হরতালে নাশকতা মামলা
গ্রেফতার এড়াতে পুরুষশূন্য গোলাপগঞ্জের মোল্লাগ্রাম: আতঙ্কে পরিবার

প্রকাশিত: ১২:২২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৩

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>হরতালে নাশকতা মামলা</span> <br/> গ্রেফতার এড়াতে পুরুষশূন্য গোলাপগঞ্জের মোল্লাগ্রাম: আতঙ্কে পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটের গোলাপগঞ্জে হরতালে নাশকতার অভিযোগ এনে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় এজাহার নামীয় ৪জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬০জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। পুরষশূন্য বাড়িতে আতঙ্কে দিন পার করছেন পরিবারের নারী সদস্য ও শিশুরা।

 

বুধবার সরজমিনে মোল্লাগ্রামে গেলে এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

 

জানা যায়, গত রোববার সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে সিলেটের গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জ এলাকায় নাশকতা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে মামলা করেন থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর আলম।

 

মামলায় সিলেট জেলা বিএনপির সহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তামিম ইয়াহইয়া আহমদ, যুবদল নেতা আব্দুস শহিদ, ফুলবাড়ি ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মুজিবুর রহমান দুলাল, ছাত্রদল নেতা শাহ আলম ও বাবলু ওরফে প্রিন্স বাবলু ওরফে পাপ্পুকে এজাহার নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 

এদিকে হরতাল-পিকেটিং ছাড়াই সাধারণ মানুষেরা মামলার আসামি হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা। তারা বলছেন, ‘প্রতিদিনের মতো ওই দিনও ফজরের নামাজের পর আমরা ১০-১৫ জন মহিলা হাঁটতে বের হই। মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত আসি। কিন্তু বিদ্যালয়ের সামনের সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কোনো হরতাল-পিকেটিং হতে দেখিনি। কিন্তু বাজারে নাকি কী একটা ঝামেলা হয়েছিল। ওই ঝামেলায় একজন আহত হয়ে গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়ে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গ্রামের ভেতর হয়ে আহতের পরিচিত আরো ৪/৫ জন যুবক এসে তাকে নিয়ে সড়কের দিকে যায়। তারা সড়কে উঠামাত্র বাজারের দিক থেকে বেশ কয়েকজন যুবক ‘ধর ধর’ বলে দৌড়ে আসে। তাদের সাথে দুই গাড়ি পুলিশও ছিল। এসময় ধাওয়া খেয়ে যুবকরা গ্রামের ভিতরে ঢুকে পড়লে আমরা আতঙ্কিত হয়ে দিগি¦দিক ছুটতে থাকি। এরপর নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে বিষয়টির উপর নজর রাখি। এসময় আব্দুস শহিদ নামে একজনকে ব্যাপক মারধর করে আহত করে বাজার থেকে আসা যুবকরা। পরে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে তাকে উঠিয়ে নেওয়া হয় ও তার সাথে মোটরসাইকেলটি একজন পুলিশ সদস্য চালিয়ে নিয়ে যান। পরে জানতে পারি বাজার থেকে আসা যুবকরা ছাত্রলীগের কর্মী ছিল।’

 

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হরতালের দিন ভোরে হেতিমগঞ্জ এলাকার মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হরতালকারীরা। এসময় তারা নাশকতা করেছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

 

কিন্তু পুলিশের এই অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করছেন হেতিমগঞ্জ বাজারের পাহারাদার ও বাজার মসজিদ ও মোল্লাগ্রাম নতুন জামে মসজিদের মুসল্লিরা। তারা বলছেন, ‘হরতালের দিন ভোরে বাজারে কোনো পিকেটিং হয়নি। আমরা নামাজ পড়ে অনেক সময় হাঁটাহাটি করেছি। কোনো পিকেটিং দেখিনি বা হরতালের কোনো সমর্থককেও চোখে পড়েনি। এমনকি মোল্লাগ্রাম স্কুলের সামনেও কোনো পিকেটিং ছিল না।’

 

পাহারাদাররা জানান, হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করতে ভোর ৬টায় বাজারে আসেন সিলেট জেলা বিএনপির সহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তামিম ইয়াহইয়া। এসময় তার সাথে হাবিব নামের একজন যুবদল কর্মী ছিলেন। তারা পিউরিয়ার সামনে মোটরসাইকেল পার্কিয় করে নামামাত্র হামলার শিকার হন। আগে থেকে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের উপর হামলা চালালে হাবিব মাদরাসা রোডে এবং তামিম আহত হয়ে মোল্লাগ্রামের দিকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে বাজারে কোনো হরতাল সমর্থককে দেখিনি। তাছাড়া, বাজারে সার্বক্ষণিক পুলিশ ছিল।

 

এ ব্যাপারে জানতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘হরতালের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। এসময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্রদলের কর্মী আব্দুস শহিদকে মোটরসাইকেলসহ আটক করে থানায় আনা হয়।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর