টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ পিআইসি কমিটির
বাঁধের কাজের ধীরগতিতে ছাতকের কৃষককুলে শঙ্কা

প্রকাশিত: ৬:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ পিআইসি কমিটির</span> <br/> বাঁধের কাজের ধীরগতিতে ছাতকের কৃষককুলে শঙ্কা

লুৎফুর রহমান শাওন, ছাতক
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে অনেকটা ধীর গতিতেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) প্রকল্প গুলোর কোথাও ৭০ ভাগ, আবার কোথাও ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিছু এলাকায় বাঁধের ঘাস সংগ্রহ করতে ভোগান্তি পড়েছেন পিআইসি কমিটির সদস্যরা। এসব প্রকল্পের কয়েকটি কাজ দৃশ্যমান হলেও অধিকাংশ বাঁধের কাজের গতি কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পিআইসি কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, কাজ শুরুর পর ১ম কিস্তির মাত্র ২৩ ভাগ টাকা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বাঁধ নির্মানের জন্যে ২য় কিস্তির টাকা দ্রুত পরিশোধ করা জরুরী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র মতে, কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ইং অর্থ বছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন হাওর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গন বন্ধ করন/মেরামতের জন্য ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত উপজেলায় পিআইসি বাস্তবায়ন কমিটির হিসেবে গড়ে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ২৮টি প্রকল্পের অধীনে বোরো ফসল রক্ষার জন্য উপজেলার নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, দক্ষিণ খুরমা ও সিংচাপইড় ইউনিয়নে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
রোববার সরজমিনে দিনভর হাওরের বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় দিনমজুর ও কৃষকরা নাইন্দার হাওর, মাছুখাল, ডেকার হাওর, মির্জাখাল ও কুড়িবিল এর ক্লোজারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাঁধ গুলোতে কেউ ড্রেসিং, কেইবা ম্লোপিং আবার কেউ ঘাস লাগিয়ে পানি স্প্রে করছেন। তবে বেশ কয়েকটি নির্মানাধীন বাঁধের আশাপাশে ঘাস না থাকায় পিআইসির প্রকল্পের লোকজন বেশ কষ্টে পড়েছেন।
এলাকার কৃষকরা বলছেন, স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিয়মিতই প্রকল্পের কাজ তদারকি করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিশাল আকৃতি ডেকার হাওরের বাঁধটি বোরো ফসল রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হাওরটি ছাতক উপজেলা ছাড়াও দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় বাঁধের পাশাপাশি এটি ক্লোজার হিসেবে পরিচিত। মুলত এটির মুখ দিয়েই বন্যার পানি প্রবেশ করায় বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ১নং পিআইসি কমিটির সদস্য আবদুর নুর বলেন, এখানে মাটির কাজ শেষে স্লোপিং কাজ চলছে। আশাপাশের এলাকায় ঘাস না পাওয়া কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
২৩নং পিআইসির সভাপতি নোয়ারাই ইউনিয়নের কচুদাইড় এলাকার বাসিন্দা বদরুল আলম বলেন, আমার প্রকল্পের মাটির কাজ শেষ। এখন ড্রেসিং ও স্লোপিং এর কাজ চলছে। এরপর বাঁধে ঘাস লাগানো হবে। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, আরেকটি কিস্তির টাকা যেন পরিশোধ করা হয়।
জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১৬নং পিআইসির বুকার ভাঙ্গা-চেচান প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কমিটি গঠন শেষে কার্যাদেশ পাওয়ার পর হাওরে বাঁধের কাজ দ্রুত গতিতেই চলছে। এখানে বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে স্লোপ ও ড্রেসিং এবং ঘাস লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে।
একই ইউনিয়নের রাউলি গ্রামের বাসিন্দা ১৮নং পিআইসির প্রকল্পের সভাপতি জাবের আহমদ তইমুছ বলেন, আমার মাটির কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ড্রেসিং এর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঘাস লাগানোর কাজও শেষ হবে।
২৫নং পিআইসির সাহেব খাল বাঁধ নির্মান প্রকল্পের সভাপতি মো.কামাল উদ্দিন বলেন, আমার মাটির কাজ শেষ, শুধু ঘাস লাগানোর কাজ বাকি। ঘাস অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করে পানি আনতে হবে। আমরা মাত্র একটি বিল পেয়েছি, কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত আরেকটি কিস্তির বিল পরিশোধ করলে কাজের সুবিদা হবে।
উপজেলা ‘হাওর বাঁচাও আন্দেলন’ কমিটির সাধারন সম্পাদক শাহ্ মো.আখতারুজ্জামান বলেন, পিআইসি গুলোর হিসেব অনুযায়ী গড়ে বাঁধের ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে। হাওরে কৃষকের কষ্টের ফসল রক্ষায় পিআইসি কমিটি আন্তরিকতার সহিত কাজ করলেই যথাসময়ে নিশ্চিন্তে বোরো ফসল গড়ে তুলা সম্ভব হবে।
পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও কাবিকা কমিটির সদস্য সচিব মো.মাসুম চেীধুরী বলেন, নিয়মিতই পিআইসি প্রকল্পের বাঁধ নির্মান কাজ মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী সব কয়টি প্রকল্পের গড়ে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সবকটি বাঁধের কাজ শেষ করতে পারবো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর