বিয়ানীবাজারে সড়কের করুণ অবস্থা ॥ জনদুর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ৩:২৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৮

বিয়ানীবাজারে সড়কের করুণ অবস্থা ॥ জনদুর্ভোগ চরমে

বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
সিলেট-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম ও চন্দরপুর-প্রমথ নাথ দাস (কলেজ রোড) সড়ক দুটি বর্তমানে যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলাবাসীর যাতায়াতের প্রধান দুটি সড়কের এমন বেহাল দশায় ভেঙ্গে পড়েছে বিয়ানীবাজারের সড়ক যোগযোগ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন থেকে প্রধানতম সড়ক দুটির বিপর্যস্ত এ করুণ অবস্থা বিদ্যমান থাকলেও তা থেকে উত্তরণে কার্যকর পদপে নেননি কিংবা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসনের সংশিষ্ট দায়িত্বশীলরা। এতে করে ভূক্তভোগী জনসাধারণকে দীর্ঘদিন থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে ভূক্তভোগী জনসাধারণের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে স্থানীয় এমপি শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ’র নিজ উপজেলার প্রধান এ দুটি সড়কে বছরের পর বছর থেকে বিরাজমান করুণ চিত্র মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ জনগণ কিংবা সচেতন মহল। সচেতন মহলের অভিমত, বিয়ানীবাজারের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন শিামন্ত্রী নাহিদ এমপি।
বছর ঘুরে বছর আসে কিন্তু বিয়ানীবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়না। উল্টো বৃদ্ধি পায় জনদুর্ভোগ, সড়কের ছোট ছোট গর্তগুলো বড় বড় আকার ধারণ করে, বৃষ্টির জলে কাঁদায় একাকার হয়ে বিয়ানীবাজারবাসীর সড়ক যোগাযোগের দুঃখকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সর্বসাধারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার এই বেহাল দশায় দুর্ভোগ পোহালেও এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝে কার্যত কোন প্রতিক্রিয়া নেই! গত অক্টোবরে চারখাই-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম ও চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার কলেজ রোড সড়ক সংস্কারের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে টেন্ডার হয়। টেন্ডার শেষে এ দুটি সড়কের সংস্কার কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয়। উদ্বোধনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংশিষ্টদের বদৌলতে যতটুকু ছড়িয়েছে তার সিকি ভাগও কাজ হয়নি এ পর্যন্ত! এ সড়ক দুটির সংস্কার কাজের চরম ধীরগতি পরিলতি হচ্ছে দীর্ঘ ক’মাস থেকে। ফলে আবারও চলে আসা বৃষ্টি মৌসুমে ভাঙ্গাচোরা রাস্তাগুলোয় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কিন্তু সংশিষ্ট জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কর্তাদের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই!
স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বর্তমান সরকারের একজন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে প্রায় ১০ বছর ধরে মতায় রয়েছেন। তিনি মতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্যও মনোনীত হয়েছেন। সরকার ও মতাসীন দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকার আপামর জনগণকে যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে কার্যত কোন সাফল্য অর্জন করতে পারেননি এ পর্যন্ত। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে শিাত্রে সহ অন্যান্য বিভিন্ন েেত্র যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধন করলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষত এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক আলীনগর-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম এবং চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার প্রমথ নাথ (কলেজ রোড) সড়কের কাংখিত উন্নয়ন সাধনে রীতিমতো উদাসীন কিংবা ব্যর্থ হয়েছেন বলে সচেতন মহল মনে করেন। শুধু সংসদ সদস্য নয় এ উপজেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সংশিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগংও এেেত্র চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
বিগত ক’বছর থেকে সংস্কারের অভাবে যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়া চারখাই-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম সড়ক ও বিয়ানীবাজার কলেজ রোড-চন্দরপুর সড়ক সংস্কারের জন্য গত বছরের শেষের দিকে উদ্যোগ নেয়া হয়। গত অক্টোবরে এ দুটি সড়ক সংস্কারের জন্য পৃথক পৃথকভাবে টেন্ডার আহবান করা হয়। টেন্ডার শেষে সংশিষ্ট ঠিকাদাররা কার্যাদেশ পাওয়ার পর যথারীতি কাজ শুরু করে। দুটি সড়কের সংস্কার কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিগণ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি সড়কের সংস্কার কাজে যে ধরনের গতি থাকা দরকার তার সিকি ভাগও গতি নেই কাজে। সড়ক দুটির ২০ ভাগ সংস্কার কাজও এখনও সম্পন্ন হয়নি। কয়েকটি স্থানে সংস্কার কাজ শুরু করে সড়কের কিছু অংশ খুড়াখুড়ি করা হয়। বর্তমানে সে কাজও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় আবারও চলে এসেছে বৃষ্টি মৌসুম। ফলে একদিকে যেমন সড়কের ভাঙ্গাচোরা গর্ত অন্যদিকে যোগ হয়েছে সংস্কার কাজের জন্য খুড়াখুড়ির গর্ত। সবমিলিয়ে বর্তমানে এ সড়ক দুটির অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। ফলে জনদুর্ভোগ পূর্বের চেয়ে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে কাজের গতি বাড়ানোর কথা সেখানে উল্টো কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে জনদুর্ভোগের অসহনীয় মাত্রা চরম রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশিষ্টদের কোন মাথাব্যথা নেই। তাই কার্যদেশ পাওয়া ঠিকাদাররা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া যে কয়টি স্থানে কাজ শুরু হয়েছে সেখানে সংশিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে শিডিউলের চেয়ে নিম্নমানের কাজ করারও অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি স্থানে স্থানীয় জনগণ নিম্নামানের কাজের েেত্র বাঁধা দেয়ায় ইতিপূর্বে এ নিয়ে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহানো সহ কাজ বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পৌর শহরের খাসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে চলমান কাজে শিডিউল বহির্ভূতভাবে নিম্নমানের কাজের অভিযোগে স্থানীয় কাউন্সিলর আকছার উদ্দিনসহ এলাকাবাসী বাঁধা প্রদান করেন। এতে করে ঐ স্থানের সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তেেপ পুণরায় কাজ শুরু হয়। অন্যদিকে কলেজরোড-চন্দরপুর সড়কের তিলপারায় চলমান সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সহ এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দেন। সেখানে বালুর পরিবর্তে রাস্তায় পলিমাটি ব্যবহারের অভিযোগ উঠে। ঐ ঘটনাও সংশিষ্ট প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তেেপ পুণরায় কাজ শুরু হয়। তবে দুটি সড়কেই যে ভাবে দ্রুতগতিতে কাজ হওয়ার কথা তা না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। সড়ক দুটি দিয়ে যাতায়াতকারী দুর্ভোগ পোহানো জনগণ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংসদ সদস্যের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করছেন অশীল ভাষায় গালাগালির মাধ্যমে। যা এখন অপেন সেক্রেট। এ নিয়ে অতিষ্ঠ জনসাধারণ যখন এমপি মন্ত্রীকে অশীল ভাষায় গালি দেয় তখন কট্টর আওয়ামী লীগাররাও পাশে বসে নীরবে সায় দিতে হয় বাস্তবতার বদৌলতে।
উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন, শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিগত ১০ বছরে শিাসহ বিভিন্ন েেত্র যুগান্তকারী যে উন্নয়ন সাধন করেছেন তা অনেকাংশে ¤ান হয়ে যাচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যত ব্যর্থ হওয়ার কারণে। তাদের অভিমত, এ বিষয়টি আগামী জাতীয় নির্বাচনে বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিয়ানীবাজারের প্রধান দুটি সড়কের সংস্কার কাজ যাতে জরুরী ভিত্তিতে সুষ্টুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য শিামন্ত্রী নাহিদ’র বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর