ঢাকা ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২৪
হারুন রশিদ, ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
সিলেটের ওসমানীনগর তাজপুর ইউনিয়নের খাশিপাড়া গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পে মাকে নিয়ে বসবাস করছেন রিংকু গুন। সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর পেলেও ভাগ্যের দুর্গতি যেন কাটছে না রিংকুর। রিংকুর বয়স যখন মাত্র ৮ বছর তখন লিভার ক্যান্স্যারে আক্রান্ত হয়ে রিংকুর পিতা মনা গুন মৃত্যুবরণ করেন। দুটি ছেলে ও একটি মেয়েকে নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানুষের বাড়িতে বাড়িত দিন কাটিয়েছেন রিংকুর মা আরতী গুন।
রিংকুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আরতী গুনের বড় ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর ছোট ছেলে রিংকু ও মেয়ে লাভলীকে নিয়ে কোনমতে চলছিলো তার সংসার।
২০১৭ সালে বর্তমান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশীক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব শফিকুর রমান চৌধুরী’র ব্যাণার টানাতে গিয়ে গাছ থেকে পরে পায়ে আঘাত পান রিংকু। আলহাজ্ব শফিকুর রমানের নির্দেশে সিলেট এম এজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হয় রিংকুর চিকিৎসা। তার পায়ে রড লাগিয়ে দেন চিকিৎসকরা। মোটামুটি হাটতে পারলেও দৌড় অথবা ভারি কোন জিনিস বহন না করতেও নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তাই তেমন কোন ভারি কাজ করতে পারেন না রিংকু। সে যখন যেখানে ছোট-ছোট কাজ পায় সেই কাজের অর্থ দিয়ে কোন রকম চলে তার পরিবার যেন নুন আনতে পানতাফুরায়।
দুই বছর আগে মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর প্রদান করলে খাশিপাড়া গ্রামে একটি ঘর জুটে রিংকুর ভাগ্যে। পরিবারে কিছুটা আনন্দের আমেজ আসলে ও নতুন করে আবার নেমে আসে দুঃখ দুর্দশা রিংকুর বোন লাভলীর পেটে দুটি টিউমার দেখা দেয়। তখন তার সর্বোচ্চ দিয়ে অপারেশনেও বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় হয়। এরই মধ্যে বোন লাভলীর বিয়ে দিতে হয়। বিয়ের পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন রিংকুর মা। এদিকে রিংকুর দুই পায়ের হাড় ক্ষয় হয়েছে বলে চিকিৎসকদের মাধ্যমে জানতে পারেন সে। সাহায্য নিয়ে প্রথমদিকে চালিয়েছেন চিকিৎসা।
টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনে স্বাবলম্বী হতে দেড় বছর পূর্বে আশ্রয়ন প্রকল্পে থেকেই ধারদেনা করে ক্রয় করেন একটি গাভি। কিন্তু আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের পাশ থেকেই দিন দুপুরে গাভিটি চুরি হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখোঁজির পর গাভিটির সন্ধান পাননি তারা।
রিংকু ভারি কাজ করতে না পারায় গত ১ বছর আগে এনজিও থেকে লোন নিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা(টমটম) ক্রয় করেন। সেই টমটম চালিয়েই চলছিলো তাদের সংসার। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ও দুবেলা আহারের মাধ্যম ছিলো অটোরিকশাটি। ৪৬টি কিস্তির মধ্যে মাত্র ২৯টি পরিশোধ করেছেন। এরই মধ্যে চুরি হয় রিংকুর শেষ সম্বল অটোরিকশাটিও।
গত ৫ জুন গভীর রাতে খাশিপাড়াস্থ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর থেকে রিংকুর অটোরিকশা চুরি হয়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখোঁজির পর থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে ৬দিনেও মিলেনি অটোরিকশার সন্ধান। রিকশাটি না পাওয়ায় চোখের জল যেন থামছে না রিংকুর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপমা দাসের সাথে পরিবারসহ দেখা করে সরকারি সহায়তার আহবান জানান তারা। এসময় সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন ইউএনও।
বুধবার রিংকুর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, অবিরত কান্না করছে রিংকু ও তার মা আরতী। রিংকুর মা আরতীগুন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কি ভুল করেছি? আমরা জানি না। আমাদের সাথেই কেন বার বার এমন হয়? আমরা সহায়তা নিয়ে একটি গাভি ক্রয় করেছিলাম সেটিও রাখতে পারিনি। এখন শেষ সম্বল অটোরিকশাটিও চুরিহয় ঘর থেকে। এখন আমাদের উপার্জনের আর কোন রাস্তা নেই। কিভাবে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবো এই চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। রিংকুও ভারি কাজ করতে পারে না। আমার নিয়মিত ঔষধ ও ভাত খাওয়ার উপার্জনের শেষ সম্বলটিও আর নেই।
এসময় সরকারি অথবা স্থানীয়রা সহায়তা করলে আরো একটি নতুন অথবা পুরাতন অটোরিকশা(টমটম) ক্রয় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন রিংকু। তিনি স্থানীয় প্রবাসীদের উদ্যেশ্য করে বলেন, হয়তো আপনাদের দেয়া কিছু অর্থই হতে পারে আমাদের পরিবারের বেঁচে থাকার মাধ্যম।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য রাসেদুল হক বলেন, ব্যাটারী চালিত রিকশাটি উদ্ধারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech