ঢাকা ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৮
চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. একে আবদুল মোমেনের কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করছেন ডা. নূরুল হুদা নাঈম।
খলিলুর রহমান :
ডা. নাঈম। পুরো নাম ডা. নূরুল হুদা নাঈম। নামের অর্থ যেমন আলো, কাজে-কর্মেও তেমন আলোকিত জীবন তাঁর। চিকিৎসা ও মানবসেবার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তিনি হয়েছেন সত্যিকার অর্থের নূরুল হুদা মানে ‘সরলপথের আলো বা দিশারী’। সিলেটের প্রথম ইএনটি লেজার সার্জারি ও এন্ডোসকোপিক সার্জারির পাওনিয়ার-এর প্রবর্তক ডা. নাঈম সাধারণ অর্থের কোন ডাক্তার বা চিকিৎসক নন, তিনি সর্বাধুনিক একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানীও। যেমন জ্ঞান তেমন মন নিয়ে মানব সেবার ব্রতী হয়েই তার জীবন চলা। ‘ডাক্তার নয় জীবন্ত কসাই’ দেশের চিকিৎসাঙ্গনে বহুল প্রচলিত এ অপবাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন তিনি। প্রমাণ করেছেন ডাক্তাররা মূলত কসাই নন এবং চিকিৎসাবিদ্যা আসলে কোন বাণিজ্যিক পেশা নয়। মূলত এটা মানব সেবা ও মানবপ্রেমে ব্রতী হওয়ার এক জ্বলন্ত শিক্ষা, এক জীবন্ত প্রশিক্ষণ।
এককালে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শিক্ষিত জনপদ সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর। সেই ভাদেশ্বরের খমিয়াপাতন গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম ডা. নূরুল হুদা নাঈমের। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক ও শিক্ষিকার ঘরে জন্ম নেয়া ডা. নাঈমের লেখাপড়ার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। অল্প বয়সেই গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই পাড়ি জমান উপজেলার মীরগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে। ১৯৮৮ সালে ওই উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন সিলেট এমসি কলেজে। ১৯৯০ সালে এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে এমবিবিএস ও ইন্টার্নী করে ঢাকায় বাংলাদেশ কলেজ ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন থেকে এম.সি.পি.এস ও এফ.সি.পি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ভারত ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘লেজার সার্জারী ও হেডনেক ক্যান্সার সার্জারী’ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। সেসব দেশে একজন অনন্য ও মেধাবী প্রশিক্ষণার্থীর পরিচয় দেন তিনি।
মা-বাবার সংসারে ৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ৫ম ডা. নূরুল হুদা নাঈম বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ওসমানী হাসপাতালের নাক কান ও গলার হেডনেক সার্জন।
শিক্ষাজীবনে তিনি একটি মেডিকেল কোচিং সেন্টারের পরিচালক থাকার পাশপাশি সাংবাকিতা ও লেখালেখিতেও বেশ সক্রিয় ছিলেন। সে সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় তাঁর অনেক লেখা, গল্প ও নিবন্ধ প্রকাশ পায়। এখনও তিনি সমাজসচেতনতামূলক লিখনি অব্যাহত রেখেছেন।
ডা. নূরুল হুদা নাঈম চিকিৎসক থেকে এখন একজন দক্ষ ও বড়মাপের চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং অনন্য মানবপ্রেমী। বিনে পয়সায় গরীব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানের মানসিকতাই তাকে চিকিৎসা জগত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চশিখরে পৌঁছে দিয়েছে। নাক-কান ও গলার কোন রোগী তার কাছে গিয়ে আর্থিক অনটন বা অক্ষমতার কথা তুলে ধরামাত্রই তিনি লেগে যান তার সেবায়। ট্রিটমেন্ট প্যাথলজি খরচ, ঔষধ সবকিছুই তিনি তার কাঁধে তুলে নেন। গরীব দুঃখী মানুষের সেবাকেই তিনি তার জীবনের স্বার্থকতা মনে করেন বলেই তার এ ব্যক্তিত্ব ও এতো জনপ্রিয়তা। চিকিৎসাঙ্গনে বিপন্ন রোগীকে আপন করে নেয়ার মানসিকতা ও ক্ষমতা আছে বলেই তিনি চিকিৎসা জগতের এক অনন্য উচ্চ আসনে আজ সমাসীন। ‘আমি পারবোই’ এই প্রবল আত্মবিশ্বাসই তাঁর সব সাফল্যের মূল চাবিকাটি। অনেক প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তার আজকের এ আলোকিত অবস্থান। গত ২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রথম এনজেএল ইএনটি সেন্টারের উদ্যোগে তিনি শুরু করেন ‘গর্বিত মা-বাবা সম্মাননা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। যা সারাদেশ এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৃষ্টি করে তুমুল আলোড়ন।
সরকারি চাকুরি ও যথাযথ দায়িত্বপালনের পাশপাশি সম্প্রতি তিনি সিলেট নগরের কাজলশাহ এলাকায় চালু করেছেন একটি অত্যাধুনিক ইএনটি হাসপাতাল। গরীব দুঃখী রোগীদের অত্যন্ত ব্যবহুল কানের পর্দা জোড়া লাগোনোর মাধ্যমে মানুষকে বেঁচে থাকার সাহস যোগিয়ে থাকেন তিনি। ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক, ফ্রি অপারেশন, ‘আসুন জন্মদিনে একটি ভাল কাজ করি’ এ শ্লোগান নিয়ে ফ্রি কানের পর্দা জোড়া লাগানোর অপারেশন করে থাকেন তিনি। প্রতিবছর তিনি ৫ থেকে ১০ জন রোগীর ফ্রি কানের পর্দা জোড়া লাগনোর সার্জারী চালিয়ে আসছেন। চিকিৎসা ও মানবসেবায় বিভিন্ন সময়ে একাধিক সংস্থা ও সংগঠন থেকে সম্মাননা পদকও লাভ করেন তিনি।
শুধু চিকিৎসা নয়, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আর্তমানবতার সেবায়ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. নূরুল হুদা নাঈম। প্রতি ঈদে গরীব-দুঃখী মানুষের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন দিবসে র্যলি সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করে থাকেন।
ডা. নাঈমের স্বপ্ন একটি ‘চ্যারিটেবল ক্যান্সার হাসপাতাল’ স্থাপন। এটা করতে পারলে চিকিৎসা ও মানবসেবার জগতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন তিনি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech