ঢাকা ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদন:: সিলেটের কুখ্যাত রাজাকারের পুত্র এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন আত্মসাত ও অপরাধমূলক মূলক অসংখ্য কর্মকান্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল বিভিন্ন সংস্থা আজ থেকে এ তদন্ত শুরু করছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে।
তিনিই হচ্ছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ও কানাইঘাট উপজেলার সাতবাক ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সাতবাক ইউনিয়নে জুলাই গ্রামর তালিকাভুক্ত রাজাকার মৃত আব্দুল মান্নান ওরফে বারহালী মিয়াছাব’র পুত্র তিনি।অনিয়ম-আত্মসাত,সরকারী জলমহাল, পাথরমহাল লুটতরাজ, জনহয়রানী ও প্রশাসনিক তদবীর বানিজ্য, মিথ্যাচারের মাধ্যমে সরকর প্রধানের অনুদান গ্রহণ-আত্মসাত, সরকার ও দলীয় শৃংখলা পরিপন্থী অপ-তৎপরতা-সহ অভিযোগের অন্তঃ নেই মস্তাক আহমদ পলাশের বিরুদ্ধে।
এমনকি বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও আত্মসাতমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৩০টিরও বেশি মামলা রয়েছে আদালতে। সূত্রে প্রকাশ, জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রাম থেকে নানা অভিযোগে বিতাড়িত হয়ে ‘মিয়াছাব’ সেজে কানাইঘাট উপজেলার জুলাই গ্রামে অবস্থান নেন আব্দুল মান্নান। আর এ জন্য তাকে বলা হতো ‘বারহালী মিয়াছাব’।
কানাইঘাটে বসবাস কালে ১৯৭১ সালে আব্দুল মান্নান ছিলেন কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্য। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আব্দুল মান্নান ছিলেন আত্মগোপনে। স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর পরই আব্দুল মান্নান ও তার সহযোগীরা আবার প্রকাশ্যে চলে আসে।
আশির দশকের শেষে দিকে আব্দুল মান্নান সৌদী আরবে চলে যান । কিছুদিন পর দেশে ফিরে শুরু করেন আদম ব্যবসা। পরবর্তীতে অনেকের লাখ লাখ টাকা-আত্মসাত করেই মারা যান আব্দুল মান্নান। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড কর্তৃক প্রকাশিত রাণাঙ্গন-৭১ পুস্তকে উপজেলা ভিত্তিক রাজকারের তালিকায় মস্তাক আহমদ পলাশের পিতা আব্দুল মান্নান হচ্ছেন ২২ নং ক্রমিকের রাজাকার-আলবদর।
একাত্তুরের সেই সশস্ত্র আলবদর ও শান্তি কমিটির নেতা আব্দুল মান্নানের পুত্র মস্তাক আহমদ পলাশ। কালক্রমে খোলস বদলে আওয়ামী লীগের লেবাস পরে হয়ে যান স্বাধীনতা স্ব-পক্ষের লোক। হয়ে যান জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আওয়ামী লীগের কো-অডিনেটর।
মস্তাক আহমদ পলাশ আওয়ামী লীগের ছদ্ধাবরনে শাসকদলের অবাঁধ সুযোগ সুবিধে গ্রহণ করলেও মূলত তিনি রাজাকার প্রজন্ম ও আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু আদশের্র বিরোধী। স্বাধীনতা বিরোধী ঘরানার পুত্র মস্তাক আহমদ পলাশ পার্থিব ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে রাজনীতির খোলস বদলে প্রথমে কানাইঘাট উপজেলার সাতবাক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
আওয়ামী লীগের লেবাস পরেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব বর্তমানে পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত হারিছ চৌধুরীর অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন। আর এজন্য ২০০৫ সালের ২৮ মে কানাইঘাট থানা আওয়ামী লীগ লিখিতভাবে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছিল। পরবর্তীতে নানা কৌশল ও যোগাযোগী মূলে তিনি যোগদান করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে।
বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক পদে রয়েছেন। রাজাকার পুত্র মস্তাক আহমদ পলাশ একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে প্রশাসনের উপর দাপট খাটিয়ে কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর মহাল লুটে পুটে খেয়েছেন। বদলে দিয়েছেন ওই এলাকায় দেশের মানচিত্র। থানা পুলিশের উপর প্রভাব বিস্তার করে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হয়রানীও করিয়েছেন।
করেছেন কোটি কোটি টাকার তদবীর ও মামলা বানিজ্য। টাকার লোভে সকল নৈতিকতাকে বিসর্জন দিতে পারেন তিনি। তাই জীবিত মস্তাক আহমদ পলাশ নিজেকে মৃত সাজিয়ে স্বীয়পুত্র মোস্তাফিজ পলাশ মুনেমকে এতীম বানিয়ে ২০১৭ সালে সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে মোটা অংকের টাকা অনুদান গ্রহণ করতেও কুণ্ঠবোধ করেন নি । আর এ সব কারনেই সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটে যে ৫ রাজাকার পুত্রকে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছিল সেই চিঠিতে ছিলেন রাজাকার পুত্র মস্তাক আহমদ পলাশও। যা সেই সময়ে বহু জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশ পায়।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ আওয়ামী লীগ নেতা হয়েও ২০১৫ সালে জকিগঞ্জে জামায়াত-হেফাজতের সভায় প্রধান অতিথি হয়ে যোগ দেন। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা কঠোক্তি করা হলেও তিনি এর নুন্যতম প্রতিবাদ করেন নি। ফলে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ মুক্তিযোদ্ধা-সহ এলাকার স্বাধীনতা স্বপক্ষের লোকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শিবিরে যোগ দেন মস্তাক আহমদ পলাশ।
ফলে বর্তমানে দল থেকে বহিস্কারের তালিকায় রয়েছেন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতা হওয়ার আগে মস্তাক আহমদ পলাশের সম্পত্তি ছিল নিজ বাড়িতে পৈত্রিক মাত্র ১৭ শতক ভূমি। চেয়ারম্যান পদ ও দলীয় পদের অপব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি-আত্মসাত, তদবীর বানিজ্য ও অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে কানাইঘাট উপজেলার সকল জলমহাল পাথর মহাল একাই গ্রাস করে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালিয়েছেন। জিরো থেকে হিরো হয়ে শহরে মালিক হয়েছেন একাধিক গাড়ি-বাড়ি ও শত শত কোটি টাকার। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশের বিরুদ্ধে নিয়মিত ৩০টি মামলা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, দুর্নীীত দমন কমিশন দুদকসহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহলে অভিযোগের অন্তঃ নেই। কিন্তু অজ্ঞাত কারেণে সে সব অভিযোগ আমলে নেয়া হয় নি, হয় নি অভিযোগ সমূহের যথাযথ তদন্ত । পাশপাশি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দল ও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
তাই এবার তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেয়া অভিযোগের তদন্ত করার জন্য গত ১৮ জুন নির্দেশ দেন সিলেটের জেলা প্রশাসক। এর আগে গত ২৮মে দর্নীতি দমন কমিশন দুদক ঢাকা থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও আত্মসাতের বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। গত ২১ আগস্ট ও ২৫ সেপ্টেম্বর এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য ধার্য থাকলেও তদন্ত শেষ হয়নি।
ফলে আবার নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে প্রকাশ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশের অনিয়ম-দুর্নীতি ও আত্মসাতের তদন্ত এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ সিলেটের আপামর জনসাধারনে দাবি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech