ঢাকা ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
সুয়েব রানা, জৈন্তাপুর
নদীর ধারে একটি গাছের নিচে বসে আছেন এক তরুণ। চারপাশে প্রকৃতির অপার নিস্তব্ধতা, অথচ তার অন্তরে যেন এক নিঃশব্দ ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হাতে নেই কোনো ডায়েরি, মুখে নেই হাসি, চোখে শুধুই চিন্তার গভীর ছাপ।
তিনি আমাদের কারও ভাই, কারও সন্তান কিংবা হয়তো একজন বন্ধুর মতোই কেউ। তাঁর জীবনের এই নিরব কষ্ট বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাজারো তরুণ-তরুণীর জীবনে। যাদের জীবন থমকে গেছে একটি চাকরি না পাওয়ার কষ্টে।
সারা দেশে হাজারো তরুণ উচ্চশিক্ষা শেষ করেও বসে আছেন বেকার হয়ে। দিনের পর দিন চাকরির বিজ্ঞপ্তি খোঁজা, আবেদনপত্র পাঠানো, ভাইভা দেওয়া—সবই চলছে, কিন্তু ফলাফল শূন্য। এতে কেবল আর্থিক দুরবস্থাই নয়, জন্ম নিচ্ছে এক গভীর মানসিক অবসাদ।
চাকরি না থাকায় মানসিক চাপ বেড়ে যায় :
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্বের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে নেমে আসে বিপর্যয়। একজন তরুণ যখন পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং সমাজের কাছ থেকে বারবার প্রশ্নের মুখোমুখি হন, তখন তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ে।
একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ভাষায়, “এই অবস্থা অনেক সময় বিষণ্ণতা, আত্ন-অবিশ্বাস এবং নিঃসঙ্গতার দিকে ঠেলে দেয় মানুষকে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যেতে পারে।”
আমাদের দেশে অনেক সময় শিক্ষাব্যবস্থা ও চাকরির বাজারের চাহিদার মধ্যে রয়েছে বড় এক ফাঁক। প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি চাকরির উপযোগী দক্ষতা তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অধিকাংশ তরুণ শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অর্জনে মনোযোগী থাকলেও, এখনকার চাকরির বাজার চাই দক্ষতা, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান।
তবে এই হতাশার মাঝেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। অনেক তরুণ এখন নিজের মতো করে পথ তৈরি করছেন। কেউ গ্রাফিক ডিজাইন শিখে ফ্রিল্যান্সিং করছেন, কেউ ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেছেন।
সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করেছে। বিশেষ করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, আইটি খাতে শিক্ষা, এবং উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিয়েও কাজ করা জরুরি। বেকার তরুণদের জন্য বিনামূল্যে কাউন্সেলিং সার্ভিস, হেল্পলাইন এবং ক্যারিয়ার পরামর্শক থাকলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
নদীর পাড়ে বসে থাকা ওই তরুণ শুধু একজন ব্যক্তি নয়, তিনি হাজারো স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক। তার চোখে শুধু নিজের নয়, একটি প্রজন্মের না-পাওয়ার ব্যথা জমে আছে। এই সমাজ, এই রাষ্ট্র যদি সময়মতো দায়িত্ব না নেয়, তবে হারিয়ে যাবে সম্ভাবনার অনেক মুখ।
তবে সম্মিলিত প্রয়াসে, সঠিক দিকনির্দেশনায় এবং মানসিক সহায়তায় বদলে যেতে পারে সেই গল্প। বেকারত্ব এক অন্ধকার সময় হলেও, প্রতিটি আঁধারের শেষে একটা আলো ঠিকই অপেক্ষা করে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by Yellow Host