ঢাকা ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
ছাতক প্রতিনিধি
ভারত চুনা পাথর না দেয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না ছাতক সিমেন্ট কারখানা। দেশের প্রথম উৎপাদনকারী প্রতিষ্টান সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক সিমেন্ট কারখানা ১৯৩৭ সালে ছাতকের সুরমার নদীর তীরে আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট নামে পূর্নাঙ্গ একটি সিমেন্ট কম্পানী স্থাপিত হয়। কারখানাটি ১৯৪১ সালে বাণ্যিকজভাবে সিমেন্ট উৎপাদন শুরু করে। উৎপাদনের শুরু থেকেই কারখানার নিজস্ব টিলা থেকে মাটি সংগ্রহ করছে।
এছাড়াও সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল চুনা পাথর ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে সিমেন্ট তৈরির পর বাজারজাত করা হতো। ছাতক সিমেন্ট কারখানাটি বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ে আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন বিসিআইসির একটি প্রতিষ্ঠান। দেশের এক নাম্বার ব্রান্ড হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ডায়মন্ড ব্রান্ড সিমেন্ট চালু রাখতে বিভিন্ন সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিকবার বিয়েমারী প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২০ সলের মার্চ মাসে সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ভারত চুনা পাথর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে কারখানায় চুনা পাথরের অভাবে সিমেন্ট উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও ভারত সরকার কেএলএমসির নবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে চুনা পাথর আসা বন্ধ থাকে। পুরনো পদ্ধতির এই সিমন্টে কারখানার উৎপাদন অনেকটাই ব্যয়বহুল হয়ায় এটির উৎপাদন বাড়াতে ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রুপান্তরকরণের জন্য ২০১৬ সালে ৬৬৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিসিআইসি। পরে সেই প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয় ৮৯০ কোটি টাকা সর্বশেষ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪ শত ১৭ কোটি টাকা। ড্রাই প্রসেস প্রকল্পের কাজের মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্টান হিসাবে চিনের নাং জি সি হোপ নামের একটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের কারখানায় এই আধুনিকয়ানের প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চীনা ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরুর পর সংক্রামক ব্যাধি করোনা ভাইরাসের কারণে এক বছরেরও অধিক সময় ধরে কারখানার নতুন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে। এই কারখাটি চালু হলে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ক্লিংকার উৎপাদনের পাশাপাশি ৫০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদন করা যাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। আধুনিক প্রযুক্তির কারখানাটি চালু করতে ৩ থেকে ৪ শতাধিক স্থায়ী শ্রমিক কর্মচারী লাগবে বলে জানা গেছে। কিন্তু চুনা পাথর সরবরাহে ভারতের অসহযোগিতার কারণে এখনো উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এই বিলম্বের কারণে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
ছাতক সিমেন্ট কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. আখতারুজ্জামান দ্রুত উৎপাদন চালুর দাবি জানিয়েছেন।
ছাতক সিমেন্ট কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৯২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়ে চীনের নাং জি সি হোপ কোম্পানি ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরের কাজ শুরু করে। তবে পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। বর্তমানে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কারখানার নতুন অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে রোপওয়ে, ক্রাশার, প্রি-হিটার, ভার্টিক্যাল রোলার মিল, ক্লিংকার সাইলো, প্যাকিং প্ল্যান্ট, ১০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। তবে পাঁচ কিলোমিটার রোপওয়ে সম্প্রসারণে ভারতের অসহযোগিতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। নতুন প্ল্যান্ট চালু হলে প্রতিদিন দেড় হাজার টন ক্লিংকার উৎপাদন করা সম্ভব হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা। পাশাপাশি ৫০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech