সিলেট চেম্বার নেতৃবৃন্দের সাথে বিবিসিসিআই এর নেতৃবৃন্দের মতবিনিময়

প্রকাশিত: ৬:৫১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৫

সিলেট চেম্বার নেতৃবৃন্দের সাথে বিবিসিসিআই এর নেতৃবৃন্দের মতবিনিময়

দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র নেতৃবৃন্দের সাথে বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (বিবিসিসিআই) নেতৃবৃন্দের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (০৫ জানুয়ারি) বেলা ১টায় সিলেট চেম্বার কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌসের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ও ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) এর প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স ডিরেক্টর মঈন উদ্দিন বলেন, প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দিতে পারলেই কেবল প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ঠ হবে। আমরা যদি জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারি এবং আমাদের তরুণ লোকবলকে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি তবে আমাদের শিক্ষার্থীরা গ্রেজুয়েশন শেষ করে বেকার থাকতে হবেনা। তিনি সিলেটের তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও সিলেটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সিলেট এয়ারপোর্টকে দ্রুততম সময়ে বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জোর দাবি জানান। তিনি সিলেট চেম্বারের পরিচালনা পরিষদকে উক্ত মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্যকালে সিলেট চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ও সিলেট চেম্বার দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে আমরা বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের দেশে আকৃষ্টকরণ, সিলেটে স্পেশাল ইকোনমিক জোন গঠন সহ বিভিন্ন ইস্যুতে যৌথভাবে কাজ করেছি, আগামী দিনগুলোতেও তা অব্যাহত থাকবে।
সিলেট একটি প্রবাসী অধ্যুষিত ও ব্যবসা বান্ধব অঞ্চল, এখানে শিক্ষা, চিকিৎসা, পর্যটন, আইসিটি প্রভৃতিখাতে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী কিন্তু বিনিয়োগ করার মত যথাযথ পরিবেশ ও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। এরফলে বড় ধরনের বিনিয়োগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেট। সিলেটে এনআরবি ইকোনমিক জোন করা হলে প্রবাসী বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনই তৈরি হবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কর্মসংস্থান। দেশের শিক্ষিত চাকুরী প্রত্যাশীদের একটা বড় অংশ বেকারত্বের হাত থেকেও মুক্তি পাবে।
তিনি সকলকে অবহিত করে বলেন, সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে সরাসরি ফ্লাইটের গুরুত্ব প্রবাসী সিলেটিদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সিলেট টু ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধের শঙ্খা রয়েছে। এই রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা হ্রাস এবং টিকেট বিক্রির সীমাবদ্ধতা সিলেটি প্রবাসীদের জন্য চরম হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট টু ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বন্ধ না করে চালু রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব রইলো। সেই সাথে বিমানের টিকেটের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য দাবি জানাচ্ছি। উক্ত ন্যায্য দাবি সরকারের কাছে জোরালো ভাবে তুলে ধরার জন্য ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বারসহ প্রবাসীদের প্রতি আহবান করছি।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্য বক্তাগণ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ-বৃটেনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সিলেট চেম্বার ও বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার দীর্ঘদিন যাবৎ একত্রে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের দেশের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে উভয় চেম্বার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রবাসীরা রয়েছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন অবধি প্রবাসীরা দেশকে গড়তে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখছে। দেশের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে দুহাত প্রসার করে তারা এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা প্রয়োজন।
বক্তরা আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন হয়েছে। এখন সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত করতে এসএমই ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা। বক্তব্যে দেশে একটি কার্যকর ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর দাবি উঠে আসে।
বক্তারা আরও বলেন, সিলেটে প্রচুর অনাবাদি জমি পড়ে আছে। সিলেটের এসব জমিতে উন্নত ব্রিডের মাছ চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। এছাড়াও চায়নার মতো করে সিলেটে টয় ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলা যেতে পারে এবং সিলেটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে সফটওয়ার, গেইমিং, কোডিং, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় অ্যাপস তৈরী ও আউটসোসিং হাব সিলেট হাইটেক পার্কে করা যেতে পারে। সিলেটে মেডিকেল ইকোইপমেন্ট, ইনভারমেন্ট ফ্রেন্ডলি ব্রিকস ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বক্তারা তুলে ধরেন।
এছাড়াও বক্তাগণ বলেন, চেম্বারের কাজ হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা তৈরী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী করা। দেশে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরীতে সরকারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এক্সপোর্ট ডিউটি, ট্যারিফ ও পলিসি সহজিকরনে দেশের চেম্বারগুলো গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও আমাদের রপ্তানি খাতে শুধুমাত্র গার্মেন্ট সেক্টর ও প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভর না হয়ে রপ্তানি বহুমুখিকরণ করতে হবে।
সভায় বক্তাগণ দেশে বিনিয়েগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইন-কানুন শিথিল রাখার পরামর্শ দেন।
সভার শুরুতে “বিনিয়োগ ও দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা সংক্রান্ত” বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহী মো. ফয়সল। এবং মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রাক্তন সভাপতি বশির আহমদ, প্রাক্তন সভাপতি ড. ওয়ালি তছরউদ্দিন, এমবিই, প্রাক্তন সভাপতি মাতাব মিয়া, শাবিপ্রবির ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ই্িঞ্জনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার এম, ইকবাল, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান টিটু, দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকার অতিথি সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, হাইটেক পার্ক অথোরিটি সিলেটের উপ সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন, সিলেট চেম্বারের পরিচালক ফাহিম আহমদ চৌধুরী, ফখর উস সালেহীন নাহিয়ান, মো. মাহদী সালেহীন, ইউকেবিএটি এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সায়েম, ইউটিএস সোলার এর পরিচালক জিয়া ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ, পরিচালক কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. সারোয়ার হোসেন ছেদু , সায়েম আহমদ, আরিফ হোসেন, মো. মাহবুবুল হাফিজ চৌধুরী মুসফিক, মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আব্দুল মুমিন, জাহাঙ্গির হক, আতাইর খান, সিলেট চেম্বারের সদস্য মাসনুন আকিব বড়ভূইয়া, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী সেলিম, ফুয়াদ মো. খায়রুল ইসলাম, এখন টিভির সিনিয়র রিপোর্টার গোলজার আহমদ, চ্যানেল এস ইউকে এর প্রতিনিধি মঈন উদ্দিন মঞ্জু, সিলেট চেম্বারের সচিব মো. গোলাম আক্তার ফারুক ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীবৃন্দ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর