ঢাকা ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
মো আব্দুল শহীদ সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলহাজ্ব মতিউর রহমান কলেজে নিয়োগ পরীক্ষায় অবৈধ অর্থ লেনদেনের দায়ে চাকুরি বঞ্চিত ৩ প্রার্থী উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ।
অভিযোগকারীরা হলেন, একই ইউনিয়নের ভৈষারপাড় গ্রামের উমর আলীর ছেলে ‘নৈশপ্রহরী’ পদের মোবারক হোসেন, একই গ্রামের সফর আলীর ছেলে ‘অফিস সহকারী’ পদের শাহজাহান মিয়া, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে ‘হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদের আল আমিন।
তারা সদর উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে এই অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কলেজে অবৈধ টাকার বিনিময়ে একাধিক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা চাকুরিতে নিয়োগ পাননি তাদের কাছ থেকেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ মশিউর রহমান, সভাপতি মতিউর রহমান ও স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন স্থানের ১৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পরে ৬টি পদে ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়।
একাধিক প্রার্থীর অভিভাবক জানান, চাকুরী দেয়ার নামে সকল পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে কলেজের প্রিন্সিপ্যাল মশিউর রহমান নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সাথে জড়িত আছেন স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। এই টাকার বিশেষ অংশ নিয়েছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান। কিন্তু নিয়োগে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রিন্সিপ্যাল মশিউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে কলেজের সভাপতি মতিউর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমের নাম প্রকাশ করে আসছেন প্রতিনিয়ত। চাকুরি বঞ্চিতরা তাদের দেয়া টাকা ফেরত চাচ্ছেন। কিন্তু কর্ণপাত করছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। বরং নিয়োগে টাকা লেনদেনের বিষয় ধামাচাপা দিতে আশ্রয় নিয়েছেন পুলিশের। সাধারণ ডায়েরি করেছেন অন্যান্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এই নিয়োগ পরীক্ষায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ১ জন, অফিস সহায়ক ১ জন, নৈশ প্রহরী ১ জন, নিরাপত্তা কর্মী ১ জন, আয়া ১ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ১ জন নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। পরে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় টাকার বিনিময়ে। নিয়োগে পরীক্ষার্থী শামীমা জাহান দিপা, মোবারক হোসেন, আবু সুফিয়ান, আল আমিন, শাহজাহান সহ অন্যান্য প্রার্থীর কাছ থেকে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারী ভৈষারপাড় গ্রামের ‘নৈশপ্রহরী পদের মোবারক হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত এই কলেজে নৈশ প্রহরী পদে ছিলাম। কিন্তু সুকৌশলে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। কতৃপক্ষের কাছে আমি টাকা ফেরত চাইলে সদর মডেল থানায় আমার বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের মামলা করেছে অধ্যক্ষ স্যার। আমরা বঞ্চিতরা শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছি।
একই গ্রামের ‘অফিস সহকারী’ পদের শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত অফিস সহকারী পদে চাকুরি করার পরও আমাকে স্থায়ীভাবে চাকুরির জন্য আবেদন করার সুযোগ দেননি অধ্যক্ষ স্যার। অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাকে চাকুরী না দিয়ে বেশি টাকা পেয়ে অধ্যক্ষ স্যারের দেশের বাড়ির লোকজনকে চাকুরী দিয়েছেন। টাকা ফেরত চাইলে সদর মডেল থানায় আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করে আমাকে হয়রানি করছেন।
জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের ‘হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদে আবেদনকারী আল আমিন বলেন, আমি আবেদন করার পরও চাকুরি পাইনি। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অন্যজনকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমার পাওনা টাকা ফেরত চাইলে অধ্যক্ষ স্যার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মতিউর রহমানকে দিয়ে আমাকে হুমকি দিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষ মশিউর রহমান বলেন, কলেজের নিয়োগ বিষয়ে সবকিছু গভর্নিং বডির সভাপতি মতিউর রহমান মহোদয় জানেন। আমি কিছুই বলতে পারবো না। অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে রেজুলেশন খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন রেজুলেশন খাতা মতিউর রহমান স্যারের বাসায়। কলেজে পুলিশ আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মতিউর রহমান স্যারের নির্দেশে ওদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, আমার কলেজে এসে বাইরের ছেলেরা অযথা ঝামেলা করে। টাকা চায়। আমিও কলেজে যেতে পারছি না অসুস্থ।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এই কলেজ এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েও চাকুরি দেয়া হচ্ছে না। এই নিয়োগ বাণিজ্যের তদন্তপূর্বক বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি আমাদের।
নিউজ টা পেইজে দেউকা
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech