একযুগেও চালু হয়নি কার্যক্রম : অযত্নে অবহেলায় ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

প্রকাশিত: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫

একযুগেও চালু হয়নি কার্যক্রম : অযত্নে অবহেলায় ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

হারুন রশিদ, ওসমানীনগর
অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে সিলেটের ওসমানীনগরে মহান মুক্তিযুদ্ধের চিফ কমান্ডার জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর নামে নামকরণ করা ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। দীর্ঘদিন থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লতাপাতা উঁকি দিচ্ছে ভবনের জানালা দিয়ে। ভবনের ভিতরে সর্বত্র ঝুলছে মাকড়সার জাল। সামনে দর্শনার্থীদের বসার স্থান ও সীমানা প্রাচীর ঢেকে গেছে লতাপাতায়। এভাবেই ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি উদ্বোধনের পর থেকে একযুগে ও চালু হয়নি কার্যক্রম। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবীর ওসমানী গ্রন্থগার ও স্মৃতি জাদুঘর। ফলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার শিক্ষার্থীরা। নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জুন মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর পৈতৃক নিবাস ওসমানীনগরের দয়ামীর বাজার সংলগ্ন ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে ২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। ৮১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৫৩৫ বর্গফুটের একতলা ভবনের নির্মাণকাজ ২০০৯ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর ২০১০ সালের জুলাই মাসে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীর স্মৃতি রক্ষার্থে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধন হয় ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বরে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পশ্চিম প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটি। মহাসড়ক থেকে ভবনের সৌন্দর্যে আকর্ষিত করতে ভবনের সামনে বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ লাগানো হলেও বর্তমানে মহাসড়ক থেকে দেখলে মনে হবে যেন এটি একটি পরিত্যাক্ত ভবন। ভবনটির সামনের কোনো অংশে ওসমানীর নামচিহ্নটুকুও লেখা হয়নি আজ পর্যন্ত। কোনভাবে বোঝার উপায় নেই ওসমানীর স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্বোধন হলেও বিগত একযুগেও কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় স্থানীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এদিকে, বুধবার ওসমানীনগর উপজেলা যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে শিতার্থ মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে আসেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্ঠা নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনী তাহসিনা রুশদীর লোনা। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের অযত্নে আর অবেহলার বিষয়টি তোলে ধরে বিগত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, যে পরিকল্পনা নিয়ে এই ভবন তৈরী হয়েছিল তার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। ভবনের রক্ষণাক্ষেণের বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তার সাথেও আলাপ করবেন বলে উপস্তিত সবাইকে অবহিত করেন। জানা গেছে, নির্মাণের পর জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হলেও আজ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের দেখার জন্য এখানে কোনো সরঞ্জাম রাখা হয়নি। তাছাড়া পরিচর্যার জন্য স্থায়ীভাবে কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় পুরো জাদুঘরটির ভেতর-বাহির অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। ভবনটিতে বিশাল লাইব্রেরি কক্ষ, কেয়ারটেকার কক্ষ, ওয়েটিং কক্ষ, পাঁচটি কক্ষসহ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক সৌচাগার রয়েছে। ভবনের সুনিপুণ কারুকার্য যে কাউকে আকর্ষণ করে। তবে জাদুঘরটি এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এলেও চালু না হওয়ায় তাদের নিরাশ হয়ে চলে যেতে হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার ফলে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যাক্তি স্থাপনার সামনের আঙিনা অবৈধ ভাবে ব্যাবহার করে মনোরম পরিবেশ বিনষ্ট করছেন। এলাকার বখাটেদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়ে পড়েছে এম এ জি ওসমানীর স্মৃতিধন্য এ স্থাপনাটি। অন্যদিকে, ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর সুষ্ট ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের নিকট ন্যাস্ত করার দাবীতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালিন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৩০ ডিসেম্বর সিলেট -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বরাবরে একটি আবেদন পত্র প্রদান করেন বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদ সিলেটের নেতৃবৃন্দ। তারা স্মৃতি জাদুঘর চালুর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিলেও অজ্ঞাত কারণে এখনো চালু হয়নি কার্যক্রম। উদ্বোধনের পর থেকেই জাদুঘর সম্পর্কে লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও চালু না হওয়ায় জনমনে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের কার্যক্রম চালু ও সৌন্দর্যবর্ধন করে রক্ষণাবেক্ষণ ও পাঠাগার চালুর দাবী স্থানীয়দের।
বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদের সিলেটের সভাপতি সৈয়ীদ আহমদ বহলুল বলেন, স্থানীয়দের দির্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর সুষ্ট ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের নিকট ন্যাস্ত করার দাবীতে আমরা তৎকালিন সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের লিখিত ভাবে অবহিত করি। কিন্ত এখন পর্যন্ত অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে ভবনটি। শিগ্রিই ভবন রক্ষণা বেক্ষণ করে লাইব্রেরী চালু করা সময়ের দাবি। ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর