প্রশাসনকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিল চা-শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০২৫

প্রশাসনকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিল চা-শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটে টানা ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নিলেও এসময় তারা গণমাধ্যমের কাছে প্রসাশনকে ৩দিনের হুশিয়ারী বেধে দেন। দৈনন্দিন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দাবি নিয়ে চা শ্রমিকরা বারবার রাস্তায় নেমেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকালে বকেয়া বেতন, বোনাস ও রেশন পরিশোধ, বসত বাড়ি নির্মাণ ও মেরামত, চিকিৎসা সেবা চালু ও ঔষধ প্রদান, চা বাগানের গাছ কাটা ও বিক্রি বন্ধসহ বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে সিলেটের রাস্তায় ফের আন্দোলনে নামেন চা শ্রমিকরা।
পরবর্তীকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও)-এর আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল ইউএনও বরাবর লিখিতভাবে চা শ্রমিকদের দাবি জানান। এসময় ইউএনও’র আশ্বাসে চা শ্রমিকরা তাদের দাবি পূরণে এক সপ্তাহের সময় বেধে দিলেও পরবর্তীতে চা শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তা ও ইউএনও-সহ প্রশাসনের কাছে ৩দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। চা শ্রমিকদের বেধে দেওয়া ৩দিন সময়সীমার ভেতরে স্থায়ীভাবে সমাধান এবং তাদের দেওয়া দাবি না মানলে ফের সড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনে নামবেন তারা।
রোববার (৪ মে) বেলা সাড়ে ১২টায় ১১দফা দাবি নিয়ে সিলেটের চা শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিকেলে আন্দোলন বন্ধ করেন চা শ্রমিকরা।
প্রশাসনের কাছে লিখিত আকারে চা শ্রমিকদের দেওয়া ১১দফা দাবিগুলোর মধ্যে ছিলো- ‘চা শ্রমিকদের ২০ সপ্তাহের মজুরি দিতে হবে, ২০ সপ্তাহের বন্ধ রেশন পরিশোধ করতে হবে, দীর্ঘ ৮ মাস ধরে চা খাতে কর্মরত শ্রমিক-ড্রাইভার ও লেবারদের যে বেতন বকেয়া আছে সেগুলো এককালীন পরিশোধ করতে হবে, বিগত ১০ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ডের যে টাকা জমা পড়েনি সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে, চা শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ওষুধ প্রদান করতে হবে, চা শ্রমিকদের বসত-বাড়ি নির্মাণ ও ঘরের দরজা-জানালাসহ বাসস্থানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে, চা শ্রমিকদের এরিয়া বকেয়া ও বোনাসের টাকা পরিশোধ করতে হবে, আইন মোতাবেক চা শ্রমিকদের বিশুদ্ধ খাবার পানিয় ও স্যানিটেশন প্রদান করতে হবে, দীর্ঘদিন থেকে বাগানে কাজ করা চা শ্রমিকগণ অবসরে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা থেকে ভাতা দিতে হবে, বাগান কর্তৃপক্ষ চা বাগানের কাজ বণ্টন করছে কিন্তু শ্রমিকদের দেনা-পাওনা মেটাচ্ছে না সেগুলো পরিশোধ করতে হবে, চা বাগানের গাছ কাটা বিক্রি বন্ধ এবং শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দিতে না পারায় যে বিগ্নতা ঘটছে সেই সমস্যা সমাধান করতে হবে।’
মালনীছড়া চা শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান,‘বেতন ও রেশন না পাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। বুরজান চা-কোম্পানির অধীনে থাকা আড়াই হাজার শ্রমিকের বেতন-রেশন ও বোনাস বকেয়া পড়েছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা তিন বেলা খাবার খেতে পারছে না। পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। মলিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে-দিচ্ছে বলে যাচ্ছে। কবে তাদের বেতন দেবে তার ঠিক নেই। সরকারি কর্মকর্তা ও ইউএনও-সহ প্রশাসনের কাছে ৩দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। চা শ্রমিকদের বেধে দেওয়া ৩দিন সময়সীমার ভেতরে স্থায়ীভাবে সমাধান এবং তাদের বকেয়া পাওনাসহ দাবি না মানলে ফের সড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনে নামবেন তারা।
এর আগে, এবছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৭/৮টি আন্দোলন করেন সিলেটের চা শ্রমিকরা। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো গত ২৩ ফেব্রুয়ারির আন্দোলন। ওই সময় চা শ্রমিকরা ৭দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করলে তখন মালিকপক্ষের আশ্বস্ততায় সাময়িকভাবে কাজে ফিরলেও স্থায়ীভাবে কোনো সমাধান পান নি তারা। এমতাবস্থায় পূর্ব ঘোষিত আন্দোলনের ডাক দিয়ে আজ আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কে টানা তিন ঘণ্টার আন্দোলন করেন চা শ্রমিকরা। তাদের এই অবরোধের ফলে আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কে টানা তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্দ হয়ে যায়। এতে আটকা পড়ে শত শত গাড়ি, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। সড়কে অবরোধ চলাকালীন দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হয় জনসাধারণের। পরবর্তীকালে বিমানবন্দর থানাপুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পরে বিকেল ৩টায় স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন চা শ্রমিকরা। ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গিয়ে লিখিতভাবে তাদের দাবি জানান। এসময় ইউএনও আশ্বাস দিলে চা শ্রমিকরা তাদের দাবি পূরণে এক সপ্তাহের সময় বেধে দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর