বন্যা: সিলেটে কৃষি, মাছ ও রাস্তার ক্ষতি ৭৭৯ কোটির বেশি
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য, জেলার ৭৩৪ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে মঙ্গলবার ২৫৮ কেন্দ্রে ছিলেন ১২ হাজার ৯০৫ জন বন্যা দুর্গত মানুষ।

প্রকাশিত: ১১:১৮ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২৪

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>বন্যা: সিলেটে কৃষি, মাছ ও রাস্তার ক্ষতি ৭৭৯ কোটির বেশি</span> <br/> সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য, জেলার ৭৩৪ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে মঙ্গলবার ২৫৮ কেন্দ্রে ছিলেন ১২ হাজার ৯০৫ জন বন্যা দুর্গত মানুষ।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর পানি কমে আসায় বের হতে শুরু করেছে ক্ষতচিহ্ন। এর মধ্যেই রাস্তাঘাট, মৎস্য ও কৃষিতে ৭৭৯ কোটি ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। যা আরও বাড়তে পারে।

একই সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারাও প্রতিদিন ছাড়ছেন আশ্রয়কেন্দ্র।

মঙ্গলবার সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় পানিবন্দি রয়েছেন সাত লাখ ৮৯ হাজার ১৩১ জন। জেলার ৭৩৪ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২৫৮ কেন্দ্রে আছেন ১২ হাজার ৯০৫ জন।

এর আগে সোমবার সিলেট জেলায় পানিবন্দি ছিলেন আট লাখ ৩৩ হাজার ৬৫ জন; রোববার পর্যন্ত ছিলেন আট লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ মানুষ।

এ ছাড়া সোমবার জেলার ২৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ১৩ হাজার ১৫৪ জন। রোববার ৩১০ আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ১৯ হাজার ৭৩৮ জন। এর আগে শনিবার ছিলেন ২২ হাজার ৬২৩ জন; শুক্রবার ২৫ হাজার ২৭৫ জন ছিলেন।

কোরবানির ঈদের দিন ভোর থেকে সিলেটে ভারি বৃষ্টির সঙ্গে নামে উজানের ঢল। ফলে জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের পাশাপাশি বন্যা ছড়িয়ে পড়ে সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়।

কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের ফার্মেসি ব্যবসায়ী সবুজ চক্রবর্তী বলেন, “আমার দোকানে হাঁটুসমান পানি হয়েছিল। গত বুধবার দোকানে পানি উঠলে আজকেও (মঙ্গলবার) গোড়ালি পরিমাণ পানি রয়েছে দোকানে।“বন্যার পানির জন্য দুর্ভোগে রয়েছি। নদীর পানি কমছে একেবারে ধীর গতিতে। বাজারের রাস্তাঘাট থেকে পানি নামতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। বন্যায় বালাগঞ্জের অবস্থা খারাপ।”

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও স্থানীয় সাংবাদিক রুমেল আহসান বলেন, “বন্যার পানি ধীরে-ধীরে নামছে; আগের থেকে একটু কমেছে। কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী পিঠাইটিকর, বারোহাল, গয়াসী, ভেলকোনা, ছত্তিশ, উত্তর ইসলামপুরসহ উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি রয়েছে।”

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, “সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।“মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সিলেট শহর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”

সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, “সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় পাঁচ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।”

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিলেট নগরীর তিনটি ওয়ার্ডের কিছু স্থান ও রাস্তায় পানি রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত নগরীর পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ থেকে ১৫ জন করে মানুষ ছিলেন। মঙ্গলবার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আরও মানুষ চলে গেছেন। তবে সিটি করপোরেশনের ত্রাণ ও রান্না করা খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, “সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে; তবে বন্যার পানি ধীর গতিতে নামছে। প্রতিদিনই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছেন বন্যার্তরা। প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।”

৭৭৯ কোটি ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকার ক্ষতি

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যায় সিলেট নগরীর ২৫০ কিলোমিটার রাস্তাঘাটে পানি উঠেছিল; এতে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার এখনও পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করিনি।”

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানান, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ২০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বন্যার পানিতে ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক।তিনি বলেন, “বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকায়। এর মধ্যে আমন ধান চাষিদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে; সামনে আরও দেওয়া হবে।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম ফারুক হোসেন জানান, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। তবে সড়কের ক্ষতির এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, “গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি সড়কে তাৎক্ষণিক কাজ করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। সড়কগুলো পুরোপুরি সংস্কারের জন্য ডিপিপি চূড়ান্ত করে পাঠানো হবে।”

অন্যদিকে সড়ক ও সেতু বিভাগের সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, “বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক হিসেবে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি। গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার দুটি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হলে দ্রুত সংস্কার কাজ করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।”

সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, “বন্যায় সিলেট জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দিঘী-খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।”

তিনি আর জানান, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জকিগঞ্জে। উপজেলার ছয় হাজার ৭৫৫টি পুকুর-দিঘি-খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর সিলেট কম ক্ষতি হয়েছে সিলেট সদর উপজেলায়; ৩১ লাখ টাকার।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর