ওসমানীনগরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

প্রকাশিত: ১০:১৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২৪

ওসমানীনগরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

 

হারুন রশিদ- ওসমানীনগর প্রতিনিধি:

সিলেটের ওসমানীনগরে দুর্গোৎসব শেষে বছর ঘুরে আবার ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখো ভক্তকে ভারাকান্ত করে বিদায় নিলেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
রবিবার সন্ধ্যায় দুর্গা মা কি, জয়। মহামায়া কি, জয়। একের পর এক এমন জয়ধ্বনি, ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। বিকেলে বিজয়া দশমীর পূজা অর্চনা ও সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দুপুরের পর থেকে মণ্ডপগুলোর প্রতিমা যানবাহনে করে উপজেলা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু প্রতিমা উপজেলার সাদিখাল ও বুড়ী নদীতে আনা হয়। প্রতিমাবাহী নৌকা ছাড়াও ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনসমূহের নৌকা যুগে নদীতে ভাসানো হয়। এ সময় অনেক ভক্ত কান্নায় ভেঙে পড়েন। সৃষ্টি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের।
সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে নামে ভক্তদের ঢল। এসময় ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, মন্ত্রপাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, নাচ, সিঁদুর খেলা হয়। মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। ধান, দুর্বা, মিষ্টি আর আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা।
একদিকে বিদায়ের সুর, অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। সকালে দেওয়া হয় দর্পণ ঘট বিসর্জন। এমনই আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন স্বামীগৃহে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সব অপশক্তির বিনাশ হবে। শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে যাবে সবখানে।
প্রথা অনুযায়ী, প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে শান্তির জল মঙ্গলঘটে নিয়ে তা হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তির জল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমার সম্মুখে রেখে পূজা করা হবে। দৈনন্দিন জীবনের বাঁধা হিসেবে আবদ্ধ বাঙালি আসলে পূজার চার দিনে মুক্তির ছোঁয়া পায়। সারা বছরে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে ডানাগুলো এদিক-ওদিক থেকে বেরিয়ে আসে। খুশিয়াল মেজাজে ভর করে তাদের চার দিন অবাধ ওড়াউড়ির সমাপ্তি হলো রোববার। আবার তাদের গুটিয়ে যাওয়ার পালা। এবার ফিরে চলা প্রতীক্ষার কাছে। তবে মনের মধ্যে অবিরাম ঢাকের বাদ্যি জানান দিয়ে যায় আসছে বছর আবার হবে।
পূজা উপলক্ষে সাদিখাল ও বুড়ী নদীর দুই পাড়সহ পুরো এলাকাজুড়ে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শান্তিপূর্ণভাবে এ বছরের মতো শেষ হয় শারদীয় দুর্গোৎসব।
ওসমানীনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চয়ন পাল বলেন, ওসমানীনগর উপজেলায় ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় ও শান্তিপুর্ণভাবে ৩৯টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দূর্গোৎসব অনুষ্টিত হওয়ায় ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন,থানা পুলিশ,সেনা ক্যাম্প সহ এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণকে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন শত ঐতিহ্যের ধারক বাহক ওসমানীনগর উপজেলায় সম্প্রীতি বন্ধন কখনও কেহ বিনষ্ট করতে পারেনি এবং এই ঐতিহ্য আমাদের রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দ আজীবন ধরে রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। এখানে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা রয়েছে কিন্তু কোন প্রতি হিংসা নেই।
উল্লেখ্য, এ বছর ওসমানীনগর উপজেলায় মোট ৩৯টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৪ টি আজ ২৫টি প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর