ঢাকা ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
সার্জান খাঁন
আর মাত্র একটি ভাঙন হলেই চেঙ্গেরখাল নদীর গর্ভে হারিয়ে যাবে কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঈছাকলস ইউনিয়নের কলাপাড়া যোগীর গাঁও গ্রামের চেঙের খাল নদীর তীরে অবস্থিত। চেঙ্গের খাল নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে বিদ্যালয়টির পাকা ভবনের একটি দেয়াল। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। হয়তো দু-একদিনের মধ্যেই পুরো ভবন রাক্ষুসে চেঙ্গের খালের পেটে চলে যেতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা। তাই চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায় রয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জানা গেছে, স্কুলটি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৪ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ও ১০২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে হাওর এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখেছে চলেছে বিদ্যালয়টি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মিত হয়। এর দীর্ঘদিন আগে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনশেডের ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল।
একই সাথে হুমকির মুখে পুরো যোগীরগাঁও গ্রামের শতাধিক ঘর বাড়ি ও ফসলি জমি। নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বিলিন হয়ে যেতে পারে পুরো গ্রাম। এছাড়া মসজিদ মাদ্রাসাসহ রাস্তাঘাটও একসময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভাঙনের হাত থেকে জনবসতিসহ সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অন্যথায় অবর্ণনীয় ক্ষতির মুখে পড়বে এই এলাকার বাসিন্দারা।
বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, বিদ্যালয় আসতে আমাদের খুবই ভয় করে। আর একটু ভেঙে গেলেই বিদ্যালয় আর থাকবে না। আমরা মজবুত বেড়িবাঁধসহ বিদ্যালয়ে পাকা ভবন চাই। যাতে আমরা নিরাপদে পড়াশোনা করতে পারি এবং এই এলাকার মানুষ নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে। তারা প্রশ্ন রাখেন- স্কুল নদীতে ডুবে গেলে আমরা পড়ব কোথায়?
প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, চেঙ্গের খালের অব্যাহত ভাঙনে বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুবই চিন্তিত আছি। কলাপাড়া স্কুলের সাথে অত্র উপজেলার ২৩টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য অধিদপ্তর থেকে তালিকা এসেছে এর মধ্যে কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯/২০ সালে ভবন নির্মাণের জন্য মাটি পরিক্ষা করা হয় অদ্যবধি ভবন নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এই তালিকায় থাকা কয়েকটি স্কুলের কাজ হচ্ছে কিন্তু কলাপাড়া স্কুলের কাজ হয়নি।
এদিকে, যোগীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ‘আমাদের গ্রামের শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অব্যাহত ভাঙনের ফলে যেকোনো সময় আমরা বাস্তুহারা হতে পারি। এমতাবস্থায় আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিনযাপন করছি।’
তারা বলেন, ‘নিজেরা খেয়ে না খেয়ে বাচ্চাদের মানুষ করতে চাইছি। কিন্তু তারা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। স্কুলের একপাশের দেওয়াল ইতোপূর্বে নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকিটুকুও যেকোনো সময় চলে যাবে। এ অবস্থায় বাচ্চারা স্কুলে যেতে ভীতস্বন্ত্রস্ত, তেমনি আমরা অভিভাবকরাও। এমতাবস্থায় আমাদের জান-মাল ও বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে চেঙ্গের খাল নদীর ওই এলাকা সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech