ঢাকা ২০শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
মো. আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের আস্থাভাজন এবং স্থানীয়ভাবে ‘লিয়াজু পার্টির অন্যতম নেতা’ খ্যাত শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান ও এনজিও কর্মী আজিজুর রহমানের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। মূলত, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হতে দলীয় ফরম কেনায় তাদের উপর ক্ষোভের কারণ বলে জানা গেছে।
শাহজাহান ও আজিজকে আওয়ামী লীগের দোসর দাবি করে নেতৃবৃন্দ জানান- একটা সময় ওই দুইজন বিএনপির নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যখন বিরোধী রাজনীতি দমনে হামলা-মামলা ও ধরপাকড় শুরু করে, তখন তারা খোলস বদলাতে থাকেন। মামলা কিংবা গ্রেফতার এড়াতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ক্যামেরাবন্দিও হয়েছেন।
তারা বলেন, ওই দুই নেতা উপজেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে ছিলেন। অনেক সময় তারাই দলকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। জেলা পর্যায়ে সব রকম দলীয় সমন্বয় বজায় রাখতেন। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন ব্যবসায় বাণিজ্যেও যুক্ত ছিলেন। এখন ৫ আগস্টের পর আবার তারা দলীয় তৎপরতা শুরু করে এখন আহ্বায়ক হওয়ার চেষ্টা করছেন, যা গ্রহণযোগ্য নেয়।
জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান, শফিকুর রহমান ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আজিজুর রহমান দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরদের সাথে লিয়াজু করে বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ আহমদকে জামালগঞ্জ উপজেলা খেয়াঘাটের লীজ পাইয়ে দেন।
পরবর্তীতে যখন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও রেজাউল করিম শামীমের মধ্যে দলীয় গ্রুপিং শুরু হয়, তখন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা খেয়াঘাট পারভেজ আহমেদ এর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আহ্বায়ক প্রার্থী শফিকুর রহমান তার ব্যবসায়িক পার্টনার শাহ মোহাম্মদ শাহজাহানদের লীজ দেওয়া হয়েছে।
তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সক্রিয় কর্মী হওয়ার পর খেয়াঘাট শফিকুর রহমান এবং শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান গ্রুপ লীজ পান। মো. আজিজুর রহমান এবার জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক প্রার্থী।
তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়- আজিজ এনজিও সংস্থা থেকে সদ্য অবসর গ্রহন করে পূণরায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিগত ১৬/১৭ বছর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে উনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোন ভূমিকা ছিল না। বরং ৫ই আগস্ট পূর্ববর্তী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আজিজুর রহমানের আপন ভাই জিয়া মেম্বার, সাইদুর ও আপন চাচাতো ভাই জামালগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল খায়ের দেশীয় অস্ত্রসহ হামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজে যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, গত ২৩ জুন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি ও আলোচনা সভাসহ ৫ আগস্টের আগে শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান ও মো. আজিজুর রহমান দোসরদের ছত্রছায়ায় থেকে ভাগ ভাটোয়ারা খেয়েছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন আজিজুর রহমানের তিন ভাই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর এখন তারা উপজেলা বিএনপির পছন্দের আসনে অধিষ্ঠিত হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান ছিলেন সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন অনুসারী এবং উনার চাচাতো ভাই যুবলীগ সভাপতি আবুল খায়ের ছিলেন রেজাউল করিম শামীম অনুসারী।
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ার অনেক ভিডিও ফুটেজ ফেইসবুক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কারণে শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান আহ্বায়ক প্রার্থী হয়েও ব্যর্থ হবেন জেনে শফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করার জন্য জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। শফিকুর রহমান শাহজাহানের ব্যবসায়িক অংশীদার।
সাচনাবাজার ইউপি সদস্য কাচা মিয়া বলেন, ‘শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান ও শফিকুর রহমান বিএনপি করে। তবে স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের সাথে লিয়াজু করেছে।’
দোর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওয়াহেদ আলী আফিন্দি বলেন, জামালগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ঝুনু মিয়া ও তার পরিবার মূল বিএনপি। আওয়ামী লীগ আমলে তারা হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। তবে শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান ও শফিকুর রহমান এরাও বিএনপি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারি তারাই হবেন। আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের কর্মসূচিতে শাহজাহানের যে ছবি দেখেছেন গেলে যাইতেও পারে। তাদের সাথে বসতেও পারে।
বেহেলী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলম মিয়া বলেন, আমি বিএনপির একজন সাধারণ কর্মী। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে পরিবার পরিজন ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়িয়েছি। এখন দেখছি যারা আওয়ামী লীগ দোসরদের ছত্রছায়ায় ছিল। তারাই এখন বিএনপির বড় নেতা। শুনতেছি আগামী ২৪ তারিখ জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হবে।
ভীমখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ধন মিয়া বলেন, আমি জিয়া আদর্শের সৈনিক। রাজনীতির শুরু থেকেই বিএনপি করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একসময় শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান বিএনপি করতেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে মাঠে ছিলেন না। এখন আবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। দলের দুঃসময়ে আজিজুর রহমান এনজিও সংস্থায় চাকুরী করতেন। তিনিও এখন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। তারা দুজনেই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক যুগ্ম আহ্বায়ক প্রার্থী।
জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মুরাদ মিয়া বলেন, শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান ও আজিজুর রহমান উনারা দলের গঠন তন্ত্রের বাহিরে রাজনীতি করে। দুঃখের বিষয় হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রাতে সিনিয়র নেতাদের লাঞ্ছিত করেছে। আমার দৃষ্টিতে উনারা প্রকৃত রাজনীতিবিদ নয়। সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার সাজিব আমাদের মামলার আসামি ছিলেন। আমার উপর দুটি মামলা ছিল। একটি থেকে খালাস পেয়েছি। হাই কোর্ট থেকে আরেকটি মামলার জামিন নিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে একটি রাতও ঘরে ঘুমাতে পারিনি।
ভীমখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. লিটন মিয়া বলেন, বিএনপির অবস্থা যখন খারাপ তখন শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেছেন তারা, তাদের তথ্য প্রমাণসহ অসংখ্য ছবিও আছে।
তিনি বলেন, এনজিও কর্মী আজিজুর রহমান ও ছিল আওয়ামী লীগে। তিনি আওয়ামী লীগের আমলে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে কাটিয়েছেন। তবে তিনি প্রথমে বিএনপিতে ছিলেন। এখন আবার বিএনপিতে যুক্ত হয়েছেন। ঝুনু পরিবার বিএনপি করতো, তারা নির্যাতিত হয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম ফরাজী বলেন, শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান ও শফিকুর রহমান এখন তারা বিএনপি করে। আওয়ামী লীগে ছিল এসব ছবি আছে। তবে এরকমের লোক রাজনৈতিক সব দলেই আছে।
তিনি বলেন, আমি সাদাকে সাদা বলি, কালোকে কালো। এই জন্য আমি সবার কাছে দোষী। আমাদের দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে এসব হয়েছে। দল কলংকিত হয়েছে, এখন আমরা দল ও মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি আরো বলেন, আজিজুর রহমান আগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৭ বছর চাকুরী করেছেন। তার দুই ভাই আওয়ামী লীগ করে। তারা হলেন ইউপি সদস্য জিয়া ও জামালগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল খায়ের। উপজেলা কমিটিতে আজিজুর রহমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক প্রার্থী।
ফরাজী বলেন, আজিজুর রহমান এখন দলে পদ পেতে পারেন। যারা এখন দলে স্থান পাচ্ছেন, তাদের কেউ আত্মীয়তার সূত্রে, কেউ অর্থে, কেউ আবার গোষ্ঠীর কারণে দলে স্থান পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, মাছুম ও সাজিব পরিবার মাঝে মধ্যে এসে বিএনপির প্রোগ্রামে উপস্থিত হতো। তবে এরা নির্বাচনমূখি রাজনীতি করতো।
জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার সাজিব বলেন, বিগত বছর আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী অবৈধ সরকার দ্বারা দলীয় ও পারিবারিকভাবে মামলা হামলায় জর্জরিত ছিলাম। ২০১৮ সাল থেকে ঘর পুড়া মামলাসহ আমার নামে ৩টি মামলা দায়ের হয়। আমিসহ বিএনপির অসংখ্য নেতা কর্মীর নামে। এমনকি চেয়ারম্যান থাকাকালীন আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় ১৫ আগস্ট ইউপি সচিব কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করায় আমাকে বরখাস্থ করা হয়। পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে আমি পূনরায় দায়িত্বে বহাল থাকি। আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শে রাজনীতি করি এবং কোন প্রকার দলীয় বিভক্তি কিংবা গ্রুফিংয়ে বিশ্বাস করি না।
জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি সুনামগঞ্জে চাকুরী করেছি। পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। আমার এক ভাই যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আরেক ভাই স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ছিলেন। ২০১৮ সালে আমিসহ তিন ভাই ফ্যাসিস্ট সরকারের মামলার আসামি ছিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আব্দুল মালিক এবং শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান আওয়ামী লীগের সাথে লিয়াজু করে ব্যবসা বাণিজ্য করে গেছেন। যারা গঠন তন্ত্রের বাহিরে গিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের সাথে মিশে সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। তাদেরকে বিএনপিতে ঠাঁই দেওয়া হবে না। সে যেই হোক। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে যারা পকেট ভারী করেছেন ৫ আগস্টের পর তারাই আবার উপজেলা বিএনপির দায়িত্বভার নেওয়ার জন্য জোর লবিং করছেন। আপনারা তাদেরকে খোঁজে বের করে জাতীর সামনে নিয়ে আসুন।
জামালগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক প্রার্থী শফিকুর রহমান বলেন, জামালগঞ্জে বিএনপির কোন গ্রুপিং কোন্দল নেই। বিএনপি বলতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমানের দল। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে উঠতি বয়সের ছেলেদের ধাক্কা ধাক্কির কারণে ছোট খাটো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আব্দুল মালিক বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উনি মামলা হামলার ভয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম এর সাথে লিয়াজু রাখতেন। রেজাউল করিম শামীমের নির্বাচনী বিভিন্ন মিটিংয়ে থাকতেন। আজিজুর রহমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে চাকুরীতে ছিলেন, শুক্র-শনিবার মাঝে মধ্যে বিএনপির কর্মসূচীতে আসতেন। অবসর নেওয়ার পর এখন নিয়মিত আসছেন। ছাত্র জীবনে আজিজুর রহমান ছাত্রদল করতো। বিএনপি অনেক বড় দল এখানে সব ধরনের লোকই আছে। ২০১৮-২০২৩ সালে আমার উপর দুটি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে শাহ মোহাম্মদ শাহজাহান সহ একটি গ্রুপ আক্রমণ করে আমাদের। এসময় ফারহান নামের এক যুবদল কর্মী আহত হয়। সে সিলেটে চিকিৎসাধীন আছে।
তিনি বলেন, এই ঘটনাটি জেলা কমিটিতে জানানো হয়েছে এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। জামালগঞ্জ উপজেলায় দুইটি গ্রুপ আছে। এরা একটি গ্রুপের শেল্টারে চলে। এরা ২০১৮ সালে যোগ দেয় আওয়ামী লীগে। এর আগে বিএনপিতেও সক্রিয় ছিল না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝুনু মিয়ার ছেলে মাসুম ও সাজিব বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। জামালগঞ্জে বিএনপির কোন গ্রুপিং কোন্দল নেই। বিএনপি বলতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমানের দল।
আহ্বায়ক প্রার্থী শাহ মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একটি পক্ষ আমাদের সাথে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি করে। তখন আক্রমণের চেষ্টাও করে তারা। এই ঘটনার সমাধান করতে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে সাবেক সভাপতি আব্দুল হক সাহেব দায়িত্ব নেন। শনিবার শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বসা হয়নি।
তিনি বলেন, শামীমের সাথে আতাত করেই আমাদেরকে আসামি দেওয়া হয়েছে। আজিজুর রহমান বর্তমানে অবসরে আছেন। আগে চাকুরিতে ছিলেন। ১৮ সালের আগে শুক্রবার ও শনিবার আসতেন।
তিনি আরো বলেন, শামীম ও মোহাম্মদ আলী উপজেলা আওয়ামী লীগে ক্ষমতাসীন ছিল। তাদের সাথে গভীর সম্পর্ক থাকায় আব্দুল মালেক আসামী হয় নাই। ৪ আগস্টের ঘটনায় জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক আসামী হয় নাই, এটা মারাত্মক। কিন্তু আমি হয়েছি, আমার ছেলেও আসামি হয়েছে ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝুনু মিয়া ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তারা পরিচ্ছন্ন বিএনপি। সাজিদ ছিল উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ভাই মাসুম মাঝে মধ্যে স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিল।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসার জায়গা নিয়ে ঝামেলা মেটাতে রতন এমপি আমার দোকানের সামনে বসার কথা ছিল। ওইদিন রতন এমপির সাথে দোকানের সামনে ছিলাম। হঠাৎ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দৌঁড়ে আসে আমিও দাঁড়িয়ে যাই। তখন তারা একটি ব্যানার সামনে ধরে ফেলেন। তখন ওই ছবি তোলে। আমার অজান্তে তোলা হয় ছবি। আমি মনে করি এটা ষড়যন্ত্র।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁনপুর গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে রতন এমপি ছিলেন। আমিও ছিলাম। ওই সময়ও ছবি তোলা হয়।
তিনি বলেন, জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আমিও আহ্বায়ক পদপ্রার্থী। আগামী ২৪ তারিখ নির্বাচনের সম্ভব্য তারিখ আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক মো. মাসুম মাহমুদ তালুকদার বলেন, বিগত ১৬/১৭ বছর আমার দলীয় এবং পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার দ্বারা অত্যাচারিত নিপিড়িত হয়েছি। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক তিন বারের এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচীতে অংশ গ্রহন করেছি। আমি কিংবা আমার পরিবার কখনও বিভক্তির রাজনীতি বিশ্বাস করি না। তাই দল যাকে দায়িত্ব দিয়েছে আমরা তাদের নেতৃত্বে অংশ গ্রহন করেছি। শাহজাহান ও আজিজুর রহমান সম্পর্কে যে প্রশ্ন করেছেন এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে রাজি নই। কিন্তু একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে বিগত ৫ই আগস্ট পূর্ববর্তী পযর্ন্ত কারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলা করেছে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি কিংবা ভিডিও পর্যবেক্ষণ করলে আপনি মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন। এই মুহূর্তে জামালগঞ্জ তথা সুনামগঞ্জ জেলায় আমরা বিশ্বাস করি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন,এডভোকেট আব্দুল হক সহ আহ্বায়ক কমিটির বিজ্ঞ সদস্যদের নেতৃত্বে ঐক্যর রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য অ্যাড. আব্দুল হক বলেন, হাই কমান্ডের নিষেধ আছে। যারা আওয়ামী লীগে জড়িত ছিল তাদেরকে বিএনপিতে যুক্ত করা হবে না। যদি যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদেরকে বাতিল করা হবে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech