ওলামা লীগ নেতা মামুন চৌধুরীর ভয়ে বাড়িছাড়া শামসুল হক

প্রকাশিত: ৫:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪

ওলামা লীগ নেতা মামুন চৌধুরীর ভয়ে বাড়িছাড়া শামসুল হক

সংবাদ সম্মেলনে পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ ও হয়রানীর অভিযোগ
সরকার ও প্রশাসনের কাছে চেয়েছেন নিরাপত্তা ভিক্ষা

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি
ওলামা লীগ নেতা মামুনুর রশীদ চৌধুরীকে পরধন লোভী ও লম্পট আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাৎ ও মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ করেছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে শামসুল হক চৌধুরী।
সোমবার জকিগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর নিজের স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে তিনি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ওই সময় তিনি ওলামা লীগ নেতা মামুনুর রশীদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উত্থাপন করে আইনী সহায়তা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আকুতি জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু এর পর পরই পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে উল্টো তার বিরুদ্ধে মিথ্যে ও বানোয়াট গল্প সাজিয়ে মানহানী করেছেন মামুন।
প্রকৃত সত্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওলামা লীগ নেতা মামুনুর রশীদ চৌধুরী একজন পরধন লোভী, দুষ্কৃতিকারী, দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির লোক। তার কাজই হচ্ছে মানুষকে মিথ্যে মামলা দিয়ে চাঁদা আদায় করা। উপজেলার এমন অনেকেই তার দ্বারা মিথ্যে মামলার শিকার হয়েছে। কাউকে জেল খাটানো উনার মূল উদ্দেশ্য নয়। শুধুমাত্র তদন্তের জন্য পুলিশ বাড়ি পর্যন্ত গেলেই হলো। এরপর তিনি বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তা দফারফা করে নেন। এমন মামলা বাণিজ্য করে তিনি বেশ অর্থ সম্পদের মালিকও হয়েছেন বলে সাংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
শামসুল হক বলেন, পিতার জীবদ্দশায় কাগজ সংশোধনের নামে তিনি পিতাকে চাপে ফেলে প্রায় ১৬ বিঘা জমি ও জকিগঞ্জ বাজারের একটি দোকানভিটা বিক্রি করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার কারণে পিতা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে একপর্যায়ে মৃত্যুবরণও করেন। এছাড়া, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে শামসুল হককে বঞ্চিত করে শুধুমাত্র বসতঘর আর পুকুর দিয়ে বাকি সব সম্পত্তি তিনি একাই ভোগ করছেন। এই কাজে তার সহযোগী হিসেবে অপর ভাই মাসুদ আহমদও ছিল।
মামুনুর রশীদ চৌধুরীর অপকর্ম তুলে ধুরে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন থেকে আমার পরিবার নিয়ে বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। আমার মামলাবাজ ও ফ্যাসিবাদের দোসর বড়ভাই মামুনুর রশীদ চৌধুরীর রোষানলে পড়ে অন্তসত্ত্বা স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হচ্ছে। কারণ বাড়িতে আমার জায়গা জমি জবরদখল করে তিনি ক্ষান্ত হননি, উপরন্তু আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছেন। আমার স্কুল/কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা রীতিমতো তাদের পড়ালেখায় মনযোগী হতে পারছে না, তিনি বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। বর্তমানে আমি আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পাস করেই কর্মজীবন শুরু করার চেষ্টায় ছিলেন শামসুল হক। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসর মামুনুর রশীদ চৌধুরীর অত্যাচারে আত্মসম্মান বাঁচাতে তিনি প্রবাসে পাড়ি জমান। একই অবস্থার শিকার হয়ে অপর দুই ভাই শহিদুল ইসলাম ও মরহুম হাফিজ আব্দুল ওয়াহিদ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। এমনকি আরেক ভাই হাবিবুর রহমান কবিরের উপরও অত্যাচার চলতে থাকায় সেও লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হয়। দীর্ঘদিন শহিদুল ইসলাম ভারতে কর্ম করে দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের কাছে জমি বাবত পাওনা ৪০ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করে। উপযুক্ত বয়সেও মামুন বিয়ে না করায় পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও বিশেষ করে আল্লামা মুকাদ্দাস আলী মুহাদ্দিস ছাহেবের অনুরোধে বিয়ে করেন শামসুল। বিয়ের সপ্তাহ খানেক যেতে না যেতেই বসতঘর ও পুকুর ছাড়া জায়গায় জমিসহ ফিশারী সব বন্ধক রেখে অর্থ লুট করে সিলেট শহরে গিয়ে বিলাসী জীবন যাপন শুরু করেন মামুন। অসহায় মাতা-পিতার কারনে মরহুম হাফিজ আব্দুল ওয়াহিদ ও হাবিবুর রহমান ভূমিদস্যু মামুনুর রশীদ ও মাসুদ আহমদের অধীনে এসে রোজগার করে মামুনুর রশীদের হাতে টাকা তুলে দিতে বাধ্য হয়। গত ২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বর পিতার মৃত্যুর পর পিতার ঋণের পরিমাণ মাত্র ৭০ হাজার টাকা বলে পরিবারের সকলের সামনে উল্লেখ করেন মা। ওই ঋণের টাকা পরিশোধে ফসলের জমি বন্ধক ও মাছ বিক্রি করেন মামুন ও মাসুদ। ঋণ পরিশোধের পরও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আরো ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ফুফাতো ভাই আজিজুর রহমানের মধ্যস্থতায় একটি বাটোয়ারা করা হয়। কিন্তু মামুন ও মাসুদ সেই ভাগ বন্টন মেনে নেননি। এমনকি তাদের সুবিধামতো ভাগ বন্টন করতে চাইলেও তারা মানেনি। মামুনুর রশীদ চৌধুরী তার ভিটা, বোনদের ভিটা ও ইজমালী নামে পড়া উপস্বত্ত একাই ভোগ করছেন। শামসুল হকের ভিটায় শামসুলের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা বারান্দা ও টংগি ঘর গায়ের জোরে এখনো পর্যন্ত দখল করে বসবাস করছেন মামুন। এছাড়া মামুন ও মাসুদের মালিকানায় সাখরপুর মসজিদ সংলগ্ন লেংড়ার দোকানের পাশে প্রায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। যা তারা একই ভোগ করছেন।
শামসুল বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ির গাছ বিক্রি, সুপারি বিক্রি, ফিশারীর মাছ বিক্রি, জমি বন্ধক ইত্যাদি বাবদ ১৯ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মামুন। পাশাপাশি ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলায় বেকায়দায় ফেলে আরো ৩ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন। বর্তমানে একটি মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দিতে আবারও ১ লাখ টাকা দাবি করেছেন। অন্যথায় শামসুল পরিবারকে বাড়িতে ঢুকতে দিবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন।
দুষ্কৃতিকারী মামুন বিশ্ববিখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা মুকাদ্দাস আলী মুহাদ্দিস ছাহেব এর সাথে বেয়াদবি করেছেন মর্মে উল্লেখ করে শামসুল হক বলেন, মামাতো ভাইদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০৯ সালে পৈতৃকি সম্পত্তি ভাগ বন্টন করে দিতে আসেন বিশ্ববিখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা মুকাদ্দাস আলী মুহাদ্দিস। এসময় তার কাছে কাগজ সংশোধনের ব্যয় বাবদ ৬ লাখ টাকা ঋণের বিষয়ে জানান মামুন। কিন্তু সেই কথায় আপত্তি জানান মা। তিনি বলেন, মৃত্যুকালীন সময়ে মাত্র ৭০ হাজার টাকা ঋণ ছিলেন। ওই টাকাতো সেসময়ই পরিশোধ করার কথা মামুন ও মাসুদ। যদি ঋণ পরিশোধ না করে, তাহলে দেড় কিয়ার জমি বিক্রি করে হলেও জায়গা-জমি ভাগ ভাটোয়ারা করে দাও। ওই কথা রাখতে গেলে রাগান্বিত হয়ে মুহাদ্দিস ছাহেবকে লক্ষ্য করে মোবাইল ছুঁড়ে মারেন মামুন। এ সময় তিনি জনসম্মুখে একজন বিশ্ববিখ্যাত আলেমকে অপমান করেন।
তিনি বলেন, অর্থ লোভী মামুন বিবাহের উপযুক্ত বোনকে বিয়ে না দিয়ে ভাইদের কাছ থেকে টাকা হাতানোর ধান্দা করতে থাকেন। বার বার প্রস্তাব আসার পরও তিনি ফিরিয়ে দিতে থাকেন। অথচ, এজমালি হোটেল বিক্রির ৪ লাখ বিশ হাজার টাকা তিনি একাই আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে তাকে ছাড়াই বোনটিকে বিয়ে দিতে হয়েছে।
মামুনকে চরিত্রহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মামুনুর রশীদ চৌধুরী ছোট বেলা থেকে লম্পট ও পরোধান লোভী প্রকৃতির লোক। একপর্যায় পরক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে একটি সংসার ত্যাগ করে বরিশালের দুই সন্তানের জননীকে অবৈধভাবে বাড়িতে তুলে নিয়ে আসেন। এতে পরিবারের সৃষ্টি হয় আরো মনোমালিন্য, মামুনুর রশিদের একের পর এক এহেন কর্মকাণ্ডে নষ্ট হয় পরিবারের ঐতিহ্য। গত কয়েকদিন আগে আরো এক ভাইয়ের বউকে অন্যায় ভাবে নির্যাতন করেলে দুটি সন্তান নিয়ে তিনি পিত্রালয়ে চলে যান।
নিজের পরিচয় উল্লেখ করে শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি সাবেক উপজেলা ছাত্র জমিয়তের সহ সভাপতি, সাবেক উপজেলা যুব জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে পৌর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। মামুন সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবিদ। সময়ের প্রেক্ষাপটে খোলস পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করাই তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য। তিনি মূলত ওলামা লীগ নেতা। এখন জমিয়ত নেতা সাটার চেষ্টা করছেন।
পরিশেষে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দের কাছে জোড় হাতে ভিক্ষা চেয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাতে সহয়তায় এগিয়ে আসুন। এ ব্যাপারে আমার মেয়ে মাহমুদা চৌধুরী সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয় বরাবরে একটি লিখত অভিযোগ দায়ের পর থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন মামুনুর রশীদ চৌধুরী। সঠিক সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে রক্ষা করে পৈত্রিক সম্পত্তিতে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দানে দেশবাসী ও প্রশাসনের কাছে প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর