সিন্ডিকেটে সাবাড় হচ্ছে ফসলি জমির মাটি ও নদী চরের বালু

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৫

সিন্ডিকেটে সাবাড় হচ্ছে ফসলি জমির মাটি ও নদী চরের বালু

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি
নবীগঞ্জে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত ও নদীর চর থেকে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে। অবৈধ মোনাফার জন্য এসব কাজে সহযোগিতা করচ্ছেন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের মতো জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক নেতারা। উপজেলা প্রশাসন কয়েকটি অভিযান করলেও মূলহোতা রয়েছেন জেল জরিমানার বাহিরে।
নবীগঞ্জ উপজেলায় পরিবেশ আইন অমান্য করে অর্ধশতাধিক স্পটে থেকে মাটি কেটে মাটি বিক্রি করছে সিন্ডিকেট চক্র। কৃষিজমি’র উপরি ভাগের মাটি কেটে বিক্রি করছে বাউসা ইউনিয়নের ভরগাও গ্রামের আনোয়ার খাঁ, সেলিম মিয়া, সিরুল তালুকদার, মনির মিয়া, ছানু মিয়া, কুর্শি ইউনিয়নের রাইয়াপুর গ্রামে তোফায়েল মিয়ার ফিসারি থেকে আতিক মিয়া মাটি উত্তোলন করছেন।
আউশকান্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এর ব্রিক ফিল্ড ভাড়াটিয়া সবুজ মিয়া, প্রবাসী দুলাল আহমদ এর মাস্টার ব্রিক ফিল্ড, কুর্শি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খালেদুর রহমান খালেদ এর গোল্ড ব্রিকফিল্ড, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের পাশে ফিরিজপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিনসহ আর বেশ কয়েকেজন অবাধে কৃষি জমির মাটি কেটে শ্রেণী পরিবর্তনসহ ফসলি জমির ক্ষতি সাধন করছেন।
কুশিয়ার, বিবিয়ানা, বিজনা নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করছেন দুর্গাপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য ফখরুল আলম, বর্তমান ইউপি সদস্য জুয়েল আহমদ, রুয়েল আহমদ, আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাসহ বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। জমি হতে কেটে নেয়া মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জায়গা। সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ।
জানা যায়, পরিবেশ সংরণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২ এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদন্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়-নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের ভরপুর গ্রামের আনোয়ার খাঁ,মনির মিয়া,সেলিম মিয়া এই মাটি কাটা সিন্ডিকেট তৈরি করে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার উৎসবে মেতে উঠেছেন। শুধু তাই নয় বিজনা নদীর চর থেকে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন সেলিম মিয়া বিজনা ব্রিকফিল্ডে।
তাছাড়া সবুজ মিয়াসহ বেশ কয়েক জনের একটি সিন্ডিকেট তাদের এক্সেভেটার দিয়ে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রির ব্যবসার সাথে জড়িত । এতে ইট ভাটার মালিকগন তাদের ইট ভাটার আশ-পাশের ফসলি জমি থেকে মাটি তুলে মজুদ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। দুর্গাপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে কুশিয়ার নদী থেকে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। শুধু নুরুল ইসলাম নয় কুশিয়ারা নদীর চর থেকে অজ্ঞাত আরো ৮,১০ জন অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন- কৃষি জমির টপ সয়েল মাটি কেটে নেওয়া ফলে ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
প্রতিবেদক সরেজমিনে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলনকারী আনোয়ার খাঁ জানান, আমি ইউঅনও, এসিল্যান্ড অফিস ম্যানেজ কইরা মাটি কেটে বিক্রি করতেছি। মাটিকাটা লাগি আমার কারো পারমিশন লাগে না। আমি আমার জায়গা থেকে মাটি খাটমু কারো বাপেরও ক্ষমতা নেই আমাকে আটকানোর।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ এর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর