ঢাকা ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:১১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
মশাহিদ আলী :: সিলেটের পাঁচ উপজেলায় অন্তর্কোন্দলে বিপর্যস্থ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সম্মেলন কে সামনে রেখে দলের ভিতরে অনুপ্রবেশকারী ও কোন্দল থেকে বেড়িয়ে আসার জন্যে বার বার বলছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু তা দ্বন্দ্ব ও কোন্দলে নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। সিলেটের বিশ্বনাথ ও ওসমানী নগর নিয়ে গঠিত সিলেট ২ আসন এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এই দুই আসনে একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া গ্রুপগুলো আবার বিভিন্ন উপ-গ্রুপে বিভক্ত। ফলে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে সিলেট ২ ও ৩ আসনের আওয়ামী লীগ।
বিভাগীয় নগরী সিলেটের প্রবেশ মুখের এই ২টি আসনে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে এ ব্যাপারে উদাসীন। দল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে কেউ কেউ আবার দলীয় কর্মকাণ্ডের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতে বেশি ব্যস্থ। পরস্পরের বিরুদ্ধে তাদের বিষোদগার ও কাদা ছোড়াছুড়ি অনেকটা নিত্যদিনের ব্যাপার। এখানে আওয়ামী লীগ ত্রিধাবিভক্ত। প্রতিটি গ্রুপে আবার রয়েছে উপ-গ্রুপ। সিলেট-২ আসনে বিশ্বনাথ ও ওসমানী নগর নিয়ে এই আসন গঠিত। তবে এই আসনে দল ক্ষমতা না থাকলেও কমেনি গ্রুপ ও নিজেদের বলয়ের কোন্দল। জানা যায় ওসমানীনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের অবসথা একই।
এই উপজেলার মধ্যে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর রয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী । জানা যায় বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খান শফিকুর রহমানের বলয় ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের।
অন্যদিকে সিলেট ৩ আসনে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার তিন বলয়ের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়াম্যান আবু জাহিদ ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব।
মাহমুদ উস সামাদের বলয়ের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ ছমির উদ্দিন। এ বলয়ে আরও রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম, যুগ্ম-সম্পাদক রাজ্জাক হোসেন। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ দুটি ধারায় বিভক্ত। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছিত টুটুল। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বলয়ের নেতা শওকত আলী ও মাহমুদ উস সামাদ কয়েস বলয়ের নেতা হচ্ছেন আবদুল বাছিত টুটুল।
বালাগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বহুধা বিভক্ত। একদিকে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্থাকুর রহমান মফুর, অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক আনহার মিয়া। আনহার মিয়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং মফুরের অনুসারী। মফুর-আনহার গ্রুপের মধ্যে আবার কয়েকটি উপ-গ্রুপ রয়েছে। আনহার মিয়ার আস্থাভাজন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক জুনেদ মিয়ার নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি গ্রুপ রয়েছে। মফুরের কাছের মানুষ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তুহিন মনসুরের নেতৃত্বেও রয়েছে একটি গ্রুপ।
উল্লেখ্য : সিলেট আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন সদস্য, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আ ন ম শফিকুল হক স্মরণে শোকসভা প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিলেট আওয়ামী লীগ নিয়ে তিনি বলেন, সিলেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা সংগঠনে কলহ। এই কোন্দল মেটাতে না পারলে আমরা ফল কোনোদিনও পাবো না। নির্বাচনে আমরা হেরে যাই, কারণ আমরা নিজেরাই নিজেদের শত্রু।
তিনি বলেন, আপন ঘরে যার শত্রু, তার শত্রুতা করার জন্য বাইরের শত্রু দরকার নেই। সিলেটের অবস্থাও তেমন। তাই বিভক্তি ঝেড়ে ফেলে ঘরের মধ্যে ঘর করা, পকেট কমিটি করা- এসব থেকে বিরত থেকে দুঃসময়ের কর্মীদের কোণঠাসা না করে তাদের দলের বিভিন্ন পদে স্থান দিন।
মঞ্চে বসা নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিভেদ সৃষ্টির মতো কাজ আপনারা পরিহার করবেন। আপনারা দলাদলি না করলে কর্মীদের মধ্যে দলাদলি হবে না।
সর্বশেষ চলতি মাসের ২ অক্টোবর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিশ্বনাথ ,ওসমানীনগর,দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার উপজেলায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech