ঢাকা ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২০
বিজয়ের কণ্ঠ ডেস্ক : সরকার ঘোষণা করেছে আগামী ২৩ জুলাই থেকে সরকারের দেয়া ১৬টি হাসপাতাল থেকে করোনা টেস্ট করাতে হবে। এর বাইরের কোন হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরি থেকে টেস্ট করানো যাবে না। দেশী বিদেশী সব এয়ারলাইন্স এই লিস্ট ও আদেশ মানতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক।
সরকারের দেয়া এই আদেশে বিপাকে পড়েছেন বিদেশী এয়ারলাইন্স ও তাদের যাত্রীরা। তারা বলেছেন, নমুনা পরীক্ষার জন্য যেভাবে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে বুথে লাইন ধরতে হবে সেটা ভয়াবহ ও আত্মঘাতী। এতে করোনা আরো বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অনেক যাত্রী সংশ্লিস্ট ট্রাভেল এজেন্ট ও এয়ারলাইন্সগুলোকে ফোন করে বলে দিয়েছেন, যদি সরকারের এই তালিকা বলবৎ থাকলে তাহলে যাতে তাদের টিকিট বাতিল করা হয়।
তাদের বক্তব্য- আগের তালিকায় দেশের নামকরা হাসপাতাল গুলো যেমন এভার কেয়ার, স্কয়ার, ইউনাইটেড,ইবনেসিনা, ল্যাব এইড, আনোয়ার খানসহ সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম ছিল। যেখানে গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায়, নিরাপদে নমুনা দিয়ে আসা সম্ভব ছিল। এখন যে তালিকা দেয়া হয়েছে এবং যেভাবে জেলা সিভিল সার্জন বুথে গিয়ে নমুনা দেয়ার কথা বলা হয়েছে তাতে এনিয়ে যুদ্ধ শুরু হবে।
লাইনে দাড়াতে হবে। ধাক্কা-ধাক্কি হবে। ঘুম থেকে উঠে লাইনে দাড়াবে লোকজন। বিশাল লাইন পড়ে যাবে। লাইন বিক্রি হবে। যারা বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ও পরিবার পরিজন নিয়ে নমুনা দিতে যাবেন তাদের পক্ষে এভাবে লাইনে দাড়ানো সম্ভব হবে না। এতে করোনা আরো ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
রোববার সকাল থেকে একাধিক ট্রাভেল এজেন্ট অফিস থেকে এভিয়েশন নিউজকে টেলিফোনে তাদের এসব ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। আজ এব্যাপারে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে কথা বলার কথা রয়েছে।
এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের এই লিস্ট মানতে গেলে তাদের যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে যাবে। বিশেষ করে বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা এখন ভ্রমন করতে আগ্রহ দেখাবেন না। অনেকে এই ঘোষনায় তাদের ভ্রমন বাতিল করার জন্য বলেছেন।
এমিরেটস অফিস থেকে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে ২৯টি হাসপাতালের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে এই তালিকা ফলো করার জন্য বলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। যদি সরকার এই তালিকা না মানেন তাহলে তো বিমানবন্দরে গিয়ে যাত্রীদের বিদেশ গমন অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তাতে তারা লোকসানে পড়বেন। সব দোষও তাদের ঘাড়ে পড়বে।
কাতার এয়ার ওয়েজের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের দেয়া ১৬ হাসপাতালের এই তালিকা এবং জেলা সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে নমুনা দেয়ার সিস্টেম ফলো করলে এখানে দুর্নীতি ঢুকে যাবে। এটা হবে আত্মঘাতী। কোন মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে এই অবস্থায় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে করোনার ঝুঁকিতে পড়তে চাইবেন না।
আগের মতো বড় বড় নামকরা হাসপাতাল গুলো থাকলে তারা নিরাপদে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসতে পারতেন। এভাবে ঝুকি থাকতো না। কাতার এয়াররাইন্স আরো বলেছেন, তাদের তো করোনা সনদের প্রয়োজনই নেই। তারপরও যদি সরকার করোনা সনদ নিতে বাধ্য করে সে অবস্থায় দেশের নামী-দামী হাসপাতালগুলোকে এই দায়িত্ব দেয়া হলে তাদের যাত্রীরা নিরাপদে নমুনা দিয়ে আসতে পারতেন।
একই কথা বলেছেন, টাকিশ এয়ারলাইন্স, এয়ার এরাবিয়া, শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স, মালিন্দো এয়ারসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্স। খোদ বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মকর্তা সরকারের এই তালিকা দেখে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত করোনা ঝুকি আরো ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাবে। দুনীতি আরো চরম আকার ধারন করবে। এনিয়ে পরিবেশ নস্ট হবে। এটা সামাল দেয়া সম্ভব হবে না। লাইন ধরা নিয়ে মারামারি শুরু হবে। ফ্লাইটের সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে এনিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটে যাবে। যারা এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে তারা বুঝতেও পারেনি এটা কতটা ভয়াবহ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত এভিয়েশন সেক্টরকে আরো ঝুকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। এতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীরা বিদেশে যেতে পারবেন না। উল্টো এই নমুনা দেয়াকে কেন্দ্র করে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। যারা পরবতীতে বিদেশে গিয়ে করনো পজেটিভ হতে পারেন। অনেকে বাংলাদেশ থেকে নেগেটিভ সনদ নিয়ে বিদেশে গিয়ে পজেটিভ হতে পারেন। এতে দেশ আবারো ঝুকিতে পড়তে পারে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech