ঢাকা ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার সনদ স্থগিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে অন্য অভিযুক্ত মুরাদকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক। এছাড়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) মাহতাব-উজ-জাহিদকে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট সবার সিদ্ধান্তগুলো হলো- প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন গ্রহণ করা, প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রধান অভিযুক্ত মোস্তাফিজুরের সনদ স্থগিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, অন্য অভিযুক্ত মুরাদকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ স্থগিত, শাহ পরানের সনদ স্থগিত, সাব্বির আহমেদ সাগরকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ স্থগিত, এএসএম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ স্থগিত এবং হাসানুজ্জামানের সনদ স্থগিত ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সব অছাত্রদের ৫ দিনের মধ্যে হল ত্যাগের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
অন্যদিকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুরসহ চারজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- সাব্বির হাসান, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামান। রোববার আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান। এ বিষয়ে শুনানি শেষে আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগমের আদালত।
মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী। মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭নং কক্ষ ধর্ষণে অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতার টর্চার সেল।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় পূর্বপরিচিতির সূত্রে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদকে (বাদী) ও পরে ভুক্তভোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে আনেন অভিযুক্তরা। ভুক্তভোগীর স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন মূল অভিযুক্ত ও অন্যরা। সেখানে নিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
মারধরের পর ৩১৭ নম্বর কক্ষ থেকে ফিরে এসে ভুক্তভোগী নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান তারা। পরে সেখানে তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।
এদিকে ধর্ষণের পর ভুক্তভোগী নারীকে ভয়ভীতি ও তার স্বামীকে পুনরায় মারধর করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা। তবে ঘটনাটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ায় মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এছাড়া ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ। পুলিশ আসার খবরে হলের ডাইনিংয়ের রান্নাঘরের পেছনের তালা ভেঙে পালিয়ে যান অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর।
এ সময় রান্নাঘরে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১টা ১৭ মিনিটে মোস্তাফিজুরকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে ছাত্রলীগ কর্মী সাগর সিদ্দিকী, সাব্বির হাসান ও হাসানুজ্জামান। তবে রাতভর পালিয়ে থাকার পর রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সাভার মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেন মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মোস্তাফিজুরকে পালাতে সহয়তাকারীদের রাতেই আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
এ ঘটনার পর যুগান্তরের অনুসন্ধানে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
এছাড়া মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষ পরিদর্শনে গিয়ে মারধর ও মাদক সেবনের বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে। এর আগেও ৩১৭ নম্বর কক্ষে আশুলিয়া থানার একজন পুলিশ কনস্টবলকে আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সমঝোতায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ছাত্রলীগে অপরাধী ও আদর্শচ্যুত নেতাকর্মীদের কোনো জায়গা নেই। অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর একটি জঘন্যতম কাজ করেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সে একজন অপরাধী। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করব।
মূল অভিযুক্তকে পালাতে সহায়তা করার নির্দেশ প্রদানের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি শনিবার সকাল ৬টায় ঢাকায় গিয়েছি এবং রাত ১টায় ক্যাম্পাসে এসেছি। তাই সহায়তাকারীদের কারো সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগ নাই। ক্যাম্পাসে আসার পর প্রশাসন আমাকে অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করার কথা জানায়। সেজন্য আমি হলের সবাইকে ফোন দিয়ে তাদের ধরিয়ে দিতে বলেছি। ধর্ষকের কোনো দল নাই। এছাড়া শাহ পরানের সঙ্গে আমার কাল থেকে আজ পর্যন্ত যোগাযোগ হয়নি।
হলের কক্ষকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। হলটি অনেক বড়। এর পুরোপুরি খোঁজ রাখা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দ্রুতই পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host