ঈদ যেন সবার জন্য সমান

প্রকাশিত: ৪:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২১

ঈদ যেন সবার জন্য সমান

আফতাব চৌধুরী
মানুষ আনন্দপ্রিয়। আনন্দ পেতে সবাই ভালোবাসে। দুঃখ-কষ্ট লাঘবের চেষ্টায় তারা সদা তৎপর। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ধনী-গরিব, শত্রুমিত্র সকল শ্রেণীর মানুষই আনন্দময় জীবন গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু আনন্দ ও সুখময় অবস্থা অনেকের জীবনে বয়ে আসে না। ফলে তারা দুঃখ-কষ্ট ও বঞ্চনার শিকার হয়ে দিনাতিপাত করে। তবুও তারা সুখ, আনন্দ ও খুশির সোনার হরিণটিকে ধরতে সদাসর্বদা ধাবমান। যারা অল্পে তুষ্ট, যারা সামান্য কিছু পেলেই খুশি ও আনন্দিত হয় তারাসহ সব শ্রেণীর মানুষের জন্য মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, ইসলাম ধর্মে দুটি ঈদ রয়েছে। ঈদ অর্থ আনন্দ বা খুশি। দুটি ঈদের মধ্যে একটি হল ঈদ-উল-ফিতর আর অন্যটি ঈদ-উল-আজহা।

 

বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে ঈদ-উল-ফিতর, যা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বৃহত্তর আনন্দ-উৎসবের দিন। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস, রোজার মাস পবিত্র মাহে রমজান শেষে ঈদ-ইল-ফিতরের বাঁকা চাঁদ নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। এ আনন্দ রোজাদার মুসলিমের। যারা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় ছিলেন রত, যারা ইবাদত করেছেন, যাকাত আদায় করেছেন, সদকাহ করেছেন, জাকাতুল ফিতর আদায় করে দরিদ্রের হাত পাতা বন্ধ করেছেন, যারা লাইলাতুল কদর খুঁজেছেন, যারা আত্মিকতা ও ফেরেশতার চরিত্র অর্জন, তার উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে প্রবৃত্তির দমন ও বিশুদ্ধকরণ এবং আত্মতুষ্টি, ধৈর্য, আল্লাহভীতির মতো গুণসমূহের উন্নতি ও বিকাশে রোজা রেখেছেন।

 

রোজার মাধ্যমে পেট ও প্রবৃত্তির জৈবিক ও পাশবিক তাড়না থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে ঊর্ধ্বজগৎ তথা আপন স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপনে সক্ষম যারা হয়েছেন, যারা রোজার উদ্দেশ্যের পরিপন্থী যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম থেকে বিরত থেকেছেন, আর যারা সব ধরনের পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত থেকেছেন-তাদের জন্য এ আনন্দ সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কিছু লোকের আনন্দ কেবল জাগতিক আনন্দেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে আল্লাহর প্রকৃত বান্দাহদের আনন্দ একই সাথে জাগতিক এবং পারলৌকিক। ঈদ আসে, ঈদ যায়। এই ঈদকে ঘিরেই মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ধনী-গরিব, শত্রু-মিত্র সবার অনুপম প্রত্যাশা, অনুপম আনন্দ। তারা ধনী-গরিবের, শত্রু-মিত্রের ব্যবধান ভুলে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করবে। ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নেবে সবাই। পরস্পরের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করবে। সবার মধ্যে পরোপকার ও ত্যাগের মহান আদর্শে অনুপ্রোণিত হওয়ার অনুপম প্রত্যাশা জেগে উঠবে।

 

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ এসেছে। ঈদ যেন হয় সবার জন্য সমান। এই ঈদও রমজানের শিক্ষায় মানুষ যখন পরস্পরের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ত্যাগের, ভ্রাতৃত্বের, সম্প্রীতির ও সহমর্মিতার মহান আদর্শ অনুধাবন করে অতিথিপরায়ণ হয় এবং অন্য রোজাদারকে ইফতার-সেহরি খাওয়ায়, যখন গরিব-মিসকিন রোজাদারদের মধ্যে ইফতার বন্টন করতে যায় তখন দেখা যায় অসাধূ মজুতদার ব্যবসায়ীরা অত্যধিক লাভের তাড়নায় থেকে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সামর্থ্য থাকে না। কেননা তারা পারে না দু’মুঠো খাবার সঠিকভাবে তুলে দিতে তাদের পোষ্যদের মুখে। আর কীভাবেই বা দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতিতে তারা তাদের প্রিয়জনদের নূন্যতম চাহিদা পূরণ করে তাদের মুখে হাসি ফোটাবে?

 

সরকার ইচ্ছে করলে সুযোগ-সন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে। সার্বিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুললে মুনাফাখোর অসৎ মজুতদার ব্যবসায়ীদের মূলোৎপাটন সম্ভব। সরকারের উচিত, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিকে টেনে ধরা। অসৎ ব্যবসায়ীদের কঠোরহস্তে দমন করা। আর সমাজের নিম্নশ্রেণীর লোকের মাঝে নগদ অর্থসহ কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা। সমাজের বিত্তবানদের যাকাত ও ফিতরা প্রদানে উৎসাহ প্রদান করা। অন্যদিকে ধনবান, দানবীর মুসলিমদের উচিত আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে তার দরিদ্র প্রতিবেশীর মধ্যে অর্থ ও প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করে তাদের মাঝে ঈদের আনন্দ বিলিয়ে দেওয়া।

 

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ বুঝতে পারে ক্ষুধা ও না খেয়ে থাকার যন্ত্রণা। তাই মাহে রমজানের এ শিক্ষাকে অনুধাবন করে অভাবী ও দরিদ্র মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে আমাদেরও ভূমিকা রাখা দরকার। আমরা আশা করি, সিয়াম সাধনা ও ঈদ-উল-ফিতরের মহান শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ সব অসাধূতা পরিহার করে ফিরে আসবে সৎ, ন্যায় ও কল্যাণের পথে। ঈদ আনন্দ ও খুশির ফল্গুধারা বিলিয়ে দেবে সবার মাঝে, সবার তরে। ধনী-গরিব সবাই ঈদের দিনে মেতে উঠবে আনন্দ ও খুশিতে । সবাই পরস্পরের সাক্ষাতে বলবে-ঈদ মোবারক।

 

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর