সুনামগঞ্জের হাওরে ৫ হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদন

প্রকাশিত: ১১:৫২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

সুনামগঞ্জের হাওরে ৫ হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদন

মো. আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে আধাপাকা ধান থাকায় পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ফসল কাটা। প্রশাসনের ৩টি দপ্তরের সরকারী ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
এপ্রিল মাসের প্রথম থেকেই হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় শুরু হয়েছে বোর ধান কাটা। ধানের মৌ মৌ গ্রাণ কৃষক,কৃষানীদের মনকে মাতিয়ে তুলেছে। বেশির ভাগ জমিনে এখনো পাকা আধা পাকা ধান থাকায় পুরোদমে শুরু হয়নি ধান কাটার মহোৎসব। আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিলের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া খবরে শঙ্কায় রয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকেরা। জেলায় তিন দপ্তরের ছুটি বাতিল করেছে প্রশাসন। হাওরে কৃষকদেরকে পাকা ধান দ্রত কাটতে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সব মিলিয়ে শঙ্কায় রয়েছে হাওরপারের কৃষকেরা।
চলতি মৌসমে সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ধর্মপাশা, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা ও ধর্মপাশা ১২টি উপজেলায় ছোটবড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর বোরো জমিতে উফসি ও হাইব্রীডসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এবার ফসল ভাল হওয়াতে উৎপাদনের লক্ষমাত্র ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিকটন ধান। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল থেকে ধান কর্তন শুরু হয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসেব মতে এ পর্যন্ত ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার হাওরে এবার ৩৬০ টি টি কম্বাভাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে, বাহিরের জেলা হতে ধান কাটার জন্য ২ হাজার ৯৫ জন ও স্থানীয়সহ ১ লাখ ৩ হাজার ৮ শত ৭৮ জন জন শ্রমিক ধান কর্তনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে প্রাপ্ত বৃষ্টিপাত ও আকষ্মিক বন্যা সম্পর্কিত বিশেষ খবরে বলা হয়েছে আজ ১৮ এপ্রিল হতে ২১ এপ্রিলের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যায় নিম্নঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন গত ১৫ এপ্রিল জরুরী সভা ডেকে সরকারী কৃষি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন এই ৩টি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
কৃষকরা জানান,চলতি বছরে বোর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এখনো অনেক জমির ধান পাকা আধাপাকা থাকায় তারা শত প্রতিক’ল পরিস্থিতিতেও ধান কাটতে শুরু করেছে। তারা আরো বলেন,শুনতেছি বন্যা বৃষ্টি আসতেছে, এনিয়ে ভয়ের মধ্যে আছি। এখানো ১৫ ভাগ ধান কাটা হয়নি জানালেন কৃষকেরা।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ জানালেন, চলতি মৌসমে ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। কোন ফোকা ধরেনি। প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে নিশ্চিন্তে কৃষকরা এবার ঘরে উঠাতে পারবে ফসল।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুসফিকীন নুর, জানান,চলতি বছর জামালগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত শতকরা আট ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বের্ডের কর্তকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী মিটিংয়ের আহবান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই উপজেলায় কৃষকরা শতভাগ ধান কর্তন করতে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেছেন, গত ১১ এপ্রিল মাননীয় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে এসে তিনি নিজে ধান কেটে ধান কাটার উদ্বোধন করে গেলন। এই উপজেলায় কৃষকরা ইতিমধ্যে ধান কাটতে শুরু করেছেন এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে। এই উপজেলায় চলতি বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৪৩০ কোটি টাকা হবে। এবার ৮৭টি কম্বাইন হারভেস্ট্রার মেশিন হাওরে ধান কাটছে। তবে কৃষকরা সার্বক্ষনিক উপজেলা প্রশাসনের সাথে সরাসরি তাদের সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করছেন। তিনি আশাবাদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা এবার সোনালী ফসল ঘরে তুলে আনন্দের হাসি হাসবেন এবং কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায মূল্য পান সেইদিকে সরকার ও জেলা প্রশাসন অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া জানান, এই মাসের ১৮ এপ্রিল থেকে আবহাওয়া একটু প্রতিকূলে যেতে পারে। সেইক্ষেত্রে কৃষকরা দ্রুত পাকা ধানগুলো কেটে তাদের গোলায় তোলার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে চলতি বছরে এই জেলার ছোটবড় ১৩৭টির বেশী হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর বোরো জমিতে উফসি ও হাইব্রীডসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এবার ফসল ভাল হওয়াতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৯৬ হাজার মেট্রিকটন ধান। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা হবে বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জে মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম বোর ফসল। এ ফসল রক্ষায় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা হাওরপাড়ের কৃষকদের।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর