তাহিরপুরে সরকার নিধারিত হারে খাস কালেকশনে রাজস্ব বৃদ্ধি, হাজারো শ্রমিকের মনে স্বস্থি

প্রকাশিত: ১১:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২৪

তাহিরপুরে সরকার নিধারিত হারে খাস কালেকশনে রাজস্ব বৃদ্ধি, হাজারো শ্রমিকের মনে স্বস্থি

 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও ঘাগড়া-লাউড়েরগর এবং পাটলাই কোডগাড়ি নৌকাঘাট ইজারা আদায়ের জন্য খাস কালেকশনের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত হারে টোল আদায় করছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। এতে করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকার বাহাদুরের। পাশাপাশি হাজারো নৌ-শ্রমিক এবং বালু-পাথর ব্যবসায়িদের মনে স্বস্থি ফিরে এসেছে।

গতকাল (২৯ জুন) শনিবার সরেজমিন ঘুরে খোজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসন নৌকাঘাট থেকে সরকার নিধারিত হারে টোল আদায় করছে এবং আদায়কৃত টোল সরকারী কোষাগারে জমা করে সরকারের রাজস্ব বাড়াচ্ছে।

সম্প্রতি ঐসমস্ত নৌকাঘাটের ইজারা মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, তাই ইজারার জন্য দরপত্র আহবানের প্রস্তুতি চলছে । কিন্তু বিগত অর্থ বছরে আগ্রহী উপযুক্ত দরদাতা না পাওয়ায় এবং মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এসব নৌকাঘাটের ইজারা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে খাস কালকশনের মাধ্যমে সরকার নিধারিত হারে টোল আদায় করা হচ্ছে । তাহিরপুর উপজেলার অন্যতম প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ বালু-পাথর মিশ্রিত কোয়ারী ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌকাঘাট তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে খাস কালেকশনের জন্য দেওয়া হয়েছে। তাই উপজেলা প্রশাসন
নদীর উভয় পাশে নৌকাঘাটের টোল চার্ট টাঙ্গিয়ে টোলচার্টে প্রদত্ত হার মোতাবেক শুধুমাএ ঘাট ব্যবহারকারী মালবাহী ভলগেট,বাজ, দেশীয় বড় নৌকা, ছোট নৌযানের নিকট থেকে রশিদের মাধ্যমে টোল আদায় করা হচ্ছে।

উক্ত নৌকাঘাট ব্যবহারকারী কয়েকটি পরিবহন নৌকার সুকানীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, ঘাট ব্যবহারকারী নৌযানসমূহ শুধুমাত্র টোলচার্টে উল্লেখিত হারে কোন রকম জোর জবরদস্তি ছাড়াই রশিদের মাধ্যমে টোল আদায় করা হচ্ছে।

যাদুকাটা নদীর উভয় পাশে কার্গো বা দেশীয় বালু পাথর ও অন্যান্য সকল ধরনের মালামাল বহনকারী যাত্রীবাহী ছোট নৌকা (অনুর্দ্ধ ২০০ থেকে টাকা থেকে মালবাহী ভলগেট/কার্গো/বার্জ উর্দ্ধে ৯০০ টাকা হারে টোল আদায় করা হচ্ছে।

ঘাগড়া-লাউড়েরগড় ঘাটে চলাচলকারী বালুবাহী সততা নৌ পরিবহনের সুকানী ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা আইনুল হক বলেন, আমার দেশীয় মালবাহী বড় নৌকা আমার কাছ থেকে রশিদের মাধ্যমে ৪৫০ টাকা টোল নিয়েছে। যে টাকা টোল দিয়েছি, তা সরকার নির্ধারিত টোল। খাস কালেকশনে অতিরিক্ত টোল এখন পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে না। সুহালা গ্রামের নৌ পরিবহনের সুকানী ওমর ফারুক বলেন, আমার ১শত মেঃ টনি দেশীয় ছোট নৌকা আমি ২০০ টাকা টোল দিয়েছি। এই টোল আদায়ে শ্রমিক এবং ব্যবসায়িদের মনে স্বস্থি ফিরে এসেছে। টোল আদায়ে কোন রকম জোর জবরদস্তী করা হচ্ছে না। একই চিত্র উপজেলার খাস কালেকশনকৃত পাটলাই নৌঘাটসহ অন্যসব নৌঘাট গুলোতে।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর পয়েলা বৈশাখ থেকে গত দেড় মাসে ঘাগড়া -লাউড়েরগড় নৌকাঘাট থেকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে আদায়কৃত টোল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে । যাদুকাটা নদীর ঘাগড়া-লাউড়েরগড় ঘাট টোল চার্ট অনুসারে সরকারের নির্ধারিত হারে তাহিরপুর সদর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে সুশৃংখলভাবে রশিদের মাধ্যমে টোল নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি বলেন, সরকারী নিয়মনীতি অনুসারে উপজেলা প্রশাসন খাস কালেকশনকৃত নৌঘাটগুলো থেকে টুল আদায় করছে। ফলে সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নৌ শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের জোর জবরদস্তি থেকে রেহাই পেয়েছে আমি মনে করি।

নৌ-শ্রমিক মোবারক হোসেন বলেন, একটি অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট চক্র সরকার বাহাদুরকে টোল না দিয়ে নৌপথে চলাচল করতে চায়, রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে তাদের পরিবহনে নির্ধারিত টোল আদায় করতে চাইলে নামে-বেনামে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ,সভা সমাবেশ করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মরিয়া।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন বলেন, ঘাগড়া-লাউরেরগড় নৌকাঘাট মামলা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এসব নৌকাঘাটে সরকারের নিয়মনীতি অনুযায়ী প্রশাসনের লোকজন দিয়েই খাস কালেকশন করা হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের সিন্ডিকেট নেই। ঐ মামলা গুলো নিষ্পত্তি হওয়ার পর ইজারা দেওয়া হবে।

তাহিরপুর নৌপথে টোল আদায়ের নামে অতিরিক্ত টোল বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, নদী পথে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি জানা নেই। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর