ছাতকে বিএনপি-জামায়াতের গণপিটুনিতে অটোরিকশা চালক খুন

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০১৬

ছাতকে বিএনপি-জামায়াতের গণপিটুনিতে অটোরিকশা চালক খুন

ছাতক প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানা বিএনপি ও জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল থেকে এক সিএনজি অটোরিকশা চালককে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রবিবার (২৬ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার বুরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ হত্যাকান্ড ঘটে।

নিহত সিএনজি অটোরিকশা চালকের নাম রফিক মিয়া। তিনি ছাতক উপজেলার বরাটুকা গ্রামের মৃত সালাম মিয়ার ছেলে।

রফিকের বড়ভাই বশির মিয়া জানান, প্রতিদিনের ন্যায় আজও (রবিবার, ২৬ জুন) সকাল ৯টার দিকে গাড়ি (সুনামগঞ্জ-থ-১১-৪৩৫৪) নিয়ে বের হন রফিক। এরপর বেলা পৌনে ২টার দিকে জালালপুর বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে বুরাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আসামাত্র বিএনপি-জামায়াতের বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েন। গাড়িতে রোগী থাকার পরও বিক্ষোভকারীরা তার পথ আটকে রাখেন। এরপর যাত্রীদের জোরাজুরিতে তিনি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা ছেড়ে দিতে বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করেন। এতে বিক্ষুদ্ধ বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে টেনে হিচড়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে সংঘবদ্ধভাবে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন।

প্রত্যক্ষদর্শী আবুল ফজল, যুবায়ের হোসেন, জয়নাল আবেদীন ও আয়নাল হোসেন বলেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। হঠাৎ দেখেন বিক্ষোভকারীরা রফিককে মাটিতে ফেলে কিল, ঘুষি ও লাথি মারছে। প্রথমে তারা ভয়ে ইতস্ততবোধ করলেও পরে উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। এরপর তাকে বিক্ষোভকারীদের কবল থেকে মুক্ত করে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ মৃত ঘোষণা করেন।

শোকাহত বশির মিয়া আর্তনাদ করতে করতে বলেন, ‘আমার ভাইকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেছে। তিনি যাত্রীদের কথা রাখতে গিয়েই তাদের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা অনুরোধ না রেখে উল্টো আমার ভাইকে মাটিতে ফেলে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলল। আমি খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, তাদের ফাঁশি চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে অবস্থানরত স্বাক্ষীদের সাথে আলাপ করে বিস্তারিত জানতে পারি। এরপর ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষদের জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হই যে, আমার ভাই কোনো দোষ করেনি। তাকে অন্যায়ভাবে মেরে ফেলা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। নিহত রফিকের বড়ভাই বশির মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তারেক আহমদ (২১)সহ ৭ জন এজাহার নামীয় আসামি রয়েছেন। এছাড়াও অজ্ঞাতনামাসহ মোট ১৫/২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ (রবিবার) দুপুর থেকে সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি-জামায়াত। তারা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। এসময় অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরী সেবাদানকারী যানও বিক্ষোভস্থলে আটকে দেওয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। সড়কে বিএনপি-জামায়াতের এমন নৈরাজ্য চললেও কোনো অ্যাকশনে যায়নি থানা পুলিশ। প্রতিটি স্পটে থানা পুলিশের টহল টিম থাকলেও তাদের কোনোরূপ তৎপরতা চোখে পড়েনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর