ঢাকা ১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:২৭ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২৫
মো. আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পর্যটন স্পট বারেকের টিলা ও যাদুকাটাস্থ পাঠানপাড়া-মিয়ারচর খেয়াঘাট এখন চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন দিনে ও রাতে সুযোগ বুঝে চোরাচালানের সাথে যুক্ত কিছু লোক বিভিন্ন পণ্য সীমান্তে এপার-ওপার করছে। উপরের চাপে মাঝে মধ্যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সীমান্তে চোরাচালানের পণ্য আটক হলেও থেমে নেই চোরাকারবারীদের অপতৎপরতা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আনা নেয়া করায় রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় চিনি, ফুচকা, নাছির বিড়ি, পান-সুপারী, কসমেটিকস, গরু-মহিষ, মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য সরকারের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিরাপদে আসছে তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারিক্কার টিলা (বারেক টিলা) ও রাজাই সীমান্ত দিয়ে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবিকে ম্যানেজ করে চাঁনপুর সীমান্তের বারিক্কার টিলা ও রাজাই সীমান্ত সম্প্রতি চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
একটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান চক্র একাধিক মামলার আসামি হয়েও সিন্ডিকেট করে কিছু অসাধু বিজিবি সদস্য, পুলিশ ও চোরাকারবারি সংবাদ কর্মীদের ম্যানেজ করেই তাদের অপকর্ম করে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরেই। বিগত সরকারের সময়ে সীমান্তের চোরাচালান অনেকটাই ওপেন সিক্রেট হলেও পট পরিবর্তনের কারণে এখন সীমান্তের চোরাচালান বেপরোয়া। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিনই ভারত থেকে চোরাই পথে নিয়ে আসা বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য মাঝে মধ্যে আটক করলেও চোরাচালানের সাথে জড়িত মূল গডফাদাররা বরাবরই থেকে যায় অধরা-অন্তরালে। যারা ধরা পড়ে তারা বাহক মাত্র। এরা পেটের দায়ে শ্রমিক হিসেবে চোরাচালানের মালামাল বহন করেই জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক সময় পরিত্যক্ত হিসেবে চোরাই পণ্য আটক করা হয়। কারণ বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে মালামাল রেখেই পালিয়ে যায়।
গত ২৩ এপ্রিল বুধবার টাস্কফোর্স অভিযান চালায় লাউড়েরগড় বিওপির বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলী এবং মদেরগাঁও গ্রামের একটি বাড়ি ও বিন্নাকুলি গ্রামের একটি পরিত্যাক্ত গুদাম ঘর থেকে ১৭৬১২ কেজি ভারতীয় ফুচকা এবং ৬০ কেজি জিরা উদ্ধার করে।
শুক্রবার সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে চাঁনপুর সীমান্ত ফাঁড়ির আওতাধীন বারেকের টিলা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান, উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা,আনন্দনগর ও রাজাই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় কোটি কোটি টাকার চিনি, ফুচকা, নাসির বিড়ি,গাঁজা, ইয়াবা ও মদ পাচার করে আসছে ১৫ /১৬ জনের একটি চোরাকারবারী গ্রুপ। আবার বাংলাদেশ থেকে রসুন, মাছ, শুটকি, প্লাস্টিক সামগ্রী ইত্যাদি ভারতে পাচার করছে।
তিনি আরও জানায়,চাঁনপুর সীমান্তের বারেকের টিলার মেইন পিলার ১২০৩ এর ৩ এস, ২ এস, ভারতের ৮ নং গেইট বাংলা পিলার নং ১১ এক্স, ভারতের ৭ নং গেইট, বাংলা ৮ এক্স ও মাঝের টিলার ৬, ৫ ও ৪ এক্স গেইট এলাকা দিয়ে ভারতীয় চিনি ও ফুচকা, মাছ,শুটকি, নাছির বিড়ি, কসমেটিকস, গরু-মহিষ ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য ওপেন চোরাচালান গেইট নিরাপদ।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, টহলে আসা বিজিবি সদস্য ও বিট পুলিশকে ম্যানেজ করতে বারেকের টিলার উপর আনন্দনগর গ্রামের বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী নিতুল মারাক ও তার স্ত্রী’র সাথে কন্টাক্ট করে চোরাকারবারিরা। পরে তারা টহলকারী বিজিবি সদস্যদের সাথে আলাপ করে চোরাই লাইন ক্লিয়ার করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রাত ১০টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ওইসব পয়েন্ট দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে চিনি,মাছ,শুটকি, ফুচকা, নাছির বিড়ি, কসমেটিকস, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য। এসব অবৈধ পণ্য নিয়ে আসার পর টিলার উপর বিভিন্ন বাড়িতে প্রথমে মজুদ রাখা হয়। পরে ভোররাতে অটোরিকশা বুঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয় বাদাঘাট বাজারে। এর পর সুযোগ বুঝে চোরাকারবারিরা নৌকা ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে।
ওই ব্যক্তির অনুরোধ- ভাই সংবাদে আমার নাম দিলে আমার সাথের লোকজনই আমারে মাইরা লাইব। আর পুলিশ বিজিবি তো আছেই। তারা আমার নামে যে কোনও মামলা দিয়ে জেলে দিব। ভাই আমরা ব্যবসা করি সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে।
বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, চোরাকারবারের সাথে জড়িত রয়েছে, মাহারাম টিলা গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম বুটকুন(৪০), তোতা মিয়া(৩৮), বড়গোফ টিলা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে সাইকুল মিয়া(৩২) মিলন মিয়া (২৮), একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সোলায়মান (২৭), জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়া(৩৮), আব্দুল হেকিমের ছেলে সাদ্দাম মিয়া(৩৫), মারামটিলার হাবি রহমানের ছেলে কাজল মিয়া(৪০) ও পশ্চিম টিলার লিটন মিয়া(৩০),বাদাঘাট কামরা বন্দ গ্রামের শাকিল মিয়া(৩৫), মনসুর মিয়া(৪০), আল-আমিন সহ ১৫/১৬ জনের একটি প্রভাবশালী চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্র।
পাঠানপাড়া খেয়াঘাটের একাদিক ব্যবসায়ি জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন রাত ১টার পর ইজিবাইক দিয়ে বাদাঘাট বাজার হতে পাঠানপাড়া খেয়াঘাটে নিয়ে প্রায় কোটি টাকার ফুচকা বিল্লাল মাঝির নৌকা যোগে ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
মিয়ারচর খেয়াঘাটের মাঝি জানান, প্রতি রাতেই চোরাকারবারিরা লাউড়েরগড় শাহিদাবাদ বর্ডার হাট বাজার হতে বিন্নাকুলি হয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক ইজিবাইক দিয়ে মিয়ারচর খেয়াঘাটে মালামাল এনে কোটি টাকার ফুচকা লোড হয় ভৈরবী নৌকায়। গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে দিন মজুর শ্রেণির লোকজন দিয়ে অবৈধ কাজ করাচ্ছেন সিন্ডিকেট।
বাদাঘাট ফাঁড়ি ইনচার্জ হাফিজ উদ্দিন জানান,আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। কোন কোন স্পট দিয়ে অবৈধ ভারতীয় চোরাচালান প্রবেশ করে জানতে একটু সময় লাগবে। তবে রাত ঝটাই বাঝুক চোরাচালান প্রতিরোধে আপনাদের কাছে কোন তথ্য থাকলে আমাকে জানাবেন।
নিবার্হী কর্মকর্তা আবুল কাসেম জানান, বারেকের টিলা এবং পাঠানপাড়া-মিয়ারচর খেয়াঘাটে চোরাচালান প্রতিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech