নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করলে সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে: সেনাপ্রধান

প্রকাশিত: ৭:১৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫

নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করলে সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে: সেনাপ্রধান

বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, হানাহানি না করে দিন শেষে দেশ ও জাতির দিকে খেয়াল করে সবাইকে এক থাকতে হবে। যদি নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, দেশ ও জাতির সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলতে পারবেন না যে সতর্ক করিনি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যতটুকু পারছেন সাহায্য করছেন দেশকে ইউনাইটেড রাখার।
মঙ্গলবার জাতীয় শহিদ সেনা দিবসে মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত ফটো এক্সিবিশনে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমার মনে হয় আমরা নির্বাচনের দিকেই ধাবিত হচ্ছি। এর আগে আমি বলেছিলাম ১৮ মাসের মধ্যেই একটা নির্বাচন হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। ড. ইউনূস এ বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘দেশের এই আইনশৃঙ্খলা অবনতির পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে- আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। আমরা যদি সংগঠিত থাকি তাহলে সম্মিলিতভাবে এসব অপরাধ মোকাবিলা করা সম্ভব’।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, আজকে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে না। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে জেলে। র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই প্যানিক। বিভিন্ন দোষারোপ, গুম, খুন ইত্যাদির তদন্ত চলছে। অবশ্যই তদন্ত হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।তবে এমনভাবে কাজটা করতে হবে যেন এই অর্গানাইজেশনগুলো আন্ডারমাইন্ড না হয়’।
তিনি বলেন, ‘অর্গানাইজেশনগুলোকে যদি আন্ডারমাইন্ড করে আপনার মনে করেন যে, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, সবাই শান্তিতে থাকবেন; এটা হবে না, এটা সম্ভব না’।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, একটা জিনিস আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এই বর্বরতা কোনো সেনাসদস্য করে নাই। এই ঘটনার সম্পূর্ণটাই তদানীন্তন বিডিআর-এর সদস্য দ্বারা সংগঠিত। ফুল স্টপ, এখানে কোনো ইফ এবং বাট নাই।
তিনি বলেছেন, এখানে যদি ইফ এবং বাট আনেন তাহলে এখানে যে বিচারিক কার্যক্রম হয়েছে; ১৬-১৭ বছর ধরে যারা জেলে আছেন, যারা কনভিক্টেট- সেই বিচারিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এই জিনিসটা আমাদের খুব পরিষ্কার করে মনে রাখা প্রয়োজন।
সেনাপ্রধান বলেন, আজকে একটি বেদনাবিধুর দিবস। আজকের এই দিনে আমার আমাদের ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার, শুধু তাই নয়; আমাদের কিছু পরিবারের সদস্যদেরও হারিয়েছি। এখানে আসার সময় আমি ছবিগুলো দেখছিলাম। আপনার এই ঘটনার ছবিগুলো দেখেছেন। কিন্তু এগুলো সব আমার নিজ চোখে দেখা। আমি একজন চাক্ষুষ সাক্ষী এ সব বর্বরতার।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, যে সব সদস্য শাস্তি পেয়েছে তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। এখানে কোনো রাজনৈতিক নেতা যুক্ত ছিলেন কিনা, বাহিরের কোনো শক্তি যুক্ত ছিল কিনা, সেটার জন্য কমিশন করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান এখানে আছেন। তিনি এসব বের করবেন এবং আপনাদের জানাবেন।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, বটম লাইম হচ্ছে আমাদের যে-সব চৌকস সেনাসদস্য প্রাণ হারিয়েছেন তদানীন্তন বিডিআর সদস্যদের গুলিতে। আমরা এই বিষয়টা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করছি কেউ কেউ। বিষয়টাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছি। সেটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আমি এটা আপনাদেরকে নিশ্চিত করছি। আমরা নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি না করি। আমাদের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, যদি কোনো ব্যত্যয় থেকে থাকে তাহলে সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। এটার জন্য ডানে-বাঁয়ে দৌড়ে কোনো লাভ হবে না।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু সদস্যের দাবি তারা ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত শাস্তি পেয়েছেন, অনেকে বলছেন তারা অযাচিত শাস্তি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সেনাপ্রধান বলেন, আমার স্ট্যান্ড পয়েন্ট হচ্ছে, যদি কেউ অপরাধ করে থাকে সেটা জন্য কোনো ছাড় হবে না, ডিসিপ্লিন ফোর্সকে ডিসিপ্লিন থাকতে দেন। এই দেশের সব কিছু ভেঙে পড়লেও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী টিকে আছে কারণ তাদের মধ্যে ডিসিপ্লিন আছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর