যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা
অর্ধলক্ষাধিক বারকি শ্রমিকের মানববেতর জীবন যাপন

প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৫

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা</span> <br/> অর্ধলক্ষাধিক বারকি শ্রমিকের মানববেতর জীবন যাপন

মো. আব্দুল সহিদ, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত নদী যাদুকাটা বালুমহালে মেঘালয় থেকে ভেসে আসা কয়লা ও বালু পাথর উত্তোলনে আইনী জটিলতায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক বারকি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত একমাস ধরে শ্রমিকরা নদীতে কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ইতোমধ্যে অনেকেই নদীতে কাজ করতে না পেরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন গার্মেন্টসে কাজের সন্ধানে ছুটছেন।

জানা যায়, জেলার বৃহৎ যাদুকাটা নদীতে উজানের ঢলের সঙ্গে কয়লা, বালু-পাথর এসে স্তুপ হয়। এসব উত্তোলন করে মাহারাম, বড়গোপ, লাউড়েরগড়, ঢালারপাড়, বিন্নাকুলি, ঘাগড়া, মানিগাঁও, সুন্দর পাহাড়ি, রাজাই চাঁনপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু গত একমাস ধরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় শ্রমিকরা নদীতে কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

আগে ইজারাকৃত বৃহৎ যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ এর নদীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা যেতো হাজারো শ্রমিক কোদাল, বেলচা ও বারকি নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করতে। কিন্তু গত একমাস ধরে এখানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। এ কারণে এলাকায় অনেকেই চুরি সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।

মানিগাঁও গ্রামের বালু শ্রমিক মোতালিব মিয়া বলেন, এ নদীতে কাজ করেই হাজার হাজার শ্রমিকের সংসার চলে। গত একমাস ধরে নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা কাজ করতে না পেরে এখন খুব কষ্টে আছেন। প্রতিদিন তারা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা রুজি করতেন, কিন্তু এখন তারা করতে পারছেন না, তাদের কষ্ট বেড়ে গেছে।

ঘাগটিয়া গ্রামের আল আমিন বলেন, এ নদীতে কাজ করার ফলে ব্যবসায়ী- শ্রমিক উভয়ের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। কিন্তু নদীটি বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা এখন বেকায়দায় আছেন। নদীতে কাজ না থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রভাব পড়েছে।

গড়কাটি গ্রামের মুক্তার হোসেন জানান, নদীতে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও গত একমাস ধরে বালু উত্তোলন করতে না পারায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রত আইনী জটিলতা নিরসন করে নদীতে শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ দানে জোর দাবি জানান তিনি।

সূত্রে জানা যায়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে জেলার বৃহৎ যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ ইজারা প্রদান করেন জেলা প্রশাসন। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা হন যাদুকাটা—১ তাহিয়া স্টোন ক্রাসারের স্বত্বাধিকারী নাসির মিয়া ৩৩ কোটি টাকা এবং যাদুকাটা-২ মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ রুবেল আহমদ ৫৫ কোটি টাকায়। পরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিত্বে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বালুমহাল দুটির ইজারা কার্যক্রমের ওপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট বিভাগ। একপর্যায়ে যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ এর ইজারা কার্যক্রমের ওপর উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে আগামী ২ মাসের মধ্যে মহাল দুটি থেকে সকল ধরনের বালু উত্তোলন বন্ধ রাখারও নির্দেশও দেন আদালত।

লাউড়েরগড় এলাকার বাসিন্দা শ্রমিকনেতা নজরুল মিয়া ও মনসুর মিয়া বলেন,ঈদের আগে থেকেই যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। নদীতে কাজ না করতে পারায় অভাবের তাড়নায় আমাদের এলাকার হত দরিদ্র শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাজ করছে। নদী উন্মুক্ত হলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন হবে। দুষ্কৃতিকারী সিন্ডিকেটের কারণে নদীতে প্রতিনিয়ত নৌ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শাহিদাবাদ বর্ডার হাট বাজারের সভাপতি বিল্লাল হোসেন জানান, যাদুকাটা ১ও ২ টেন্ডার নীতিমালার অংশ বিশেষ হিসেবে অন্য দুটি নির্ভেজাল ঝামেলামুক্ত মহাল দুটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সরকারের বৃহৎ অংকের একটা রাজস্ব স্থগিত হয়ে আছে। ঐ রিট থেকে এগুলোকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সমাধান করে রাজস্ব গ্রহনের জন্য নৌ-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা দাবী জানিয়েছেন।

যাদুকাটা-২ এর ইজারাদার জিনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ রুবেল বলেন, সর্বোচ্চ ইজারাপ্রাপ্ত হয়েও আমরা নদীতে যেতে পারছি না দুই একজন স্বাথার্ন্বেষী মানুষের জন্য। এরা নদী কেন্দ্রীক খেটে খাওয়া শ্রমিকদের কথা চিন্তা না করেই মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। তারা প্রতি বছরেই এমন করে থাকেন, তাদের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলেই এমনটা করে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশন আগামী দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের মহামান্য আপিল বিভাগ, আসা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাবো এবং হাজার হাজার শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় যাদুকাটা নদীতে বালু, পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনী জটিলতা নিরসন হলে শ্রমিকরা আবারও নদীতে কাজ করতে পারবেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, যাদুকাটা নদীতে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালত যদি এটা প্রত্যাহার করে তাহলে শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে এবং আমি কাজ শুরু করব। আশা করছি হয়ে যাবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর