বানিয়াচংয়ে টিসিবির পণ্য বর্জন ডিলারদের

প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০১৯

বানিয়াচংয়ে টিসিবির পণ্য বর্জন ডিলারদের

বানিয়াচং সংবাদদাতা
লোকসান ও পণ্যের মান বিতর্কে টিসিবির পণ্য তুলেননি বানিয়াচং উপজেলার ৬ ডিলার। এ উপজেলায় মাত্র ৭জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হলেও এর মধ্যে ৬জনই পণ্য গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন। ডিলারদের অভিযোগ, টিসিবির পণ্য বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয় এবং টিসিবি পণ্যের মান নিয়েও প্রশ্নের সম্মুখিন হতে তাদের।

পবিত্র রমজান মাসে বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি’র পণ্য তুলেননি ওই ডিলাররা। ফলে সরকারি এই বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। রমজানে স্বল্প আয়ের মানুষকে কম দামে পণ্য সরবরাহ করা ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভুর্তুকি মূল্যে প্রতিবছর পণ্য বিক্রি কর্মসূচি হাতে নেয় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

জানা যায়, গত ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে ন্যায্য মূল্যে টিসিবির চিনি ৪৭ টাকা, মশুর ডাল ৪৪ টাকা, ছোলা ৬০ কেজি, সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা লিটার দরে পণ্য বিক্রি শুরু হলেও বানিয়াচংয়ে এসব পণ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

কেন পণ্য তুলেননি জানতে চাইলে কাগাপাশা বাজারের মেসার্স মায়ীন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মুহিত চৌধুরী জানান, গ্রামের মানুষ ন্যায্য মূল্যের দোকান বুঝেন না। পণ্য কিনতে এসে তারা দর কষাকষি করেন। তাছাড়া আমাদের গ্রাম এলাকায় বাজারের খোলা তেলের চাহিদা বেশি। খোলা তেলের দাম টিসিবির তেলের চেয়ে দাম কম থাকায় টিসিবির তেল কিনতে চান না ক্রেতারা। তাছাড়া টিসিবির পণ্যের গুণগত মানও ভালো না। কয়েকবার টিসিবির পণ্য বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এ ব্যবসা বাদ দিয়েছি।

ইকরাম বাজারের সৌমিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী জানান, টিসিবির পণ্য বিক্রি করে কোনো লাভ হয় না। তাই দুই বছর যাবত বিক্রি করিনা। আমার ডিলারশিপও বাতিল হয়ে গেছে।

টিসিবির ডিলার আদর্শ বাজারের মেসার্স হোসেন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী হোসেন আহমদ জানান, টিসিবির পণ্য বিক্রয় করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমত, টিসিবি কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দেয় না। যেমন, আমার এখানে তেল এবং চিনির চাহিদা বেশি। কিন্তু তারা এই দুটি পণ্য কম দিয়ে অন্যান্য পণ্য বাড়িয়ে দিয়ে দিবে। দ্বিতীয়ত, টিসিবির পণ্যে লাভ একেবারেই সীমিত। তাছাড়া, ক্রেতারা মনে করেন টিসিবির পণ্য সরকার আমাদের ফ্রি দিয়ে দেয়। টিসিবির নির্ধারণ করা দাম থাকা স্বত্তেও তারা দর কষাকষি করেন। তাই এবছর থেকে টিসিবির পণ্য তুলছি না।

এ বছর পণ্য তুলেননি গ্যানিংগঞ্জ বাজারের সুয়েব এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী সুয়েব। কেন পণ্য তুলেননি জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, গতবছরও এক সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে নিউজ কইরা অনেক হয়রানি করেছে। কেনে এই বছর মাল তুলিনি আমাকে জিজ্ঞেস না করে অফিসে জিজ্ঞেস করেন।

গ্যানিংগঞ্জ বাজারের ডিলার মেসার্স মোতাব্বির হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।

এ বছর বানিয়াচংয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রয়কারী একমাত্র ডিলার বড়বাজারের মেসার্স শাহী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাহিবুর রহমান জানান, টিসিবির পণ্য বিক্রয় করে খুব একটা লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। তবে পবিত্র রমজান মাসে সেবার মানসিকতা নিয়ে প্রতিবছরই টিসিবির পণ্য তুলি। এবছরও তুলেছি। ক্রেতাদের সারাও পাচ্ছি বেশ। পণ্য বিক্রিও প্রায় শেষ।

যোগাযোগ করা হলে টিসিবি সিলেটের আঞ্চলিক প্রধান মো. ইসমাইল মজুমদার বলেন, ৪৭টাকা দরে চিনি, ৪৪টাকা দরে ডাল আপনি বাংলাদেশের কোথাও পাবেন না। আমাদের কাছ থেকে ডিলাররা প্রতিটি পণ্য কেজিতে ৪-৫ টাকা কমিশন পাচ্ছেন। তারপরও যদি তারা বলেন লাভ কম হয় তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। তাছাড়া টিসিবি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এর পণ্যও মানসম্মত। বেশি লাভের আশা না করে সেবার মানসিকতা নিয়ে যারা পণ্য বিক্রি করতে চান তারাই টিসিবির ডিলার হন।

তিনি আরও বলেন, টিসিবির পণ্যের গুণগত মানের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং টিসিবির প্রতিটি পণ্য মানসম্মত। মূলত সাংবাদিক এবং প্রশাসনের তদারকির কারণে যেসব ডিলাররা কালোবাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে পারেন না তারাই টিসিবির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা অভিযোগ তুলেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন খন্দকার বলেন, বড়বাজারের সাহীবুর রহমান পণ্য তুলেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে কারা কারা পণ্য তুলেননি তা টিসিবি আমাকে জানানো হয়নি। জানালে আমি ব্যবস্থা নিতে পারতাম। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।

সর্বশেষ ২৪ খবর