থামছে না নদীতে চাঁদাবাজি, নৌ-ধর্মঘটের কর্মসূচী

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫

থামছে না নদীতে চাঁদাবাজি, নৌ-ধর্মঘটের কর্মসূচী

ছাতক প্রতিনিধি
সুরমা নদীতে বিভিন্ন ঘাটে অবৈধ চাঁদাবাজি কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলকারী নৌযানে অবৈধ এবং অতিরিক্ত চাঁদাবাজির কারনে অতিষ্ট নৌযানের হাজার হাজার শ্রমিক-মালিকরা। এসব চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তারে আবেদন নিবেদন করেও কোন সুফল মিলছে না। যে কারনে নৌযান শ্রমিকদের মাঝে চরম-ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার বিকেলে ছাতকের সুরমা নদীর তীওে নৌডান শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
এসময় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে নৌপথে অতিরিক্ত এবং অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে সারাদেশে নৌ-ধর্মঘটের কর্মসূচী পালন করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে অবৈধ চাঁদাবাজদের হামলায় নৌযানে সুকানি আরজ মিয়াকে পিঠিয়ে হত্যো করে স্থানীয় চাঁদাবাজরা। ওই ঘটনায় মামলা হলেও নদীতে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। দ্রুতগামীর চলন্ত নৌযান থেকে নিয়মিতই চলছে চাঁদাবাজি। বৃটিশ আমল থেকেই ছাতক ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। এখানে বালু-পাথরের ব্যবসার জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত কার্গো-জাহাজ ও ইঞ্জিন চালিত ষ্টিল বডি বাল্করহড নৌকা ছাতকের সুরমা নদীতে অবস্থান করে। এসব নৌযান গুলো বালু-পাথর নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রওয়ানা হলে ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন নামে-বেনামে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌযানের মাষ্টার-সুকানি ও ষ্টাফদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মোবাইল, নগদ টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এসব অপরাধের বিষয়ে স্থানীয় নৌপুলিশের সহায়তা চেয়েও তেমন কোন সুফল পাচ্ছে মিলছে না।
এছাড়াও কার্গো-জাহাজ ও ইঞ্জিন চালিত ষ্টিল বডি বাল্কহেড গুলোতে একাধিক স্থানে হিজরাসহ অবৈধ চাঁদাবাজরা জোর পূর্বক ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে।
বাংলাদেশ কার্গো-ট্রলার বল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের ছাতক শাখার সাধারন সম্পাদক এনামুল হক এলেমান বলেন, আমরা সুরমা নদীতে ঘাটে ঘাটে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ বাহিনীর সাথে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও কোন লাভ হয়নি। সংগঠনের জেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধে ১২ দফা দাবি উল্লেখ করে আমরা ইতিমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরসহ জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন থানায় চিটি দিয়েছি। প্রশাসনের সাথে এবিষয়ে আমাদের আলোচনা হলেও কোন সুরাহা হয়নি।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বেপারী বলেন, নদীতে ২টি কারনে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলা ভিত্তিক ইজারাটা স্থল ভাগের ইজারা, এটি নদী পথে দেওয়ার কারনে অবৈধ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে।
এছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ইজারা প্রদানে টাকার মাত্রা অতিরিক্ত অসম প্রতিযোগিতার কারনে নৌযান শ্রমিক-মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সরকারের এসম প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএ এর ছাতকের ইজাদার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে সোহাগ আহমদ বলেন, নদীতে নিয়ম মতোই সরকার নির্ধারিত হারেই চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। কখনও নৌযান থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়না। অনেক সময় নিয়মের চেয়েও কম চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।
ছাতক নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, ছাতক অঞ্চলে কোন অবৈধ চাঁদাবাজি নেই। কেউ অভিযোগ অবৈধ চাঁদাবাজি করলে এবিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌপুলিশ এসব অপরাধ বন্ধে যাথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কয়েকজন ডাকাতকে নৌপুলিশ আটক করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর