সিলেটে ১২ উপজেলা আ’লীগের কমিটি : পিছু ছাড়েনি বিতর্ক

প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০১৯

সিলেটে ১২ উপজেলা আ’লীগের কমিটি : পিছু ছাড়েনি বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদন : সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৩ উপজেলার মধ্যে ১২ উপজেলার নতুন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঘুরেফিরে থাকছেন পুরোনোরাই। সম্প্রতি কাউন্সিল ও সম্মেলন হওয়া কয়েকটি উপজেলা কমিটি বিশ্নেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কয়েক বছর আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত ৫ উপজেলা এবং নতুন করে কাউন্সিল হওয়া ৭ উপজেলার মধ্যে অধিকাংশ উপজেলার কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আগামী ২৪ ও ২৫ নভেম্বর কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি উপজেলায় নতুন করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ এবং আগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তালিকা জমা নিচ্ছেন জেলা নেতারা।

সর্বশেষ গত রোববার জৈন্তাপুর উপজেলা এবং গতকাল সোমবার কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পেয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদে স্থান পাওয়া দায়িত্বশীলদের বিচার-বিশ্নেষণ করে আগামীকাল বুধবার কার্যকরী কমিটির সভায় অনুমোদন দেবে জেলা আওয়ামী লীগ। এখনও যেসব কমিটির তালিকা জমা হয়নি তা চলতি মাসেই জমা নিয়ে অনুমোদন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ৫ ডিসেম্বর নির্দিষ্ট তারিখে জেলা সম্মেলন হবে। উপজেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ পর্যায়ে। বুধবার কার্যকরী কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে।

সূত্র মতে, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে ৬ উপজেলার কাউন্সিল করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন জেলা নেতারা। এ ছাড়া ২০০৩ থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি উপজেলার কমিটি ও সম্মেলন হয়। এরমধ্যে কানাইঘাট উপজেলায় করা হয়েছিল আহ্বায়ক কমিটি। বাকি ৭ উপজেলায় সম্মেলন হলেও কাউন্সিল হয়নি। ফলে ৫ উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং একটিতে আহ্বায়ক কমিটির পদ ঘোষণা করা হলেও অন্য উপজেলাগুলো থেকে যায় কমিটিবিহীন। শুধু বছরখানেক আগে বিশ্বনাথ উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর গত ৩১ অক্টোবর থেকে উপজেলা সম্মেলন শুরু করেন জেলা নেতারা। প্রথম দিনই আগে কাউন্সিল না হওয়া উপজেলার মধ্যে বালাগঞ্জ উপজেলা দিয়ে কমিটি গঠন কার্যক্রম শুরু হয়। বালাগঞ্জে নতুন কমিটিতে দায়িত্ব পান আগের কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মফুর আলী ও সাধারণ সম্পাদক হন আনহার মিয়া।

শনিবার পর্যন্ত কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে কেবল বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১৬ বছর পর ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান সভাপতি ও ওই কমিটির দপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্য উপজেলাগুলোতে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করা হয়। এরমধ্যে কানাইঘাটে সভাপতির দায়িত্ব পান আগের আহ্বায়ক লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম। কোম্পানীগঞ্জে ১৫ বছর পর আবার সভাপতি হন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদ ও সাধারণ সম্পাদক হন আগের কমিটির একই পদে থাকা আপ্তাব আলী কালা মিয়া। গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আগের কমিটির মো. ইব্রাহিমকে সভাপতি ও গোলাম কিবরিয়া হেলালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষায় থাকা জৈন্তাপুর উপজেলায় রোববার সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। শুধু পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা নিয়েছেন জেলা নেতারা। এ উপজেলায় সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ মারা যাওয়ায় তার স্থলে নতুন সভাপতি বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদকে যুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীই থাকছেন। জকিগঞ্জ উপজেলায় শনিবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা থাকলেও বৈঠক করে তালিকা নিয়েছেন জেলা নেতারা। বর্তমানে এ কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন লোকমান আহমদ চৌধুরী। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষায় থাকা ওসমানীনগরে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি হিসেবে আছেন আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা কমিটিতে সভাপতি শওকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক আছেন আবদুল বাছিত চৌধুরী। ১৫ বছর আগে দক্ষিণ সুরমায় হওয়া কমিটির সভাপতি ডা. আবদুস শুকুর মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান ছয়ফুল আলম। সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন রইছ আলী। সিলেট সদর উপজেলায় ২০০৭ সাল থেকে বাদশা মিয়া সভাপতি ও নিজাম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এসব কমিটিতে খুব একটা রদবদল হবে না বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা। পুরোনোরাই ঘুরেফিরে এসব কমিটির মূল দায়িত্বে আছেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী বলেন, কমিটিতে কিছু পরিবর্তন আসছে। শতভাগ পুরোনো বলা যায় না।

জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী বলেন, ২০১৫ সালে সম্মেলন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে উপজেলা সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ মারা গেছেন। এবার নতুন সভাপতিসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর