ঢাকা ৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার এম মন্তাজিম আলী কলেজের ছাত্র প্রান্ত দাস(১৮) আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লুঙ্গি দিয়ে মুখ ও গলা বেঁধে পরিত্যক্ত রান্নাঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল খুনি।
ঘটনার প্রায় ১২ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত প্রন্তের পিসাতো ভাই সুমন দাসকে(৪০) গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, রোববার রাতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে পুলিশের কাছে। প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়টি উঠে আসায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে থানায় নিয়ে যায়। এদের মধ্য থেকে পিসাতো ভাই সুমন দাস (৪০) পুলিশের জিজ্ঞসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
সোমবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে প্রান্তের পরিবারের প থেকে হত্যা মামলা করা হয়। হত্যার সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় পুলিশ প্রান্তের পিসাতো ভাই সুমনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সুমনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর রাতে সুমন দাস বাজার থেকে বাড়ি আসেন। এসময় তাঁর স্ত্রীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় মামাতো ভাই প্রান্তকে দেখতে পান। এরপরই প্রান্তকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন সুমন। হাত, পা ও মুখ বেঁধে পরিত্যাক্ত রান্না ঘরের খাটের নিচে রেখে রাত তিনটায় প্রান্তকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লুঙ্গি দিয়ে মুখ ও গলা বেঁধে পরিত্যক্ত রান্নাঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রাখে। এছাড়া ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে প্রান্তের মুঠোফোন থেকে কয়েকটি মেসেজ প্রান্তের সহপাঠিসহ কয়েকজনের কাছে পাঠানো হয়। পরে প্রান্তের প্যান্টের পকেটে মুঠোফোন রেখে দেওয়া হয়। পরদিন ওই পরিত্যক্ত ঘরের পাশে বাড়ির বাচ্চারা ফুল তুলতে গিয়ে প্রান্তের লাশ দেখে বাড়ির লোকজনকে জানায়। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রান্তের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে জন্য মৌলভীবাজার হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, শুরু থেকেই প্রান্তের মৃত্যুটি রহস্যজনক মনে হয়েছিল। সবাই অপোয় ছিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের। ময়নাতদন্তে সময় আমরা ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি। তখনই হত্যাকাণ্ড সর্ম্পকে কিছু ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। যার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়। প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়টি উঠে আসায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে থেকে নিহতের পিসাতো ভাই সুমন একাই হত্যা করেছে এবং সে সবাইকে মেসেজ পাঠিয়েছে বলে পুলিকে জানিয়েছে। তবে হত্যা করা এবং মেসেজ পাঠানোসহ অনেকগুলো কার্যক্রম ঘটেছে। যা সুমনের একার পে করা সম্ভব কিনা সন্দেহজনক। অবশ্য এর সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কি-না আমরা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ অক্টোবর সকালে বর্ণি ইউনিয়নের নয়াগ্রামের পিসির বাড়ির পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে প্রান্ত দাসের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রান্ত বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের সনত দাসের ছেলে। ঘটনার পর প্রান্তের পরিবারের প থেকে থানায় একটি অপমৃত্যু দায়ের করা হলেও প্রান্তকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমনটা দাবি করে আসছিল তাঁর পরিবার। এছাড়া ঘটনার পরদিন থেকে প্রান্তের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রান্তের সহপাঠীরা পাঁচদিন কাস বর্জন করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, হুইপের এমন আশ্বাসে শিার্থীরা কাসে ফিরে যায়।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech