ঢাকা ১১ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০২৫
এমরান আহমদ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতির অপরূপ ভান্ডার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসেন। বড় বড় উৎসবের ছুটিতে এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সেই চিত্র আরও রঙিন হয়ে উঠেছে। সবার মুখে আনন্দের ছোঁয়া, প্রকৃতির মাঝে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার উভয়দিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কাঁঠালতলি বাজার থেকে মাধবকুণ্ড যাওয়ার পথ পর্যটকে সরগরম। ভ্রমণপিপাসুরা যাওয়ার পথে সারি সারি গাছের সাথে স্মৃতি করে রাখতে নিচ্ছেন সেলফি। চা বাগানের পাশ দিয়ে রাস্তা হওয়ায় পর্যটকরা সিলেটের ঐতিহ্য চা বাগানের দেখা পাচ্ছেন। পর্যটকরা বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে হৈ-হুল্লোড় করে ছুটছেন প্রকৃতির এক বিস্ময়ের দিকে। প্রবেশ ফটকের সামনে বিশাল লাইন, টিকিট কাউন্টারে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়।
মাধবকুন্ডের প্রধান ফটক থেকে বেশ কয়েক মিনিট পায়ে হেঁটে জলপ্রপাতের দিকে এগোতেই দেখা গেল, চারদিক মুখরিত পর্যটকদের কলরবে। কেউ প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় হারিয়ে গিয়ে ছবি তুলছেন, কেউবা শীতল পানিতে গা ভাসিয়ে নিচ্ছেন। সেলফি তোলার হিড়িক তো আছেই, সেই সঙ্গে স্থানীয় আলোকচিত্রীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটকদের স্মৃতি বন্দি করতে।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা জাহিদ হাসান বলেন, এই প্রথমবার মাধবকুণ্ডে এলাম। প্রকৃতি এত সুন্দর হবে, কল্পনাও করিনি! সত্যিই মনোমুগ্ধকর এক জায়গা। সিলেট-মৌলভীবাজারের পর্যটন স্পটগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের অবশ্যই দেখা উচিত। তবে এই এলাকাগুলোর সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি উন্নত পর্যটন ব্যবস্থাপনা করলে দেশ আরও বেশি রাজস্ব পেতে পারে।
বড় ছুটিতে বিপুল পর্যটকের আগমনে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখেও ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের প্রধান ফটকের ম্যানেজার সাজু আহমদ বলেন, সকাল থেকেই পর্যটকদের ভিড় শুরু হয়। দুপুরের পর এই ভিড় আরও বেড়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষ এখানে আসছেন। দীর্ঘ ছুটির কারণে ধারণা করছি, পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে। সাথে পুলিশ, সেনাবাহিনীর নানান পদক্ষেপে রাস্তায় পর্যটকেরা সুন্দরভাবে নিরাপদে আসতে পারছেন।
মাধবকুণ্ড পর্যটন পুলিশের দায়িত্বরত আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকায় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করে বাড়ি ফিরছেন।
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিন্দ্র কুমার সিংহ জানান, পর্যটকদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিত করতে বন বিভাগ, পর্যটন পুলিশ ও ইজারাদারের লোকজন সার্বক্ষণিক কাজ করছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার দিকেও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।
বড়লেখা উপজেলায় মানসম্মত আবাসিক হোটেলের অভাবের কারণে দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই কাছাকাছি শহর মৌলভীবাজার বা সিলেটে রাতযাপন করছেন। পর্যটকদের সুবিধার্থে আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা উন্নত করার দাবি জানিয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
মাধবকুণ্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং পর্যটন সুবিধা আরও উন্নত করতে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা চালু হলে একদিকে যেমন পর্যটকরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন, অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশও সংরক্ষিত থাকবে।
সুতরাং, প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটাতে চাইলে মাধবকুণ্ড হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য। ঈদের ছুটির এই আনন্দময় সময়ে প্রকৃতি কন্যা যেন হয়ে উঠেছে পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech