হাবিবের মাথায় জয়ের মুকুট, বাকিদের ভরাডুবি

প্রকাশিত: ৭:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১

হাবিবের মাথায় জয়ের মুকুট, বাকিদের ভরাডুবি

আব্দুল খালিক
সিলেট-৩ আসনের (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) উপনির্বাচনে জয়ের মুকুট উঠেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের মাথায়। ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে বিশাল ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়লাভ করেছেন। সবগুলো কেন্দ্র মিলিয়ে হাবিবের নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৮৯ হাজার ৭০৫ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল) পেয়েছেন ২৪ হাজার ৬০৪ ভোট। সে হিসেবে বেসরকারি ফলাফলে সিলেট-৩ আসনে ৬৫৩১২ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন হাবিবুর রহমান হাবিব।

 

শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

 

নির্বাচনের শুরু থেকেই স্থানীয়ভাবে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন হাবিব। এরপর শেষ সময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনে আরও শক্ত হয় জয়ের ভিত। বৈশিক মহামারি করোনাকালেও নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বার বার ছুটে গেছেন হাবিব। তাদের পাশে থেকে উপস্থিত সার্বিক সহযোগিতাসহ আগামীতেও পাশে থাকার আশ্বাস মানুষের মনে তার প্রতি ভালোবাসার সঞ্চার হয়। এরই ফলশ্রুতিতে শনিবার দিনভর নৌকায় মার্কাট ভোট প্রদান করে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করেন ভোটাররা।

 

তবে, শেষ পর্যন্ত সিলেট-৩ আসনের নির্বাচন বোদ্ধাদের কথাই প্রতিফলিত হয়েছে। তারা জানিয়েছিলেন, এ নির্বাচন নিয়ে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। নির্বাচনী এলাকার কোথাও কোনো আলোচনাও নেই। সাধারণত, নির্বাচন আসলে চায়ের স্টল থেকে শুরু সর্বত্র কেবল নির্বাচনী আলোচনাই চলে থাকে। পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা, যেকোন মূল্যে তাকে বিজয়ী করা ইত্যাদিসহ নানা কথা চলে চায়ের চুমুকে। কিন্তু এ নির্বাচনে মানুষকে বেশিই অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এতদসত্বেও কেন্দ্রে যে প্রার্থী বেশি ভোটার আনতে পারবেন শেষ পর্যন্ত তিনিই বিজয়ী হবেন। এখন প্রার্থীদের জয় নির্ভর করছে ভোটারদের কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে আসার উপর। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে, এর মধ্যে বেশি ভোটার ছিলেন নৌকার পক্ষের।

 

এদিকে, এমন ফলাফলের পর জয়ী নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।

 

এর আগে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে ১৪৯টি কেন্দ্রে শনিবার সকাল ৮টায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সকাল থেকেই দিনভর অনেকটা নীরবতার মধ্যদিয়েই শেষ হয় উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। শুরু থেকে ভোটারদের অনাগ্রহের বিষয়টি দেখা গেলেও প্রার্থীরা তা উড়িয়ে দেন। বলেন, নীরব ভোটে বিপ্লব হবে।’ কিন্তু তাদের সকল কিছুকেই মিথ্যা প্রমাণিত করল ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোর নীরবতা। তাইতো ফাঁকা কেন্দ্রে আনসার সদস্যদেরও অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। সকাল থেকে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪ টায়। কিন্তু সরেজমিনে অধিকাংশ কেন্দ্রই ফাঁকা দেখা গেছে। কোন কোন কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট ছাড়া বাকি তিন প্রার্থীরই এজেন্টই ছিলেন না। খোশগল্পে দিন কাটে আনসার সদস্যদের।

 

যদিও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক তার কর্মী-সমর্থকদের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।

 

অপরদিকে সকালে মোগলাবাজার এলাকায় রেবতি রেমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ না মেলায় প্রথমে ভোট না দিয়েই ফিরতে হয় জাপার প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিককে। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে গিয়ে ফের ভোট দেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১১ মার্চ এ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশন থেকে তফসিল ঘোষণা করা হলেও কয়েক দফায় পিছিয়ে চূড়ান্ত হয় ৪ সেপ্টেম্বর। এ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি। আর মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮ শত ৭৩ জন। মোট প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভোটারের মধ্যে বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫৯১ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

 

এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে আতিকুর রহমান আতিক, দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতি করলেও স্বতন্ত্র থেকে মোটরকার প্রতীকে শফি আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকে জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়াসহ মোট চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর