ঢাকা ৫ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:২৬ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০১৯
কানাইঘাট সংবাদদাতা
সিলেটের কানাইঘাটে পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেওয়ায় ফারুক আহমদ নামে এক যুবক কে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। স্ত্রী হোসনা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফাসহ সহযোগিরা মিলে ফারুকের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে সেফটি ট্যাংকির ভিতর রাখে। এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি হত্যাকাÐের মূল হোতা ফারুকের স্ত্রী হোসনা বেগমের। তাকে আটক করেছে কানাইঘাট থানা পুলিশ। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর সূত্র ধরে হত্যাকাÐের দু’দিন পর বুধবার ভোরে সেফটি ট্যাংকির ভিতর থেকে ফারুকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিমর্ম হত্যাকাÐটি ঘটেছে রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফারুক আহমদের স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী হোসনা বেগম(২৮)’র সাথে স্বামীর চাচাতো ভাই প্রতিবেশি মোস্তফা (২৭)’র পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্ত্রী হোসনা বেগমকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কয়েকবার শাসন করেন প্রবাস ফেরত স্বামী ফারুক আহমদ। তিনি তার স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফাকেও শাসান। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে স্ত্রী হোসনা ও তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফা মিলে ফারুককে খুন করার পরিকল্পনা করে। গত রবিবার গভীর রাতে ফারুক আহমদ যখন তার নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন, তখন স্ত্রী হোসনা বেগম, প্রেমিক মোস্তফা ও তাদের অপর দুই সহযোগী মিলে ঘুমন্ত ফারুককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ী আঘাত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কাটা হয়। হত্যার পর তার রক্তাক্ত লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশর্^বর্তী গোরকপুর গ্রামের প্রবাসী মাসুক আহমদের বাড়ির একটি সেফটি ট্যাংকিতে ফেলে রাাখ হয়।
এদিকে ফারুক আহমদের কোন সন্ধান না পেয়ে তার স্বজনরা স্ত্রী হোসনা বেগমকে ফারুক কোথায় রয়েছে জানতে চাইলে হোসনা জানান, ফারুক রোববার ভোরে ওঠে কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন, তারপর আর বাড়ী ফেরেনি। ফারুককে খোঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে মঙ্গলবার রাতে ফারুক আহমদের চাচা সমছুল হক কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করতে আসেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদ তাৎক্ষণিক ফারুকের বাড়িতে থানার এসআই সুরঞ্জিত তালুকদারেেক পাঠান এবং পুরো বিষয়টি মনিটরিং করেন।
এসআই সুরঞ্জিত ঘটনাস্থলে পৌছালে ঘটনার মোড় নেয় অন্য দিকে। নিখোঁজ থেকে খোঁজ বেরিয়ে আসতে থাকে নিহত ফারুকের। বসত ঘরে ঢুকে এসআই সুরঞ্জিত দেখতে পান- খাঁটের উপর বিছানায় রক্তের দাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, ঘরের মেঝেতেও রক্তের দাগ ও পায়ের চিহ্ন রয়েছে। সন্দিহান হয়ে তিনি হোসনা বেগমের নিকট জানতে চান ঘরে রক্তের দাগ কেন। আর ফারুকই বা কোথায়? উত্তরে হোসনা বেগম একেক বার একেক ধরনের কথাবার্তা বললে সন্দেহের তীর হোসনা বেগমের দিকে পড়লে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন সুরঞ্জিত।
থানায় এসে যেনো তোপের মুখে পড়লেন হোসনা বেগম। তার ভেতরের সব কিছু যেনো উলোটপালট হয়ে গেছে। ওসি আব্দুল আহাদ হোসনা বেগম কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে এক পর্যায়ে অকপটে হত্যার দায় স্বীকার করে হোসনা। সে কিভাবে তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফা ও দুই সহযোগি মিলে ফারুককে হত্যা করেছে তার আদিঅন্ত বর্ণনা করে। হত্যার পর পার্শ্ববতী গোরকপুর গ্রামের প্রবাসী মাসুক আহমদের বাড়ির সেফটি ট্যাংকীর ভিতরে ফারুকের লাশ গুম করে রেখেছে। তার জবানবন্দীর সূত্র ধরে ওসি আব্দুল আহাদসহ একদল পুলিশ বুধবার ভোরে জবাইকৃত ফারুক আহমদের লাশ সেফটিক ট্যাংকির ভিতর থেকে উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করেন।
ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, ফারুক আহমদকে তার স্ত্রী হোসনা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক মোস্তফাসহ অপর সহযোগিরা মিলে জবাই করে হত্যা করেছে। নিহতের স্ত্রী হোসনা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মোস্তফাসহ তার সহযোগিদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান চলছে। স্ত্রীর পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় থানায় নিহতের চাচা সামছুল হক বাদী হয়ে হোসনা বেগম, মোস্তফাসহ আরো ২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech