ঢাকা ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার দাবি
ডেস্ক প্রতিবেদন
অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও পাথর সন্ত্রাসে বিপন্ন সিলেটের রাতারগুল ও বিছনাকান্দি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র একটি পর্যবেক দল সম্প্রতি সিলেটের পিয়াইন নদীর নিকটবর্তী বিছনাকান্দি ও সারি-গোয়াইন নদীর মিলিত প্রবাহ চেঙ্গেরখাল নদী তীরের মিঠা পানির জলারবন রাতারগুল-এর বর্তমান অবস্থা পর্যবেণ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল। পর্যবেক দল ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিছনাকান্দি ও ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতারগুল জলারবন পর্যবেণ করেন।
এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য ও সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, বাপা সিলেট শাখার বদরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। বাপা প্রতিনিধিদের পরিদর্শনকালে এলাকা দুটির সার্বিক অবস্থা পর্যবেণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
এতে বলা হয়, অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন করার কারণে বিছনাকান্দি ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনে রাতারগুল সঙ্কটাপন্ন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে বিছনাকান্দি ও রাতারগুলকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা প্রয়োজন।
বাপার পর্যবেণে বলা হয়, দীর্ঘদিন থেকেই অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন করার কারণে বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকায় এমন কিছু মৃত্যুকূপ তৈরি হয়েছে যা পর্যটকদের জীবন বিপন্ন করতে পারে। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করার ফলে পরিত্যক্ত পাথর কোয়ারিতে সৃষ্টি হওয়া চোরাবালীতে অসাবধানতাবশতঃ পর্যটকরা আটকে যেতে পারেন। অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত পর্যটন বিছনাকান্দি এলাকাকে একটি মেলাস্থলে পরিণত করেছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিছানাকান্দির সৌন্দর্য্য দর্শনে পর্যটকদের প্রলুব্ধ করা হলেও অদ্যাবধি গড়ে তোলা হয়নি পর্যটকবান্ধব সুব্যবস্থা। হাজার হাজার পর্যটকের উপস্থিতি থাকা সত্বেও এখানে কোন ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপ নেই। বিরূপ আওহাওয়ায় নারী-শিশুদের জন্য নেই আশ্রয়স্থল, রয়েছে শৌচাগারের অভাব। আকস্মিকভাবে উজান থেকে ঢল নেমে আসার সতর্কিকরণ ব্যাবস্থা না থাকায় ভবিষ্যতে ভয়াবহ দূর্ঘটনার আশংকা করেছেন বাপা’র পর্যবেকেরা।
পর্যবেকদল বিছনাকান্দি এলাকায় সারাদিন অবস্থান করলেও পর্যটক পুলিশের কোন টহল দেখতে পাননি। পানিতে ভাসমান বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা একটি খাবার হোটেল রয়েছে, যার বিরুদ্ধে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিনিধি দল, পিয়াইন নদী পথে যাত্রাকালে ল্য করেন যত্রতত্র গ্রামের ভেতর ক্রাশার মেশিনের ব্যাবহার। এছাড়া নদীর তট ও ঢালের গঠনগত পরিবর্তন করে বিভিন্নস্থানে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, যা নদী আইনে অপরাধ।
রাতারগুল জলারবন পরিদর্শনকালে বাপার প্রতিনিধি দল অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত পর্যটনে সরব এই বিশেষায়িত দ্র বনকে একটি বিনোদন পার্ক হিসাবে প্রত্য করেন। ছয় বছর পূর্বে ২০১২ সালে বাপার প্রতিনিধি দলের সর্বপ্রথম পরিদর্শনকালের দেখা অবস্থার সাথে তুলনা করে পর্যবেক দলের প থেকে বলা হয়, দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলারবন হিসাবে স্বীকৃত রাতারগুলে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন চলছে। পর্যটকদের উচ্চস্বরের চীৎকার, বাদ্যযন্ত্র ব্যাবহার, যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল ও খাবারের প্যাকেট ফেলা নিয়ন্ত্রণে বন-বিভাগ এই ছয় বছরেও কোন পরিকল্পিত ব্যাবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি। বরং, পরিবেশবাদীদের প্রবল আপত্তির মুখে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে বন ধ্বংসের শুভ সূচনা করে। বনের তিন প্রান্ত থেকে আসা শতাধিক নৌকার পর্যবেক দল কংক্রিটের এই ওয়াচ টাওয়ার পরিদর্শন করেন। পর্যবেক দল, ওয়াচ টাওয়ারে শতাধিক পর্যটকের উপস্থিতি প্রত্য করেছেন। অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রীতে তৈরি এই ওয়াচ টাওয়ার, যে কোনও সময় ভেঙ্গে পড়ে পর্যটকদের প্রাণহানি ঘটাতে পারে বলে প্রতিবেদনে আশংকা প্রকাশ করেছেন।
পর্যবেক দল ছয় বছরে রাতারগুল বনের জীববৈচ্যি চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে ধারণা করেছেন। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে সেই ধারণার স্বপে বক্তব্য পেয়েছেন। পর্যবেক দল বিভিন্ন স্থানে হিজল-করচ গাছ নিধনের চিহ্ন দেখেছেন। পর্যটকদের বনের গাছে চড়ে ছবি তোলার দৃশ্যও দেখা গেছে। যদিও ৩১ মে ২০১৫-এর প্রজ্ঞাপনে রাতারগুলকে বন বিভাগ বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরণ এলাকা ঘোষণা করেছে কিন্তু বিগত ছয় বছর ধরে বন বিভাগের অপেশাদারিত্ব ও গাফিলতির কারণে রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত করার ষোলকলাপূর্ণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে রাতারগুল, বিছনাকান্দি, জাফোলং, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়াসহ প্রত্যাকটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত স্থান রায় স্থানীয় নাগরিকদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে নাগরিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার মতামত ব্যাক্ত করা হয়।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech