বিছনাকান্দি-ভারত সীমান্তে চোরাচালানের নেতৃত্বে তিন জনের সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ৫:২৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২৫

বিছনাকান্দি-ভারত সীমান্তে চোরাচালানের নেতৃত্বে তিন জনের সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটের গোয়াইনঘাট প্রশাসন কর্তৃক চোরাচালান প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার উপর বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে সীমান্ত চোরাচালান আমদানি ও পাচার করে আসছে তিন কুতুবের মাফিয়া গ্যাং।
জনশ্রুতি আছে, গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় অবৈধ পণ্য দেশে পাচার করে কোটি কোটি আয় করে অল্প দিনেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন সীমান্ত এলাকার অনেকেই। যাদের নূন আনতে পান্তা ফুরাতো, তারাও এখন কোটিপতি বনে গেছেন মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে।
স্থানীয়রা জানান, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পর ওই রুটে নেতৃত্বের পরিবর্তন এসেছে। আওয়ামী পন্থী বা তাদের আশির্বাদুষ্ট আত্মগোপনে থাকার কারণে বর্তমান লাইন চালাচ্ছেন পশ্চিম উপরগ্রামের গোলাম হোসেন(৪৩), লামনী গ্রামের আব্দুল খালিক(৪০) ও বর্তমান ইউনিয়ন সদস্য ইমাম মেম্বার। ৫ আগস্টের পর থেকে তারাই চোরাকারবারীদের সাথে যোগাযোগ করে গড়ে তুলেছেন ভারত-বাংলাদেশ নিরাপদ রুট। তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিনই উপজেলার বিছনাকান্দী, দমদমী, পান্তুমাই ও লক্ষণ ছড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনি, পিয়াজ, অস্ত্র, মাদক, বিভিন্ন ব্রান্ডের স্মার্ট ফোন ও মোটরসাইকেল। পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন সময় গরু-মহিষের বড় চালানও তারা দেশে আনেন। আর এর থেকে প্রতিমাসের বখরা হিসেবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে মোটা অঙ্কের টাকাও প্রদান করেন এই তিন দরবেশ। ৫ আগস্টের আগেও তারা লাইনে ছিলেন, তবে নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী ডেভিল।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানান, চোরাকারবারী প্রতিরোধের চেয়ে তাদের বেশিই সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। চোরাচালান প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা শুধু নামমাত্র। বাস্তবে এর কোনো প্রতিকার ভোগ করেননি জনগণ।
তারা বলেন, চোরাই পথে আসা এসকল পণ্যের সরকারি কোনো বৈধতা না থাকলেও স্থানীয় পুলিশের নিজেদের ফোর্স ও স্থানীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে চোরাইপথে আসা ভারতীয় পণ্যের উপর দৈনিক কোটি কোটি টাকার চাঁদা আদায় করছেন এই তিন কুতুব। মূলত, তাদের ইশারাই চলছে এই ভারতীয় চোরাচালানের অবৈধ রমরমা উৎসব।
সূত্র জানায়, ভারতীয় গরু হাওর অঞ্চল লামনী, পাতলী কোনা, পশ্চিম উপরগ্রাম পশ্চিম হাদারপার হয়ে তোয়াকুল বাজারের রশিদ দিয়ে যাচ্ছে দেশের সর্বপ্রান্তে। প্রতিটি গরু থেকে নেওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকা করে। প্রতিদিন আসা ২/৩ হাজার গরুর বিপরীতে আদায় হচ্ছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। অথচ, এসব টাকার রাজস্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
গত ৯ মার্চ দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত ‘টাকার খনি পূর্ব সিলেট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য বক্তব্য দেন জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এসময় প্রতিবেদক জানতে চান- ৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান দেশের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন নিয়েছে। কিন্তু পূর্ব সিলেটের চোরাচালান এবং পাথর-বালু লুট বন্ধ হয়নি। এজন্য পুলিশের নিস্ক্রিয়তার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে বদলি হয়ে আসা পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হচ্ছে। এসব অভিযোগ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য হচ্ছে সীমান্ত চোরাচালান ঠেকানো পুলিশের কাজ নয়। উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে দেদারসে ভারতীয় পণ্য এবং মাদক ঢুকছে স্বীকার করে মানবজমিনকে তিনি বলেন- জরুরি হয়ে গেছে ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন- চোরাচালান পরিবহন বন্ধে সড়কে পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। কোয়ারি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকার কারণে অনেকে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে বলে স্বীকার করেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন- গোটা জেলায় প্রায় সব পুলিশ নতুন। এসপি অফিসে খাতাপত্রও নতুন। এ অবস্থায় কাজ বুঝে নবাগত পুলিশ সদস্যরা অল্পদিনের মধ্যেই অপরাধ বন্ধে তৎপর বলে দাবি করেন তিনি। চোরাচালান বিষয়ে এসপি’র মূল্যায়ন হচ্ছে একটি চক্র বংশপরম্পরায় সীমান্তে এ অপরাধ অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অপরাধ বা পাপবোধ নেই।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর