শ্রুতি পিঠা উৎসবে ঢল

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৩

শ্রুতি পিঠা উৎসবে ঢল

হিম হিম কুয়াশার আবরণে ষড়ঋতুর পরম্পরায় বাংলার প্রকৃতিতে আজ ফিরে আসে পিঠা পার্বণের উৎসব। বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়নের শুরু হতে। অগ্রহায়ন মানেই কৃষকের গোলায় নতুন ধান। কৃষাণির ব্যস্ততা দিনভর।নতুন চালের পিঠার ঘ্রাণে আমোদিত চারদিক। গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ। পিঠা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতি।
বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব নবান্ন। অনাদিকাল থেকে কৃষিসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। পূর্বে অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো নবান্ন উৎসব। সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই আমাদের গ্রামবাংলায় চলে নানা উৎসব-আয়োজন। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব। এবছর শীত শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। করোনা ক্রান্তি লগ্ন শেষে আবারো নতুন ভাবে জেগে ওঠার আহ্বানে শুক্রবার ২০ জানুয়ারি ২৩ সুবিদবাজারস্থ ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে প্রতিবারের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি সিলেট আয়োজন করেছিল দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ১৪২৯ বাংলা।
এবার শ্রুতি পিঠা উৎসবের একবিংশ তম আয়োজন। দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম অধিবেশন উদ্বোধন করেন বরেণ্য আবৃত্তি ও অভিনয় শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রুতি সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত। উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবির অধ্যাপক হিমাদ্রী শেখর রায়, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হুসনে আরা।
সকাল ১০ টায় প্রথম অধিবেশনের পর দ্বিতীয় পর্বে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ এস এম কাসেম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ, ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক ব্রজেন কুমার দাশ। এবার শ্রুতি সম্মাননা প্রদান করা হয় বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী এবং বীরমুক্তিযোদ্ধো ডালিয়া আহমেদ কে।
তৃতীয় পর্বে সকাল ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নিরাজ কুমার জয়সওয়াল-সহকারী হাই কমিশনার -ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন, উদ্বোধনী পর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব মাসকুরে সাত্তার কল্লোল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শামসুল আলম সেলিম, রজত কান্তি গুপ্ত, শ্রুতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত প্রমুখ।
বক্তারা বলেন শীত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি হলুদ-সবুজ রঙে ছেয়ে যায়। পাকা ধানের পাশাপাশি প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেয় গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম আর বকফুল। এই শোভা দেখে আনন্দে নেচে ওঠে কৃৃষকের মন। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকম খাবার। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালির বিশেষ অংশ নবান্ন জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফুটে ওঠেছে অনন্য মহিমায়। কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন-
‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/ মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’ করোনা কাল শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের বারতায় শীত জেঁকে বসেছে। মানুষ আবারো জেগে উঠছে শুদ্ধ সংস্কৃতির শুভ বারতায়। করোনাকে জয় করে আবারো এগিয়ে যাবে সমাজ এবং সংস্কৃতি।
দ্বিতীয় অধিবেশন দুপুর ২.৩০ প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মু: মাসুদ রানা
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মেট্রোপলিটন পুলিশ,সিলেট, গৌতম দেব অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার।
দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে- ছন্দনৃত্যালয়, গীতবিতান বাংলাদেশ, দ্বৈতস্বর, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, সিলেট,পাঠশালা, আনন্দলোক, মুক্তাক্ষর,আর্তনাদ, কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ, সংগীত নিকেতন, সুরের ভূবন, নৃত্যাঞ্জলি, অন্বেষা শিল্পী গোষ্ঠী, নৃত্যশৈলী, রাধারমণ স্মৃতি তর্পণ, প্রমা দেবী ও তার দল, ভাবুক, ললিত মঞ্জরি, নৃত্যরথ প্রমুখ।
আমন্ত্রিত আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ, মাসকুরে সাত্তার কল্লোল, শামীমা চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, নাজমা পারভীন, মিসবাহিল মোকার রাবিন,পলি পারভীন। আমন্ত্রিত সংগীতশিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রদীপ মল্লিক, ইকবাল শাই, লিংকন দাশ এবং বাউলা কানু। আরো উপস্থিত থাকবেন ফকির আব্দুল কুদ্দুস ও তার দল কুষ্টিয়া।
দিনব্যাপী পিঠা প্রতিযোগিতায় প্রায় অর্ধ শতাধিক স্টল অংশ নেয়। বাহারী রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে তারা বসেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে গিয়েছিল পিঠা উৎসবের দিনব্যাপী আয়োজনে। ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব ঘিরে নগর জুড়ে ছিলো উৎসব উৎসব আমেজ। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে পিঠা উৎসবের একবিংশ তম আয়োজন শেষ হয়। বিজ্ঞপ্তি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর