নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা
সিলেট বিভাগের বহুল আলোচিত-সমালোচিত অপরাধী সাইদুল ইসলাম (৪২) কে গ্রেফতার করেছে বড়লেখা থানা পুলিশ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডি, মাদক, গরু-মহিষ পাচারসহ বহু অপরাধে জড়িত সাইদুল দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।
থানার ফরোয়ার্ডিং রিপোর্ট ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (২০ এপ্রিল) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় সিলেট উপশহরের নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সাইদুল ইসলাম মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা পৌরসভার গাজীটেকা (আইলাপুর) এলাকার মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল কাশেম সরকার তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাইদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালান, অবৈধ হুন্ডি ও দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে দেশের অর্থ বিদেশে পাচারে সক্রিয় ছিলেন।
থানার ফরোয়ার্ডিং ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সাইদুল ইসলাম সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ অন্তত বিশজন দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী কর্মকর্তার অর্থ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারে সহযোগিতা করেছেন। এসব কাজের জন্য তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ছত্রছায়া পেয়েছেন। এমনকি বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেও জড়িত ছিলেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
সাইদুলের গ্রেফতারের পর সোমবার বিকেলে বড়লেখা পৌরশহরে সর্বস্তরের নাগরিকদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জয়নাল আবেদিন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুস শহীদ খান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আব্দুন নুর তালুকদার, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শরিফ উদ্দিন ইমন, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপজেলা সভাপতি মীর মুহিবুর রহমান, আগর আতর ব্যবসায়ী ও দুবাই প্রবাসী বদরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন, প্রেসক্লাব সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, পৌর বিএনপির আহবায়ক মীর মখলিছুর রহমান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান খসরু এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নসিব আলী প্রমুখ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাইদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বড়লেখা ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তিনি বরাবরই রক্ষা পেয়ে যান।
তার গ্রেফতারের খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তির অনুভূতি ফিরে এসেছে। তারা দ্রুত তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।