কোম্পানীগঞ্জে মোবাইলে চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই দিনের সংঘর্ষে প্রায় দেড় শতাধিক আহত

প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪

কোম্পানীগঞ্জে মোবাইলে চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই দিনের সংঘর্ষে প্রায় দেড় শতাধিক আহত

মো. মঈন উদ্দিন মিলন, কোম্পানীগঞ্জ
সিলেটের সীমান্ত জনপদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মোবাইল চার্জে দিয়ে আধণ্টা পর আনতে গিয়ে ঝগড়া, হাতাহাতি, আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ ঘটনা ঘটে। অবশেষে তা ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ নিলে প্রথম দিনেই (শনিবার রাত) আহত হন অন্তত অর্ধশত। ওইদিন তিনঘণ্টাব্যাপী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল গোটা উপজেলা সদর। এরপর আঞ্চলিকতার জেরে সোমবার সকাল ১০টা থেকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় পক্ষগুলো। মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তা দুই ঘণ্টাব্যাপী চলমান ছিল। এতে আরো শতাধিক লোক আহত হন। সবমিলিয়ে দুইদিনে প্রায় দেড় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। এরমধ্যে চাজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ১৪ ডিসেম্বর (শনিবার) বিকেল ৫টায় বর্নী এলাকার বিএনপি সমর্থক বাবুল নামের ব্যক্তি উপজেলা সদরে দলীয় সভা শেষে কোম্পানীগঞ্জ থানা সদরে আসেন। ততক্ষণে তার মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে গেলে তিনি চার্জের জন্য বুড়িডহর গ্রামের পরিচিত একজনের মারফতে মহাসড়ক পয়েন্টে স্থানীয় কাঁঠালবাড়ী গ্রামের ইউসুফ আলীর ফার্মেসীতে চার্জের জন্য পাঠান। আধাঘণ্টা চার্জ হওয়ার পর তিনি মোবাইলটি আনতে যান। তখন তার কাছে মোবাইল দিতে অসম্মতি জানান ফার্মেসী মালিক ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, যার মাধ্যমে মোবাইল পাঠানো হইছে তাকে সাথে নিয়ে আসুন। আর না পারলে আমাকে সিগারেট খাওয়ান।
একপর্যায়ে উভয়ের মধ্য কথা-কাটাকাটি হলে বাবুরের উপর হাত তুলেন ইউসুফ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ গ্রামের মোবাইল মালিক বাবুলের পরিচিত কোম্পানীগঞ্জ গ্রামের এলাইছ মেম্বারের ভাই হাবিব। তিনি উভয়কেই নিভৃত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে তর্কাতর্কি থেকে বিষয়টি রূপ নেয় ত্রিমুখী সংঘর্ষে।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল চার্জে পূর্ব পরিচিত ব্যক্তি মারফত দেয়ায় কাঠালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ইউসূফ তাকে অন্তত ফোনে আলাপ করার কথা বললে তর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে আঞ্চলিকতার জেরে(আবাদী)সম্বোধন করায় মূলত ঘণ্টাখানিক পর ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ নেয় বিষয়টি। দফায় দফায় কাঁঠালবাড়ী, কোম্পানীগঞ্জ, বর্ণী গ্রামের কয়েকশত লোক জড়ো হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সড়ক অবরোধ, দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে কয়েকটি মোটরসাইকেল ও পুড়িয়ে দেয়া হয়। সংঘর্ষের খবর পাওয়ামাত্র কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঘণ্টাব্যাপী উভয়পক্ষের লোকজনকে নিভৃত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর দফতরে সহযোগিতার খবর পাঠানো হয়। অবশেষে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে রাত ১০টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এতে কয়েকলাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতিসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। উভয়পক্ষের আহতরা কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত তন্মধ্যে একজন গুরুতর বলে জানা গেছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছোট্ট একটি বিষয়ে নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত রয়েছে।
এদিকে, শনিবার রাতেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একপক্ষ অপর পক্ষকে হুশিয়ারি দিতে থাকেন। ফলে আঞ্চলিকতার জেরে ফের যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা করেছিলেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি/ সালিশি মুরব্বিদের ভূমিকা নিয়ে উভয়পক্ষকে সংযত রাখার অনুরোধও জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এতসবের পরও রবিবার ফের বর্নী গ্রামবাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয়ে লাটিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে উপজেলা সদরে কাঁঠালবাড়ী লোকজনের উপর হামলা করতে আসে। এসময় এলাকার মুরব্বি, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকলেই তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সকাল ১১ টার দিকে মহাসড়ক দিয়ে মেডিকেল ব্রিজে আসামাত্র উভয় গ্রুপ সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
দু-ঘণ্টাব্যাপী দুপক্ষের সংঘর্ষে ইট পাথরের শত শত ঢিল আর লাটি, ধারালো রামদার আঘাতে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর ও ৭৮ জন আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় দিনই যান চলাচল দীর্ঘক্ষণ ব্যাহত হয়ে যাত্রী সাধারণ দুর্ভোগ ও আতঙ্কে আটকা পড়েন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধান ডা. কামরুজ্জামান রাসেল জানান, ১ম দিনে ৫২ জনকে আহত অবস্থায় তার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার আরো ৭৮ জনকে মারামারির ঘটনায় ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে কাঁঠালবাড়ী গ্রুপের ১ জন ও বর্নী কোম্পানীগঞ্জ গ্রুপের ৩ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এম্বুলেন্স যোগে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছোট্ট একটি বিষয়ে নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরদিন (রবিবার) ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত বলে জানান ওসি। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক স্থানীয় সালিশান মাধ্যমে দ্রুত সামাজিক বিচারে সৃষ্ট ঘটনার নিষ্পত্তির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ হলরুমে প্রশাসনসহ সামাজিক বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় সালিশানগণ জামানত স্বরূপ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেন। ওই বৈঠকে নগদ ২ লক্ষ টাকা উভয় পক্ষ জমা প্রদান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনোরূপ উস্কানি বা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে মর্মে অঙ্গীকার করেন। পরবর্তীতে সর্বসম্মতিতে বিচার বৈঠকের ব্যাপারটি গৃহীত হয়।
উপস্থিত সালিশানরা হলেন, সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. লাল মিয়া, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাবুদ্দিন, জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, বিএনপি নেতা শওকত আলী বাবুল, চেয়ারম্যান জিয়াদ আলী, বাবুল চেয়ারম্যান, আলফু চেয়ারম্যান, গোয়াইনঘাটের সিরাজ চেয়ারম্যান ও ভোলাগঞ্জের বশির আহমেদ প্রমূখ।

সর্বশেষ ২৪ খবর