ঢাকা ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৩২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
লুৎফুর রহমান শাওন, ছাতক
সুনামগঞ্জের শিল্পসমৃদ্ধ প্রাচীন শহর ছাতক। পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য ও যাত্রীসেবা নিয়ে ১৯৮৫ সালে শুরু হয় এই উপজেলার ট্রেন যাত্রা। ছাতক থেকে প্রতিদিন চারটি ট্রেন সিলেটে বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করতো। ছাতকসহ সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর যাতায়াতের এক মাত্র প্রধান মাধ্যম ছিল এ ট্রেন পথ। এরপরে ছাতক সিলেট রেলরোট দীর্ঘদিন জোড়াতালি দিয়ে চললেও ২০২০ সালের ২৩ মার্চ করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশের সাথে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে দেশের অন্যান্য স্থানে ট্রেন চালু হলেও এই রুটটি আর চালু হয়নি। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ৩৫ কিলোমিটার রেলপথের ১৩ কিলোমিটার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আংশিক ক্ষতিহয় ২০ কিলোমিটার অংশ। রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করতে এডিবির অর্থায়নে সিলেট ছাতক বাজার রেলপথ পূর্ণবাসন প্রকল্পের আওতায় সংস্কার টেন্ডার হয়। তবে এখনো শুরু হয়নি কাজ।
রেল পথটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় পাথর, স্লীপারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে রেলের সরকারি সম্পদ। ছাতকবাজার স্টেশন হয়ে উঠেছে মাদকের আখড়া। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর আগেই সরকার পরিবর্তনের পর খালি হয়ে গেছে প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালকের পদ। এতে কাজ শুরু হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
এদিকে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত সুনামগঞ্জের ছাতক রেলওয়ে বিভাগের রেলপথ, রজ্জুপথ ও কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট আজ ধ্বংসের পথে। এ কারণে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। অনিয়ম-দুর্নীতি আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কারণে বিভাগটি ধ্বংস হচ্ছে।
ছাতকবাজার রেলওয়ে বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ইং সালে নির্মিত হয় ছাতক-ভোলাগঞ্জ ১৯ কিলোমিটার রোপওয়ে (রজ্জুপথ)। ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের নিজস্ব খনি থেকে রেললাইনে ব্যবহৃত পাথরের চাহিদা মেটাতে ১২০টি ট্রেসেল (এক ধরণের খুঁটি)’র উপর ভর করে পাথর পরিবহনের জন্য এ রজ্জুপথটি স্থাপিত হয়। রজ্জুপথে পাথর পরিবহনের জন্য ৪২৫টি বাকেট (পাথর ধারণের পাত্র) ছিল। এ বাকেটে চড়ে রজ্জুপথে ছাতক-ভোলাগঞ্জ যাতায়াত করতেন সংশ্লিষ্টরা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেসময় রজ্জুপথে পাথর পরিবহন সহজ উপায় ছিল এ রজ্জুপথ। সুরমা নদীর কূল ঘেঁষে ১২০টি ট্রেসেলের উপর এটি স্থাপনের পর কিছুদিন চালু থাকলেও ১৯৭১সালে স্বাধিনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ রজ্জুপথ পূনবার্সন করে পূনরায় চালু হয়েছিল ১৯৮০ সালে। দীর্ঘ বছর চালু থাকে এ রজ্জুপথ। মাঝে মধ্যে যান্ত্রিক ক্রটিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ হলেও পরবর্তীতে চালু করা হতো। কিন্তু ২০১৩ সালে এসে থেমে যায় রজ্জুপথ। এর পর থেকে আজও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, ১৯৮৮ সালে ছাতকবাজার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ৬ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত হয় প্রি-স্ট্রেসড (এমজি) কংক্রিট স্লিপার প্লান্টি যান্ত্রিক ত্রুটি, কাঁচামাল সঙ্কটসহ বিভিন্ন অযুহাতে বন্ধ রয়েছে।
সিলেট রেলওয়ে উপ-বিভাগের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশল, সৈয়দ মো. আজমাঈন মাহতাব জানান, ‘৫ আগস্টের পর আমাদের মন্ত্রী মহোদয় পরিবর্তন হয়েছেন। অনেক গঠনতান্ত্রিক পরিবর্তন এসেছে। এরপরে আর এটার কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি।’
সিলেট রেলওয়ে বিভাগের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পূর্ত) রেজাউল হক জানান, ‘সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সিলেট-ছাতক রেল লাইনের সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। পূর্বের টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে আবারও টেন্ডার দেওয়া হতে পারে। সংস্কার কাজ না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চালু হচ্ছে না।’
তবে বন্ধ হওয়া রজ্জুপথ, রেলপথ ও কংক্রীট স্লীপার প্লান্টি দ্রুত চালু হলে ঐতিহ্যের ঠিকানা ফিরে আসবে, এমনটা প্রত্যাশা ছাতকবাসীর।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech