্দের আমেজ ছিল। আমরা তাদের ফেরার অক্ষোয় ছিলাম। অপেক্ষার সময়টা যেনো কাটতেই চাইছিল না। কিন্তু কে জানতো যে, আমাদের সব আনন্দকে ম্লান করে দিয়ে শোক আমাদের গ্রাস করবে। একই পরিবারের ৪ জনকে হারিয়েছি, আহতরা এখনও হাসপাতালে। সব মিলিয়ে পরিবারের অবশিষ্ট সদস্যরা এখন শোকে পাথর।

 

শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লিডার মুহিবুর রহমান মোবাইলে বলেন, ত্রিমুখী সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। আমরা ঘটনাস্থল গিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করি।

 

শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. মাইনুল ইসলাম ভুঁইয়া শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে মোবাইলে বলেন, আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমাদের থানায় তিনজন পুরুষের মরদেহ রয়েছে। নিহতদের স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। আইনী প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর