ঢাকা ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০১৮
রহিমা আক্তার মৌ
লেখার জগতে গল্প দিয়ে আমার কলম চলা শুরু, পত্রিকার পাতায় শুরু কবিতা দিয়ে। কবিতাকে ভালোবাসলেও অধিক ভালোবাসা ছড়ার উপর। সেই ছোটবেলা থেকে বছরের প্রথম নতুন বই হাতে এলেই ছড়াগুলো পড়তাম সবার আগে। আসলে পড়তে ভালো লাগতো, ছন্দে ছন্দে মিলিয়ে ছড়া পড়ার আনন্দই আলাদা। মাত্র দুটি ছড়া লিখেছি আমি। কেউ ছড়ার কথা বললেই সহজ সরল জবাব- “ছড়া ভীষণ কড়া”।
‘ছড়া দিলাম ছড়িয়ে কবিতা এলো গড়িয়ে’ মোসলেহ উদ্দিন বাবুল এর একটি ছড়ার বই, বইটির নামকরণ করেছেন হোসনে আরা হেনা, প্রচ্ছদ করেছেন আরিফুর রহমান। কবি আহিদ উদ্দীন ও নুরুল আবছার আলভী এই দুজন প্রিয় ব্যক্তিদের বইটি উৎসর্গ করে লিখেছেন-
“আমার স্বপ্নের সীমানা প্রসারিত করে দেয়ার দু’জন মানুষ তাদের জন্যে ভালোবাসা চিরদিন”।
ছড়াকার/ক্যালিগ্রাফি আর্টিষ্ট আরিফুর রহমান মোসলেহ উদ্দিন বাবুল সম্পর্কে বলেন-
“আমার তিন যুগের এন্টিক বন্ধু বাবুল সত্তরের দশকের মাঝামাঝি স্কুল জীবনেই ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসর, আজাদের মুকুলের মহফিল, সংবাদের খেলাঘর’সহ তখনকার সব সাপ্তাহিক শিশু-কিশোর পাতায় এবং নবারুণ, ধান শালিকের দেশ, শাপলা শালুকসহ মাসিক ও সাময়িকীগুলোতে প্রচুর লিখেছেন ছড়া, কবিতা প্রবন্ধ এবং গল্প।”
‘ছড়া দিলাম ছড়িয়ে কবিতা এলো গড়িয়ে’ বইটিতে ৮৪ টি ছড়ার সাথে রয়েছে একটি ‘ছড়ানাট্য’ “ভালোবাসা”। প্রথমেই নজর কাড়ে ‘ছড়ানাট্য’টি। গেরস্থ বাড়ীর বউ আর বাড়ীর দহলিজে বসা অদ্ভূত পোশাক পরা তিন বুড়োকে নিয়ে রচিত এই ‘ছড়ানাট্য’। সত্যি বলতে ছড়া লেখা কড়া হলেও বহু ছড়া পড়েছি। এখনো মেয়েদের স্কুলে নতুন পাঠ্যবই আসলেই ছড়া কবিতা পড়ি। কিন্তু এমন ‘ছড়ানাট্য’ কখনই পড়া হয়নি আমার।
‘ছড়ানাট্য’ এর শেষ দিকে আসে গেরস্থ কন্যা, শেষ অংশে লেখা-
ভালোবাসা করতে পারে
বিশ্বটাকে জয়
‘বিশ্বাস’ এবং ‘ভালোবাসা’
‘সম্পদ’ কি নয়!
জ্যোতির্ময় তিন বৃদ্ধের আলৌকিক আলো আঙ্গিনা ভরিয়ে দিলো। গেরস্থ, গেরস্থ বউ আর গেরস্থ কন্যার ঠোটে ফুটে উঠলো পরিতৃপ্তির হাসি।
মুখবন্ধের জায়গায় স্থান পাওয়া ‘রাবণ’ ছড়ায় পেলাম রাজনীতি, নির্বাচন আর ক্ষমতার কিছু কথা।
জীবন বোধের এক ছড়া ‘একটুখানি দুর্বোধ্য’ প্রথমে লিখেছেন-
‘জীবন যখন থমকে দাঁড়ায় সময় কোন ব্যাপার না,
একলা চলার দুঃখ বোঝায় এমন নিউজ পেপার না!’
শেষ দুটি লাইনে এসে পুরোই মজা পাই,
‘মনের মাঝে বন্দি পাখি ছটফটিয়ে ওঠে,
চলতে পথে এমন মানুষ কক্ষনো কি জোটে!’
আসলেই চলতে পথে এমন মানুষ পাওয়া ভাগ্যের, আবার ছলাকলার এই সমাজে তেমিন মানুষ পেয়েও হারাতে হয়।
বোকা মন্টির বোকামো উঠে আসে ‘মন্টির সার্ট’ ছড়ায়।
‘মন্টির সার্ট নাকি নিয়ে গেছে চোরে
তাইতো সে বাড়িময় বন বন ঘোরে।
…………..
চোর খুঁজে ধুলো মাখা সব পায়ে পায়ে,
আসলে সার্ট যে আছে মন্টিরই গায়ে।’
অসাধারণ ছড়াটি পড়তে পড়তে ‘কান নিয়েছে চিলে’ গল্পটির কথা মনে পড়ে যায়। ‘আমরা এখন’ ছড়ায় উঠে এসেছে বাস্তবতার অনেক কিছু।
‘কুকুর এখন লেজ নাড়ে না,
লেজে নাড়ায় কুকুর,
সাগর-চুরি নিত্য ব্যাপার,
তুচ্ছ এখন পুকুর!’ আমার স্কুলের সানু মাস্টার (পুরো নাম মনে নেই) বলতেন–
‘মানুষ মদ খাওয়া ভালো, মদে যেন মানুষ না খায়’।
বাস্তবে এখন কোন মানুষই মদ খায়না, মদেই খায় মানুষকে। তাইতো মোসলেহ উদ্দিন বাবুল লিখেছেন –
‘ঘরটা এখন আগুন পোড়া,
আমরা সেথায় থাকি!
মালিকানার শরীকিরা সব
এখন শীতের পাখি।’
‘সতর্ক সংকেত’ নাম দেখি ভয় পেয়েছি।
‘রাজার চেয়ে শান্ত্রি বড়,তার’চে বড় তেলবাজে,
উঁকুন মাথার অত্যাচারে সব নেড়ারাই বেল সাজে!—-
মুক্তিযুদ্ধ রয়ে যাবে ইতিহাসের কিচ্ছাতে,
ভারত ভাগও হয়েছিল জনতারই ইচ্ছাতে।’
‘এতিমদের এই প্রাপ্য টাকা জমিয়ে রেখে ব্যাংকে,
শেষ রক্ষা হইলো না তো, গেলেন জেলের র্যাংকে,
প্লেট হাতে দাঁড়ান এবার, মোটা চালের ভাতের,
লাবড়া দিয়ে মেখে খেতে দরকার ডান হাতের!’
‘হিসাব এবার শুরু’ এই ছড়াটি পড়তে গিয়ে মনে পড়ে আমার বাবার লেখা ‘সব সমান’ কবিতাটি।
‘ছড়া দিলাম ছড়িয়ে কবিতা এলো গড়িয়ে’ বইটিতে অসাধারণ ছড়া পড়লাম। মনে হলো চারপাশের অতি বাস্তব পরিস্থিতিকে তিনি ছড়ায় রুপ দিয়েছেন। কখনও মজা করে কখনও খুব সিরিয়াস ভাষায়। তবে এটা ঠিক অনেকদিন পর ছড়া পড়ে মজাই পেলাম। ছোট মেয়ে আমার মুখে ছড়া শুনতে পছন্দ করে, ওকেও কয়েকটা শুনালাম। বইয়ের নামের সাথে ছড়াগুলোর সার্থকতা পুরোই পেলাম। ধন্যবাদ যিনি নামকরণ করেছেন বইটির।
ছড়া দিলাম ছড়িয়ে কবিতা এলো গড়িয়ে
মোসলেহ উদ্দিন বাবুল
নামকরণ : হোসনে আরা হেনা
প্রচ্ছদ : আরিফুর রহমান
প্রকাশক : সুচারু প্রকাশন -এর পক্ষে এস এম জান্নাতুল ইসলাম
প্রথম প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২০১৮
মূল্য : ১৪০ (একশ চল্লিশ) টাকা
লেখক : কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech